বিতর্কিত সেই পুলিশের ডিসি আজবাহার ‘পলাতক’

বিতর্কিত সেই পুলিশের ডিসি আজবাহার ‘পলাতক’

 সিলেট মহানগর পুলিশের বিতর্কিত কর্মকর্তা সাবেক ডিসি আজবাহার আলী শেখ। জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের সময় ছাত্র-জনতার উপর অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করে ব্যাপক সমালোচিত হন তিনি। এছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিরোধীদল ও মতের মানুষের কাছে তিনি ছিলেন মূর্তিমান আতঙ্কের নাম । অবশেষে সমালোচনার মুখে সিলেট থেকে বদলি করা হয় তাকে।

বিদায়ী বছরের (২০২৪) ২১ আগস্ট সিলেট মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (ডিসি উত্তর) পদ থেকে রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সুপারনিউমারারি অতিরিক্ত ডিআইজি হিসাবে সংযুক্ত করা হয়। তবে পুলিশের একটি বিশস্ত সূত্রের দাবি- তিনি এখন দায়িত্ব পালন করছেন না। বেশ কয়েকটি হত্যা মামলার আসামি হয়ে রয়েছেন ‘পলাতক’।

অভিযোগ রয়েছে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে মারমুখী পুলিশ বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন আজবাহার আলী। সব সংঘর্ষের সময় তিনি তার অধীনস্থদের গুলি চালাতে নির্দেশ দিতেন। আন্দোলনচলাকালে ২ আগস্ট (শুক্রবার)  সিলেটের আখালিয়ার মাউন্ট এডোরা হসপিটালের সামনে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে তিনি হাতছানি দিয়ে ডেকে বলেছিলেন- ‘বাপের বেটা হলে তোরা সামনে আয়’। এ দৃশ্যের ভিডিও ফুটেজ এখনও ফেসবুকে ভাইরাল।

সিলেট মহানগর পুলিশের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পাঁচ আগস্টের পর দায়ের হওয়া বেশ কয়েকটি হত্যা মামলার অন্যতম আসামি আজবাহার আলী শেখ। সিলেট থেকে তাকে রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত (ওএসডি) করা হয়েছে। তবে তিনি সেখানে দায়িত্ব পালন না করে পলাতক রয়েছেন। তাকে গ্রেফতার করতে তৎপরতা চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে- সিলেটে ছাত্রজনতার আন্দোলন চলাকালে আজবাহারের নেতৃত্বে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল ছুড়া হয়েছে। গত বছরের ১৯ জুলাই পুলিশের গুলিতে নিহত সাংবাদিক এটিএম তুরাবের উপর গুলিবর্ষণের দিন তিনি বন্দরবাজার এলাকার দায়িত্বে ছিলেন। এছাড়াও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর হামলার সময় তিনি নেতৃত্বে দিয়েছিলেন। তখন পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলা থেকে রক্ষা পেতে পালাতে গিয়ে পানিতে ডুবে মারা যান বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুদ্র সেন।

এদিকে এখনও নিপীড়ক পুলিশ সদস্যদের গ্রেফতার না করায় শিক্ষার্থীসহ ছাত্রজনতার মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। প্রশ্ন উঠছে পুলিশের যথাযথ দায়িত্ব পালন নিয়েও।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্য ফয়সাল হোসেনের বলেন, নিপীড়ক পুলিশদের এখনও গ্রেফতার করা হয়নি এটা কষ্টের বিষয়। আমরা দেখতে পাচ্ছি পুলিশ তাদের যথাযথ দায়িত্ব পালন করছে না। সম্প্রতি সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। সেখানে যে সকল পুলিশ সদস্য আন্দোলনের সময় ছাত্র-জনতার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, বিভিন্ন মামলায় আসামি রয়েছেন তাদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছি।

আজবাহার আলী শেখ যে কয়েকটি মামলার উল্লখ্যযোগ্য আসামি তার মধ্যে অন্যতম পুলিশের গুলিতে নিহত সাংবাদিক এটিএম তুরাব সাংবাদিক হত্যা মামলা। এই মামলায় মহানগর পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সাদেক কাউসার দস্তগীর ও কনস্টেবল উজ্জ্বল সিংহ গ্রেফতার হয়েছেন।

ঐ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই সিলেটের পরিদর্শক মোহাম্মদ মুরসালিন জানিয়েছেন, পুলিশ তুরাব হত্যা মামলায় ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে যথাযথ কাজ করছে। যাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। বাকি আসামিদের ধরতে পুলিশ কাজ করছে। --সিলেটভিউ