যেভাবে নিজে ডুবলেন ও দলকে ডোবালেন লিজ ট্রাস

যেভাবে নিজে ডুবলেন ও দলকে ডোবালেন লিজ ট্রাস

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর পদে বসার মাত্র দেড় মাসের মাথায় পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন লিজ ট্রাস। ঘোষণাটি এল গত সোমবার দেশটির নতুন অর্থমন্ত্রী জেরেমি হান্টের নেওয়া কিছু পদক্ষেপের পর। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ট্রাস যেসব অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সেগুলো খারিজ করে দেন হান্ট।

হান্টের পদক্ষেপগুলো যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক অস্থিরতা কাটিয়ে উঠতে কাজে দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে সেগুলো ট্রাসের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের কারণ হয়ে দাঁড়াল।

যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের অধ্যাপক নিকোলাস অ্যালেন বলেন, ট্রাস ক্ষমতায় আসার পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সময়ের অশান্ত অবস্থা শেষ হবে বলে মনে করা হচ্ছিল। তবে আদতে তা হয়নি। ট্রাসের নেতৃত্বকালে বিশৃঙ্খলা যে গতিতে বেড়েছে, তা যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে আগে কখনো দেখা যায়নি।  

লিজ ট্রাস এমপি নির্বাচিত হয়ে প্রথম যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে যান ২০১০ সালে। ডেভিড ক্যামেরন প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে ২০১৪ সালে তিনি দেশটির পরিবেশ, খাদ্য ও পল্লি উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হন। এরপর থেরেসা মে ও বরিস জনসনের সরকারে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ২০২১ সালে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হন ট্রাস।

গত জুলাইয়ে বরিস জনসন পদত্যাগ করার পর ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্ব কে দেবেন, তা নিয়ে দলটিতে ভোটাভুটি হয়। সেখানে ট্রাসের পক্ষে ৫৭ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট পড়ে। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ঋষি সুনাক পেয়েছিলেন ৪২ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট। ভোটে জয় পেয়ে দলের প্রধান হিসেবে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হন ৪৭ বছর বয়সী ট্রাস।

লিজ ট্রাস যখন ক্ষমতায় এলেন, তখন যুক্তরাজ্যের অর্থনীতির অবস্থা ছিল টালমাটাল। রাশিয়ার ওপর পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞায় জ্বালানি তেলের যে মূল্য বৃদ্ধি হয়েছে, তার বিরাট প্রভাব পড়েছে যুক্তরাজ্যে। দলীয় ভোটের প্রচারণায় জ্বালানির দামে লাগাম টানার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ট্রাস। এই প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে গিয়ে নানা পরিকল্পনার আশ্রয় নেন তিনি। সেগুলোর একটি গত শতকের আশির দশকে বেশ সফলভাবেই কাজে লাগিয়েছিলেন যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান। দুজনকেই আদর্শ মানেন লিজ ট্রাস।

পরিকল্পনাটি হলো করহার কমানো, বিশেষ করে ধনীদের জন্য কর কমিয়ে তাঁদের বিনিয়োগে উৎসাহী করা। একই পরিকল্পনা নিম্ন আয়ের মানুষের ক্ষেত্রেও কাজে লাগবে বলে মনে করতেন লিজ ট্রাস। তাঁর ধারণা ছিল, এতে করে যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়বে।