সুনামগঞ্জে পানি বন্দি মানুষের দুর্ভোগ

সুনামগঞ্জে পানি বন্দি মানুষের দুর্ভোগ

সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি ঘটেছে। বুধবার দুপুরে  সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায় উজানে প্রচুর বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সুরমাসহ জেলার সব কটি নদীর পানি বেড়েছে। এরই মধ্যে জেলার ৫ টি উপজেলা বন্যা আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। সুনামগঞ্জ সদর, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, দোয়ারাবাজার ও ছাতক সহ ৫ টি উপজেলার অন্তত দুই লাখ  মানুষ  পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। অনেক স্থানের বাড়ীর রান্নাঘরে পানি উঠায় তাদের খাওয়া দাওয়ার সমস্যা হচ্ছে। 

সুনামগঞ্জ  পৌর শহরের সাহেব বাড়ি ঘাট, উত্তর আরপিননগর, পুরান পাড়া, বড়পাড়া এলাকার রাস্তা ঘাট বানের পানিতে ডুবে যাওয়ায় যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। পানিবন্দি মানুষ জানায়, বন্যার পানি ঘরের ভেতরে ঢুকে চুলা তলিয়ে গেছে। অনেকে আবার টিনের বড় ড্রামকে নৌকা হিসেবে ব্যবহার করে সেগুলো দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে। 

সুনামগঞ্জের ১২টি উপজেলায় ইতোমধ্যে ২০ মেট্রিক টন করে খাদ্য সামগ্রী বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহুরুল ইসলাম জানান, সুনামগঞ্জে আরও ২ দিন বৃষ্টিপাত থাকবে। 

ছাতকে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে অনেক ঘর বাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির,মৎস্য খামার, গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট ও হাট- বাজার। উপজেলার সর্বত্রই এখন বন্যার পানি থৈ-থৈ করছে। সুরমা, পিয়াইন, চেলা নদীসহ সকল নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত। ইতোমধ্যে উপজেলার ১৩ টি ইউনিয়নে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। 

শহরের অদূরে রহমতবাগ এলাকায় তলিয়ে গেছে ছাতক-সিলেট  সড়ক। দুপুর থেকে সিলেট সহ সারাদেশের সঙ্গে ছাতকের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ছাতক-দোয়ারা সড়ক, আমবাড়ি, জাউয়া, নোয়ারাইবালিউরা, নরশিংপুর, চৌমুহনীবাজার, কৈতক-হায়দরপুর, জালালপুর -লামারসুলগঞ্জ, জাউয়া-বড়কাপন মুক্তিরগাও, লাকেশ্বর, মাদ্রাসা বাজারসড়কসহ গ্রামীণ সব ক'টি সড়কে পানি। সুরমা নদীর পানি ছাতক পয়েন্টে বিপদসীমার ৪২ সে.মি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।  নদ-নদীতে সীমিত আকারে বড় নৌ-যান চলাচল করছে। ইউনিয়নে অনেক মৎস্য খামার, ঘরবাড়ি  ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

ছাতক উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মামুনুর রহমান জানান, উপজেলা পরিষদ চত্বর এলাকায় ও বাসায়ও পানি ঢুকে গেছে। ছাতক পেপার মিল হাই স্কুল, বৌলা প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মণ্ডলীভোগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ৩টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৬০ পরিবার ইতোমধ্যে আশ্রয় নিয়েছে।

তাহিরপুরে বানভাসিদের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে বন্ধ হয়ে গেছে উপজেলা সদরের সঙ্গে আন্তঃসড়ক যোগাযোগ। তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়ক বন্ধ। অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের বন্যায় ডুবছে রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, হাট-বাজার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। হাওরের ঢেউয়ের কবলে ভাঙছে বাড়িঘর। সুরমা যাদুকাটা, রক্তি ও পাটলাই নদীসহ সুনামগঞ্জের সব নদ-নদীর পানি বাড়ছে। 

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রায়হান কবির জানিয়েছেন, কবলিত এলাকায় ত্রাণ বিতরণে জন্য বরাদ্দ এসেছে। দুর্গত এলাকায় এসব বরাদ্দ বিতরণ করা হবে।