দিরাই-শাল্লায় আগাম নির্বাচনী হাওয়া, ফের নৌকা চান জয়া সেন

দিরাই-শাল্লায় আগাম নির্বাচনী হাওয়া, ফের নৌকা চান জয়া সেন

২০২৩ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বছর। তবে এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রচার প্রচারণা শুরু না হলেও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সুনামগঞ্জ-২ ( দিরাই- শাল্লা) আসনে বইছে আগাম নির্বাচনী হাওয়া। পাড়া-মহল্লাতে তৈরি হয়েছে জাতীয় নির্বাচনী আমেজ। ভোটারদের মন জয় করতে নানা রকম প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন আ.লীগের সম্ভব্য প্রার্থীরা। তবে নানা কারনে মাঠে নেই অন্যতম প্রতিদ্বন্দী বিএনপি।

সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনটি মূলত আ.লীগের ঘাটি হিসেবে পরিচিত। এ আসনে আ.লীগ থেকে সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত তিন বারসহ মোট আট বার এমপি নির্বাচিত হোন। ২০১৭ সালে সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত মারা যাওয়ায় শূন্য আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হন সুরঞ্জিতের স্ত্রী ড. জয়া। ২০১৮ সালের সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এ আসনে তিনি নৌকা প্রতীক পেয়ে এমপি হন। অপরদিকে সাবেক বিচারপতি ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মিফতা উদ্দিন চৌধুরী রুমী ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে বিএনপির এমপি ছিলেন।

আগামি নির্বাচনেও সুনামগঞ্জ-২ আসনটি ধরে রাখতে আ.লীগ বদ্ধপরিকর হলেও বিএনপির সম্ভব্য প্রার্থীরা তাকিয়ে আছেন কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের দিকে। নির্বাচন নাকি সরকার বিরোধী আন্দোলন? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে নিজেদের মধ্যে।

এদিকে সাংগঠনিকভাবে আওয়ামীলীগ অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে থাকায় দলীয় মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছেন অনেকেই। সরকারের ধারাবাহিক উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরতে ভোটারদের দ্বারস্থ হচ্ছেন তারা। অপরদিকে বিএনপির প্রার্থীদের অপেক্ষা করা ছাড়া নির্বাচনী কর্মকান্ড নেই তেমন। তবে সম্ভব্য নির্বাচন ধরে নিয়ে কেন্দ্রীয় নানা কর্মসূচির মাধ্যমে কৌশলে ভোটের প্রচারণা চালিয়ে চাচ্ছে বিএনপির সম্ভব্য প্রার্থীরা।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। শেষ পর্যন্ত কে পাচ্ছেন নৌকার টিকেট এ নিয়ে সম্ভব্য প্রার্থীরা রয়েছেন উদ্বেগে। তবে জোর গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন সবাই।

মাঠ পর্যায়ের নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনে আবারও নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন সংসদ সদস্য ড. জয়া সেন গুপ্তা। তিনি ছাড়াও এ আসনে আ.লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন শাল্লা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক উপকমিটির সাবেক সদস্য ব্যারিস্টার ডাল্টন তালুকদার, যুক্তরাজ্য শ্রমিকলীগ নেতা ডক্টর সামছুল হক চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাড: অবনী মোহন দাশ, বিমান বাহিনীর অরসরপ্রাপ্ত স্কোয়াড্রন লিডার, স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) প্রাক্তন ডেপুটি ডিরেক্টর তানভীর তুলী, সাবেক সচিব মিজানুর রহমান মিজান, হাইকোর্টের আইনজীবী এডভোকেট সুবীর নন্দী দাস।

অপরদিকে বিএনপি থেকে মনোয়নের প্রত্যাশী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন বিএনপির জাতীয় কমিটির সদস্য সাবেক এমপি নাছির উদ্দীন চৌধুরী ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী জেলা বিএনপির উপদেষ্টা এডভোকেট তাহির রায়হান চৌধুরী পাবেল। তবে বিএনপির নাছির উদ্দীন চৌধুরী শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় রাজনীতির মাঠে বিচরণ কম। সে তুলনায মাঠে সক্রিয় রয়েছেন অ্যাডভোকেট তাহির রায়হান চৌধুরী পাবেল। তাছাড়া যুক্তরাজ্য বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজমল হোসেন চৌধুরী জাবেদের নামও সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকায় রয়েছেন।

এ আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সাংসদের অন্যতম প্রতিদ্বন্দী ভাবা হচ্ছে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদকে। তার অনুসারীরা বলছেন, হাইকমান্ড থেকে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে গ্রীন সিগন্যাল পেয়েছেন তিনি। যে কারণে প্রতিদিনই বিভিন্নপাড়া-মহল্লায় গনসংযোগের পাশাপাশি দলীয় সাংগঠনিক ও উন্নয়ন কর্মকান্ডে অংশ নিচ্ছেন।

বিএনপির দুই সম্ভব্য প্রার্থী প্রবাসে থাকায় ও সাবেক এমপি নাছির উদ্দীন চৌধুরীর অসুস্থজনিত কারনে আগামি সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিএনপির কোনো বক্তব্য জানা যায়নি।

এদিকে চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন দিরাই-শাল্লা আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ড. জয়া সেনগুপ্তাকে মাইনাস করে রাজনীতি করার উদ্দেশ্য তার নেই। এ আসনে যিনিই দলীয় মনোনয়ন পাবেন নৌকার বিজয় ধরে রাখতে তিনি তার পক্ষেই নির্বাচনী মাঠে কাজ করবেন।

সংসদ সদস্য ড. জয়া সেন গুপ্ত জানান, আমৃত্যু দিরাই-শাল্লাবাসীর পাশে থেকে প্রয়াত নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের আদর্শকে লালন করে আওয়ামীলীগ সরকারের উন্নয়নের দ্বারা অব্যাহত রাখতে চাই। তিনি আরও জানান, আমি একজন রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য। এই পরিবারের সুনাম যারা বিনষ্ট করতে চান তাদেরকে আওয়ামীলীগ পরিবারের সদস্যরা কখনও সমর্থন করবেন না।