নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বানভাসি মানুষ, ফের বন্যা সিলেট

নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বানভাসি মানুষ, ফের বন্যা সিলেট

মধ্যরাতে বাসা ছেড়ে পরিবার নিয়ে একটি আবাসিক হোটেলে উঠেছেন নগরীর তালতলা এলাকার বাসিন্দা রজতকান্তি গুপ্ত। কারণ রাত ২টার সময় হঠাৎ তাঁর বাসার ভেতরে হাঁটুপানি। তাঁর মতো নগরীর অনেকেই বাসা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। এক মাসেরও কম সময়ের ব্যবধানে সিলেটে আবারও বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আবারও পানি উঠে পড়েছে নগরীর অনেক এলাকায়।

সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সাধারণ সম্পাদক রজতকান্তি গুপ্ত বলেন, ‘এক মাসের ব্যবধানে আমার বাসায় আবারও বন্যার পানি ঢুকেছে। নিরাপদে থাকার জন্য রাত ২টায় পরিবার নিয়ে বাসা ছাড়তে হয়েছে। কী আর করার আছে! সবাই নিরাপদ থাকুন এখন এটাই প্রার্থনা। তবে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ভুক্তভোগী মানুষের পাশে দাঁড়ানো এখন সবার দায়িত্ব।’

গতকাল বুধবার দুপুর থেকেই সিলেট নগরীর উপশহর, তালতলা, কালীঘাট, মাছিমপুর, ছড়ারপাড়, তেররতন, ঘাসিটুলাসহ অন্তত ১০টি এলাকায় পানি প্রবেশ করে। প্রথমে সড়কে, পরে এসব এলাকার অনেক বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ে। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব এলাকার পানিও বাড়তে থাকে। বিশেষ করে নগরীর অপেক্ষাকৃত নিচু ও সুরমা নদীতীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন। তাই গভীর রাতে এসব এলাকার অনেক মানুষ বাসাবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে গেছেন।

এদিকে সিলেটে গত কয়েক দিন ধরেই টানা বৃষ্টি হচ্ছে। সিলেট আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস বলছে, আগামী ২১ জুন পর্যন্ত এই হারেই সিলেটে বৃষ্টিপাত চলমান থাকবে। ১৭ ও ১৮ জুন বৃষ্টিপাতের পরিমাণ এর চেয়ে আরও বাড়বে। এ ছাড়া অব্যাহত আছে উজান থেকে নেমে আসা ঢলও। ফলে বেড়েই চলেছে নদ-নদীর পানি। এতে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

নগরের শাহজালাল উপশহর ডি ব্লকের বাসিন্দা উবায়দুল্লাহ বিন এফ রহমান বলেন, ‘বুধবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টার মধ্যে প্রায় তিন ফুট পানি হয়ে যায়। তারপর পানি বাড়ার গতি কমে যায়। কাল দুপুর থেকে এখন পর্যন্ত আরও এক ফুটের মতো পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বাভাবিক জীবনযাপন করা মুশকিল হচ্ছে। বাচ্চাদের স্কুল বন্ধ। হাঁটুর উপরে পানি, অফিসে যাওয়ার কষ্ট। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো খাবার ও ব্যবহারের পানির সংকট। পাশাপাশি বাসা-বাড়ির আসবাবপত্র নষ্ট হওয়া তো আছেই।’

উপশহর এলাকার আরেক বাসিন্দা নীলা রহমান বলেন, ‘উপশহরের বেশির ভাগ সড়ক তলিয়ে গেছ। বুধবার রাতে বাসায় পানি প্রবেশ করে। পানি বৃদ্ধি এখনো অব্যাহত রয়েছে। গত মাসেই বন্যায় আমার বাসায় পানি প্রবেশ করে। প্রায় এক সপ্তাহ বাসায় পানি ছিল। এ সময় বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সরবরাহও বন্ধ ছিল। তখন অনেক দুর্ভোগে পড়ি। এখন মনে হচ্ছে আবার একই দুর্ভোগে পড়ব।’

এদিকে নদী উপচে পানি ঢুকে পড়েছে নগরের বৃহৎ পাইকারি বাজার কালীঘাট এলাকার অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। কালীঘাট এলাকার ব্যবসায়ী সাজু আহমেদ বলেন, ‘গত মাসের বন্যায় যে ক্ষতি হয়েছে, সেটাই এখনো কাটিয়ে উঠতে পারিনি। এখন আবার বন্যার পানি দোকানে প্রবেশ করেছে। এভাবে বারবার বন্যা হলে ব্যবসা করা সম্ভব না।’

এ বিষয়ে সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ বলেন, সুরমা নদীর কানাইঘাট ও সিলেট সদর পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্ট দিয়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। এই নদীর পানি শেওলা ও শেরপুর পয়েন্টেও বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। তবে এখনো এই দুই পয়েন্টের পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি। সারি নদীর পানিও বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। পাশাপাশি লোভা ও ধলাই নদীর পানিও বাড়ছে। চলমান বৃষ্টি ও উজানের ঢল অব্যাহত থাকায় পানি বেড়েই চলেছে।