দলীয় ব্যানারে এক বছরেও শোকসভা হয়নি কামরানের

দলীয় ব্যানারে এক বছরেও শোকসভা হয়নি কামরানের
বদর উদ্দিন আহমদ কামরান

সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের মৃত্যুর এক বছর পূর্ণ হচ্ছে আগামী ১৫ জুন। অথচ দীর্ষ এক বছরেও তাঁর সম্মানে 'দলীয় ব্যানারে' আনুষ্ঠানিকভাবে শোক সভা করার 'সময় পায়নি' সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ। দলীয় অন্যান কর্মসূচি সশরীরে করলেও ১৭ বছর সিলেট শহর ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করা প্রয়াত এই নেতা 'দলীয় শোকসভা' পালনে করোনাকে বাঁধা হিসেবে দেখাচ্ছেন দায়িত্বশীলরা।

প্রাণঘাতি করোনায় আক্রান্ত হয়ে গেল বছরের ১৫ জুন দিবাগত রাত ৩ টায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মারা যান 'জনতার কামরান' খ্যাত এই নেতা।

সিলেটের রাজনীতিরই মহীরুহ ছিলেন কামরান। এক কথায় বলতে গেলে তিনি সিলেটে আওয়ামী লীগের রাজনীতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। শুধু দল নয় দলের বাইরে সাধারণ মানুষও তাকে ভালোবাসতে। এ কারণে ১/১১’র সময় জেলে থেকেও মেয়র নির্বাচিত হন। সিলেটের মানুষ তাকে 'জনতার কামরান' হিসেবেই চিনতেন। অথচ এই নেতাকে দল যেন ভুলতে বসেছে প্রায়!

সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের পদধারী একজন নেতা নাম প্রকাশে অনিহা জানিয়ে বলছেন, কামরানের মৃত্যুতে এক বছর পার হয়ে গেল। অথচ আমরা এখনও দলীয় শোকসভা করতে পারলাম না। যেখানে সিলেট- ৩ আসনের প্রয়াত সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ কয়েসের মৃত্যুর এক মাসের মধ্যে সিলেট জেলা পরিষদে জেলা আওয়ামীলীগের উদ্যোগে শোকসভা হলো। বিষয়টা আমাদের জন্য হতাশার।

এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন জাগো সিলেটকে বলেন, 'আমরা করোনা পরিস্থিতি কারনে দলীয় শোকসভা করতে পারিনি। তবে শীগ্রই কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে আমরা শোকসভা করবো।'

আর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দীন খান জাগো সিলেটকে বলেন, 'বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের মৃত্যুর এক বছর পূর্ণ হচ্ছে। জেলা এখন কোন কর্মসূচি নেইনি। তবে মহানগর নিলে আমরা অবশ্যই অংশ করবো।'

কামরানপুত্র সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ডাঃ আরমান আহমদ শিপলু বলেন, 'বাবা নেই, তবে তিনি আমাদের অস্তিত্ব জুড়ে রয়েছেন। সিলেট আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ বেশ কয়েকবার শোকসভা করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তবে করোনা সংক্রমন বাড়ার কারণে তা আর সম্ভব হয়নি। আশাকরছি কোভিড পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে 'বড় আকারে শোকসভা' করা হবে । এছাড়া বাবার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে মহানগরের প্রতিটি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের উদ্যোগে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল করার জন্য আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন দায়িত্বশীলরা। পরিবারের পক্ষ থেকেও মৃত্যু পর থেকেই মিলাদ ও দোয়া মাহফিল করা হচ্ছে।'

এক নজরে কামরানের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন 

বদর উদ্দিন আহমেদ কামরান ১৯৫১ সালের ১ জানুয়ারি সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। সিলেট পাইলট স্কুলে ছাত্ররাজনীতির হাতেখড়ি কামরানের। ছাত্রাবস্থায় ১৯৬৯- এর গণঅভ্যুত্থানের সময় আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথ কাঁপিয়েছেন। এরপর ৭৩-এ সিলেট পৌরসভা নির্বাচনে কমিশনার পদে বিপুল ভোটে জয়ী হন কামরান। তখন তিনি মাত্র উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র। সিসিকে আজ পর্যন্ত এত অল্প বয়সে জনপ্রতিনিধি হতে পারে নি। 

সিলেট সিটি করপোরেশন গঠনের পর পৌরসভার চেয়ারম্যান থেকে ভারপ্রাপ্ত মেয়র, এরপর নির্বাচিত মেয়র হন।

১৯৮৯ সালে শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সিলেটের আওয়ামী রাজনীতির শীর্ষ নেতৃত্বে আসেন কামরান। ১৯৯২ সালে এবং ১৯৯৭ সালে পুনরায় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। 

মহানগর গঠিত হলে ২০০২ সালে প্রথমবারের মত সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। ২০০৫ এ সম্মেলনের মাধ্যমে এবং ২০১১ সালে গঠিত কমিটিতে মহানগর আওয়ামী লীগের পুনরায় সভাপতির দায়িত্ব পান।

টানা তিন মেয়াদে দেড় যুগ মহানগর সভাপতির দায়িত্ব পালন করে তবে গত বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলনে সভাপতির পদ ছেড়ে দেন কামরান। প্রায় তিন দশক কামরানবিহীন পথচলা শুরু হয় সিলেট আওয়ামী লীগের। ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য পদ পাওয়া কামরান বর্তমান কমিটিতেও একই পদে ছিলেন।

এদিকে রাজনীতিবিদ কামরান জনপ্রতিনিধি হিসেবেও ছিলেন তুমুল জনপ্রিয়। ১৯৭৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র থাকাবস্থায় সিলেট পৌরসভার সর্বকনিষ্ঠ কমিশনার হয়ে চমক দেখান জনতার কামরান। সেই থেকে সিলেট পৌরসভার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে পড়েন তিনি।

আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। টানা ১৫ বছর ছিলেন পৌরসভার কমিশনার। মাঝপথে খানিকটা বিরতি ছিল প্রবাসে যাওয়ায়। সেবার নির্বাচন থেকে বিরত ছিলেন। প্রবাস থেকে ফিরেই ১৯৯৫ সালে পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

২০০২ সালে সিলেট সিটি করপোরেশনে উন্নীত হয়। তিনি ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পান। ২০০৩ সালে প্রথম সিটি নির্বাচনে তিনি বিএনপি সর্মথিত প্রার্থীকে হারিয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র নির্বাচিত হয়ে ইতিহাসে নাম লেখান তিনি।

১/১১’র সময়ে দুইবার কারাবরণ করেন কামরান। ২০০৮ সালে কারাগার থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হন তিনি। সর্বশেষ দুটি সিটি নিবার্চনে ক্ষমতাসীন দলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে পরাজিত হন কামরান।