সিলেটে স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে শিক্ষার্থীদের দুশ্চিন্তা!

সিলেটে স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে শিক্ষার্থীদের দুশ্চিন্তা!

সিলেট থেকে গেল এক বছরে অন্তত ১০ হাজার শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য গিয়েছেন আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। আগামী জানুয়ারি ও মে সেশনে ভর্তির জন্য বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে আবেদন করেছেন আরও কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। কিন্তু ব্যাংকে ডলার সংকটের কারণে ‘টিউশন ফি’ পরিশোধ করতে গিয়ে মারাত্মক বিপাকে পড়েছেন তারা। যারা ইতোমধ্যে ৬ মাসের টিউশন ফি দিয়ে বিদেশ চলে গেছেন তারা নতুন সেশনের ফি দিতে পারছেন না। আর নতুন আবেদনকারীদের অফার লেটার আসলেও টিউশন ফি পরিশোধ করতে না পারায় ‘কনফারমেশন অব এক্সেপটেন্স ফর স্টাডি লেটার’ (কাস লেটার) আসছে না তাদের। এতে সেমিস্টার ড্রপের শিকার হচ্ছেন তারা। ব্যাংকের মাধ্যমে ফি পরিশোধ করতে না পেরে অনেক শিক্ষার্থী ছুটছেন হুন্ডি ব্যবসায়ীদের কাছে। হুন্ডির মাধ্যমে তারা ইউনিভার্সিটির টিউশন ফি জমা দিচ্ছেন। সিলেটের কয়েকটি ব্যাংক, স্টুডেন্ট ভিসা কনসালটেন্সি ফার্ম ও বিদেশগমেনচ্ছু শিক্ষার্থীদের সাথে আলাপ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের আমান উদ্দিন নামের এক শিক্ষার্থী যুক্তরাজ্যের পোর্টসমাউথ ইউনিভার্সিটিতে গ্র্যাজুয়েশন কোর্সের জন্য ভর্তির আবেদন করেছিলেন। গত সপ্তাহে তার অফার লেটার এসেছে। এবার টিউশন ফি জমা দিলে ইউনিভার্সিটি ‘কাস লেটার’ পাঠালে ভিসার জন্য আবেদন করবেন। কিন্তু টিউশন ফি পাঠানোর জন্য ব্যাংকে গিয়ে তার মাথায় হাত পড়ে। কয়েকটি ব্যাংক ঘুরে একই উত্তর মিলে ‘ডলার সংকটের কারণে স্টুডেন্ট ফাইল খোলা বন্ধ’। অর্থাৎ ব্যাংকের মাধ্যমে টিউশন ফি পরিশোধ সম্ভব নয়।

আমান বলেন, ‘৩-৪টি ব্যাংক ঘুরেছি। সবাই ডলার সংকটের কথা বলে ফিরিয়ে দিয়েছে। এখন ফি জমা দিতে না পারলে জানুয়ারি সেশনে ক্লাস করতে পারবো না। বাধ্য হয়ে সেশন ড্রপ দিতে হবে। এতে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ব্যক্তি জানান, ‘ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে না পেরে তিনি বাধ্য হয়ে হুন্ডির আশ্রয় নিয়েছেন। সিলেটে এক হুন্ডি ব্যবসায়ীর কাছে তিনি টাকা জমা দিয়েছেন। ওই ব্যবসায়ী যুক্তরাজ্যে তার ভাইয়ের টিউশন ফি জমা দিয়েছেন।’ ওই ব্যক্তির মতো সিলেটে অনেক শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা এখন হুন্ডি ব্যবসায়ীদের ধারস্থ হচ্ছেন।

সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংকে ডলার সংকটের কারণে সুযোগ নিচ্ছেন হুন্ডি ব্যবসায়ীরাও। টিউশন ফি পরিশোধের জন্য তারা ডলারের মূল্য বাজার দরের চেয়ে অনেক বেশি রাখছেন। সূত্র আরও জানায়, হুন্ডি ব্যবসায়ীরা সিলেটে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফি’র সমপরিমাণ টাকা নিয়ে বার্তা পাঠান যুক্তরাজ্যস্থ তাদের এজেন্টদের কাছে। পরে সেই এজেন্টের কাছ থেকে ডলার সংগ্রহ করেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থী। অনেক সময় হুন্ডি ব্যবসায়ীর এজেন্ট নিজে ইউনিভার্সিটির ফি পরিশোধ করে দেন।

সিলেটের কয়েকটি ব্যাংকের কর্মকর্তার সাথে আলাপ করে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় নির্দেশনার আলোকে তারা ‘স্টুডেন্ট ফাইল’ খোলা বন্ধ রেখেছেন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে ডলার সংকটের কথা বলে ফাইল খুলতে মানা করা হয়েছে। পূবালী ব্যাংকের সিলেট মহানগরীর এক শাখা ব্যবস্থাপক জানান, একসময় তারা প্রচুর সংখ্যক শিক্ষার্থীর টিউশন ফি পাঠিয়েছেন। কিন্তু বর্তমানে ডলার সংকটের কারণে টিউশন ফি পাঠানো বন্ধ রয়েছে। এমনকি ডলার সংকটের কারণে ব্যবসায়ীরা পর্যন্ত এলসি খুলতে পারছেন না।

সিলেট নগরীর জিন্দাবাজারস্থ ‘অ্যাংকরস বিডি’ নামের কনসালটেন্সি ফার্মের পরিচারক মিজান মুন্না জানান, আগামী জানুয়ারি সেশনে ভর্তির জন্য অনেক শিক্ষার্থী যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে আবেদন করেছিলেন। ইতোমধ্যে তাদের অফার লেটারও এসে গেছে। কিন্তু ডলার সংকটের কারণে ব্যাংক ‘ফাইল ওপেন’ না করায় শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারছেন না। যে কারণে তাদের ‘কাস লেটার’ আসছে না। সময়মতো টিউশন ফি জমা দিতে না পারলে জানুয়ারি সেশনে ভর্তি হওয়া তাদের জন্য অনিশ্চিত হয়ে যাবে। এতে শিক্ষার্থীরা সেশন ড্রপের শিকার হবেন।