গচ্ছা গেল সরকারের দেড় কোটি টাকা!

গচ্ছা গেল সরকারের দেড় কোটি টাকা!

পাঁচ বছর আগে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মিশেলে সিলেট নগরের প্রাণকেন্দ্র বন্দরবাজারে দেড় কোটিরও বেশী টাকা ব্যয়ে স্থাপন করা হয়েছিল ফুট ওভারব্রিজ। স্টিলের কাঠামো দিয়ে ব্রিজের বিভিন্ন প্রান্তে ওঠা নামার জন্য রয়েছে ছয়টি সিঁড়ি। উদ্দেশ্য ছিল পথচারীরা ব্যবহার করবেন সানন্দে-স্বাচ্ছন্দে। কমে আসবে দুর্ঘটনা। বাড়বে এ এলাকার সৌন্দর্য। কিন্তু উদ্দেশ্যে একেবারেই সফল হয়নি। নগরবাসী ব্রিজটির ব্যবহারে প্রথম থেকেই অনেকটা ‘অনিহা’ প্রকাশ করে আসছেন। বর্তমানে ব্রিজটি রূপ নিয়েছে ভাসমান মানুষ আর মাদক সেবীদের আস্তানায়। ফলে গচ্ছা গেল সরকারের দেড় কোটিরও বেশী টাকা।

২০১৫ সালে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের সাংসদ আবুল মাল আবদুল মুহিতের একান্ত ইচ্ছায় ১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয়ে নগরের বন্দরবাজার কোর্ট পয়েন্টে স্থাপন হয় এই ওভারব্রিজ। তখন পক্ষে-বিপক্ষে মতামত ছিলো। অর্থমন্ত্রীর প্রকল্প হিসেবে সেটি স্থাপনে কেউ প্রকাশ্যে বিরোধিতা করেনি। এখন ব্রিজটি কতটা কাজে আসছে এ নিয়ে সচেতন মহলের মধ্যে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ব্রিজটির ওপর জমে আছে ময়লার স্তুপ। অনেক ছিন্নমূল মানুষ এ জায়গাটিকে প্রশ্রাব-পায়খানার স্থান হিসেবেও ব্যবহার করছেন।  এতে কওে এলাকায় ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। নষ্ট করছে পরিবেশ।

এই এলাকার ব্যবসায়ী ইমরান আহমদ জীবন জানান, ‘এই ব্রিজ পরিস্কার করতে কাউকে দেখা যায় না। রক্ষণাবেক্ষণ না থাকায় অনেকেই সিড়িতে আবর্জনা ফেলে যায়। সন্ধ্যা হলে মাদকসেবীরা ব্রিজে উঠে মাদক সেবন করে। অনেক সময় ময়লা আবর্জনা পথচারীদের মাথার উপর ছুড়ে ফেলে তারা।’

সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) একটি সুত্র জানিয়েছে, ব্রিজে সফল না আসায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতিতে এটি বিক্রির প্রক্রিয়া শুরু করেছে সিসিক। দরপত্রও আহবান করা হয়। দরপত্রে তিনটি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়ে সর্বোচ্চ দাম তুলে মাত্র ২২ লাখ টাকা। মধ্যখানে ব্রিজটি নগরের মদিনা মার্কেট এলাকায় স্থানান্তরের পরিকল্পনাও করা হয়েছিলো। পরে সেটি বাতিল করে আরেকবার দরপত্র আহবান করা হয়। প্রত্যাশিত দাম না পাওয়ায় তা আর বিক্রি হয়নি। আর বর্তমানে এ বিজ্র নিয়ে সিসিকের সিন্ধান্তের কোন পক্রিয়াও নেই।

ওভারব্রিজটি অপরিকল্পিতভাবে তৈরী করা হয়েছে বলে মনে করেন সিলেট কল্যাণ সংস্থার সভাপতি মোহাম্মদ এহছানুল হক তাহের। তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশন এটিকে হয়তো অপসারণ করুক নতুবা  রক্ষণাবেক্ষন করুক। কিন্তু তারা তো এর কোনটাই করছেন না। মানুষজন যখন এই এলাকা দিয়ে রাতে চলাফেরা করে অনেক সময় মাদকসেবীরা উপর থেকে ময়লা ফেলে দেয়। বিব্রত অবস্থায় পড়তে হয় পথচারীদের। তাই এ ব্রিজের ব্যাপারে এখনি সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া আবশ্যক হয়ে পড়েছে সংশ্লিষ্টদের।’

এ ব্যপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, ‘এই ব্রিজটি বিক্রির জন্য আমরা দুই দফা দরপত্র আহবান করেছিলাম। তবে ২২ লাখ টাকার  বেশি কোন প্রতিষ্ঠানই দিতে রাজি না; তাই বিক্রি হয়নি। আপাতত স্থানান্তরেরও কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে রক্ষণাবেক্ষনেন বিষয়টি আমরা দেখছি।’