পাকিস্তানকে হারিয়ে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম জয়

পাকিস্তানকে হারিয়ে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম জয়

মেয়েদের বিশ্বকাপে প্রথমবার খেলতে গেছে বাংলাদেশ। উদ্বোধনী আসরে প্রথম জয়ও তুলে নিলো পাকিস্তানকে হারিয়ে। রোমাঞ্চকর ম্যাচে বাংলাদেশের মেয়েরা জিতেছে ৯ রানে। 

বিশ্বকাপের আগেই নিগার সুলতানা বলেছিলেন যে, প্রথম আসরটি স্মরণীয় করে রাখতে চান তারা। স্মরণীয় করতে দুই ম্যাচ হারের পর এই ম্যাচকেই বেছে নিয়েছিলেন যেন। ওয়ানডেতে নিজেদের সর্বোচ্চ সংগ্রহ তো তুলেছেই। প্রতিপক্ষকে শেষ দিকে বিধ্বস্ত করে পেয়েছে অবিশ্বাস্য এক জয়। 

সোমবার হ্যামিল্টনে আগে ব্যাটিং করে ৭ উইকেটে ২৩৪ রান করে নিগার সুলতানার দল। নির্ধারিত ৫০ ওভারে সেই লক্ষ্য ছুঁতে পারেনি পাকিস্তান। তারা ৯ উইকেটে করতে পারে ২২৫ রান। আর তাতে বিশ্বকাপ ময়দানে নিশ্চিত হয়েছে মেয়েদের ঐতিহাসিক এক জয়। 

অবশ্য জয়ের পথটা মোটেও মসৃণ ছিল না। ১ উইকেট হারিয়ে ১৫৫ রান তুলে জয়ের সুবাস পাচ্ছিল পাকিস্তান। সেখান থেকে ফাহিমা খাতুন ও রুমানা আহমেদের ঘুর্ণিজাদুতে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় বাংলাদেশ। ৩৩ রানে পাকিস্তান ছয় উইকেট হারালে তাদের স্কোর দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ১৮৮! একপ্রান্ত আগলে রেখে সিদ্রা আমিন লড়াই করলেও দলকে জেতাতে পারেননি। ১০৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে পাকিস্তানের এই ব্যাটার রান আউটে ফিরলেই নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের অবিশ্বাস্য এক জয়। 

অথচ ২৩৫ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে পাকিস্তানের দুই ওপেনার শুরুটা দারুণ করেছিল। নাহিদা খান ৪৩ রানে আউট হলে ভাঙে ওপেনিং জুটি। এরপর বিসমাহ মারুফকে সঙ্গে নিয়ে সিদ্রা আমিন ৬৪ রানের জুটি গড়েছিলেন। বিসমাহ আউট হতেই ধস নামে পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপে। অবশ্য এই ধসের মূল কৃতিত্ব লেগ স্পিনার ফাহিমা খাতুনের। তিনটি উইকেট নিয়েছেন।  ৪৪তম ওভারে তো হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও জাগিয়েছিলেন। তার ঘূর্ণিজাদুর পর আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি পাকিস্তান। ৯ উইকেট হারিয়ে করতে পেরেছে ২২৫ রান।

বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে ফাহিমা খাতুন ৩৮ রানে সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন। এছাড়া রুমানা নেন দুটি উইকেট। একটি করে উইকেট নিয়েছেন জাহানারা আলম ও সালমা খাতুন।

পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বশেষ তিন ম্যাচেই জয় ছিল বাংলাদেশের। সেই আত্মবিশ্বাসের দেখা মিলেছে ব্যাটিংয়ে। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৭ উইকেটে ২৩৪ রান তুললেও এটি ছিল ওয়ানডেতে মেয়েদের রেকর্ড সংগ্রহ। দুই ওপেনার শারমিন সুলতানা ও শারমিন আক্তার মিলে ৩৭ রানের ওপেনিং জুটি গড়েছিলেন। শারমিন সুলতানা ১৭ রানে ফিরলেও সাবলীলভাবে খেলেছেন শারমিন আক্তার ও ফারজানা হক। দুজন মিলে যোগ করেন ৪২ রান। শারমিন আক্তার ৬ রানের জন্য হাফসেঞ্চুরি বঞ্চিত হলে ভেঙে যায় গুরুত্বপূর্ণ এই জুটি। শারমিন ৫৫ বলে ৬ চারে ৪৪ রান করে ফিরেছেন। 

তবে সবচেয়ে বড় জুটিটা আসে অধিনায়ক নিগার সুলতানা ও ফারজানা হকের ব্যাটে। মূলত তৃতীয় উইকেটে এই দুই ব্যাটারের ৯৬ রানের জুটিই রেকর্ড সংগ্রহের ভিত গড়ে দিয়েছে। নিগার ৬৪ বলে ৪৬ রান করে আউট হলে টানা দ্বিতীয় হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন ফারজানা। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৫২ রানের ইনিংস খেলা এই ব্যাটার আজ খেলেছেন ৭১ রানের ইনিংস। ১১৫ বলে ৫ চারে ফারজানা নিজের ইনিংসটি সাজিয়েছেন। এরপর রুমানার ১৬, রিতু মনি ১১ ও সালমার ১১ রান স্কোরবোর্ড সমৃদ্ধ করতে অবদান রেখেছে। 

পাকিস্তানের নাসরা সান্ধু বাংলাদেশের তিনটি উইকেট নিয়েছেন। পাশাপাশি নিদা দার, ওমাইমা সোহেল ও ফাতিমা সানা একটি করে উইকেট তুলে নেন।

এই হারে পাকিস্তানের সেমিফাইনাল স্বপ্নের ইতি ঘটলো এখানেই। কেননা বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচের আগে ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হেরেছে তারা। অপর দিকে বাংলাদেশের সম্ভাবনা এখনও বেঁচে আছে। দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ডের কাছে হারার পর নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে তারা পাকিস্তানকে হারিয়েছে।