লাইলাতুল কদর কবে, কীভাবে পালন করবো

লাইলাতুল কদর কবে, কীভাবে পালন করবো

হজরত মুহাম্মদ (সা.) রমজানের শেষ দশকে নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত ও দোয়ার মধ্যে এত বেশি সময় দিতেন, যা অন্য সময়ে দিতেন না। আয়েশা (রা.) থেকে ইমাম বুখারী ও মুসলিম বর্ণনা করেছেন যে, রমজানের শেষ দশরাত্রি শুরু হলে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাত জেগে ইবাদত করতেন তার পরিবারবর্গকে জাগিয়ে তুলতেন এবং স্ত্রী-সহবাস থেকে বিরত থাকতেন।

ইমাম আহমাদ ও মুসলিম বর্ণনা করেছেন যে, “তিনি রমজানের শেষ দশকে এত বেশি ইবাদত করতেন যা অন্য সময়ে করতেন না।”

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াব পাওয়ার আশায় রাত জেগে নামাজ আদায় করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের নিয়তে লাইলাতুল ক্বদরে (ভাগ্য রজনীতে) নামায আদায় করবে তার অতীতের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।” [সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম] এই হাদীস প্রমাণ করে যে, ভাগ্য রজনীতে কিয়ামুল লাইল (রাত্রীকালীন নামায) আদায় করা শরয়ি বিধান।

লাইলাতুল ক্বদরে (ভাগ্য রজনীতে) পঠিতব্য সবচেয়ে ভালো দোয়া হচ্ছে- যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আয়েশা (রা.) কে শিক্ষা দিয়েছেন। যেটি তিরমিযি আয়েশা (রাঃ) থেকে সংকলন করেছেন এবং সহীহ আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন- আমি বললাম,“হে আল্লাহর রাসূল! যদি আমি জানতে পারি কোন রাতটি লাইলাতুল ক্বদর (ভাগ্য রজনী) তবে সে রাতে আমি কী পড়ব? তিনি বললেন, তুমি বলবে-

اللهمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي.

“আল্লাহুম্মা ইন্নাকা ‘আফুউউন তুহিব্বুল ‘আফওয়া ফা ‘ফুউ ‘আন্নী (অর্থ: হে আল্লাহ আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করাকে আপনি ভালবাসেন, অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন।)

রমজানের বিশেষ কোন একটি রাত্রিকে ভাগ্য রজনী হিসেবে সুনির্দিষ্ট করতে হলে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট দলীলের প্রয়োজন। কিন্তু শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে ভাগ্য রজনী হওয়া অন্য রাতগুলোতে ভাগ্য রজনী হওয়ার চেয়ে বেশি সম্ভাবনাময় এবং রমজানের সাতাশতম রাত ভাগ্য রজনী হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। এ বিষয়ে বর্ণিত হাদিসগুলো আমরা যা উল্লেখ করেছি সেটাই প্রমাণ করে।

কস্মিনকালেও বিদ‘আত (দ্বীনের মধ্যে নতুন প্রবর্তিত বিষয়) করা জায়েয নেই। রমজানের মধ্যেও না, রমজানের বাইরেও না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে প্রমাণিত হয়েছে যে তিনি বলেছেন: “যে ব্যক্তি আমাদের এই শরিয়তে এমন কিছু প্রবর্তন করল যা এর অন্তর্ভুক্ত নয় তা প্রত্যাখ্যাত।” অন্য এক রেওয়ায়েতে আছে, “যে ব্যক্তি এমন কোন কাজ করল যা আমাদের শরিয়তের অন্তর্ভুক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত।”

রমজানের নির্দিষ্ট কিছু রাতে অনুষ্ঠান উদযাপনের কোনো ভিত্তি আমাদের জানা নেই। উত্তম আদর্শ হচ্ছে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ এবং সবচেয়ে নিকৃষ্ট হচ্ছে- বিদআত (নতুন প্রবর্তিত বিষয়সমূহ)।

আল্লাহই তাওফিকদাতা।