সিলেটে বেলা বাড়ার সঙ্গে বাড়ছে ভোটার উপস্থিতি
সিলেট বিভাগের ১১টি উপজেলায় আজ ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বুধবার সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। ১১টি উপজেলা হচ্ছে- সিলেট জেলার সদর, দক্ষিণ সুরমা, বিশ্বনাথ ও গোলাপগঞ্জ, সুনামগঞ্জের দিরাই ও শাল্লা, মৌলভীবাজারের জুড়ি, কুলাউড়া ও বড়লেখা এবং হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ ও বানিয়াচং।
ভোটগ্রহণ চলবে টানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত। ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপ এটি। ৪ ধাপে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
জানা গেছে, সিলেট জেলার ৪ উপজেলার বিভিন্ন কেন্দ্রে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছেন ভোটারও। অনেক বুথের সামনে ভোটারদের রয়েছে লম্বা সারি। সমানতালে আছেন নারী ভোটারও।
সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের জন্য মঙ্গলবার (৭ মে) সন্ধ্যার মধ্যেই সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেন নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বরতরা। মঙ্গলবার বেলা ১১টা ভোট কেন্দ্রগুলোতে ইভিএম, ব্যালট পেপার ও বাক্সসহ নির্বাচনি সরঞ্জামাদি পাঠানো শুরু হয়। সন্ধ্যার মধ্যে কেন্দ্রে কেন্দ্রে গিয়ে পৌঁছে যায় এসব সরঞ্জাম।
সিলেট বিভাগের চারটি উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা আট লাখ ১৪ হাজার ৫২ এবং ভোটকেন্দ্র ৩০২টি। এর মধ্যে কয়েকটিতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)-এর মাধ্যমে এবং বাকিগুলোতে ব্যালটের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে সিলেট জেলার সদর, দক্ষিণ সুরমা, বিশ্বনাথ ও গোলাপগঞ্জ উপজেলায় তিনটি পদে মোট ৫৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৪ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১০ জন লড়ছেন।
চার উপজেলার ৩০২টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১৭৪টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ ধরে নিরাপত্তা পরিকল্পনা করে সিলেট জেলা ও মহানগর পুলিশ। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ছয় হাজারের বেশি পুলিশ ও আসনার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
ভোটে আড়াই হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য, সাড়ে তিন হাজারের বেশি আনসার সদস্য ও চারজন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট ও ৩৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত রয়েছেন। এর বাইরে বিজিবি ও এপিবিএন সদস্যরাও মাঠে রয়েছেন।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের আওতাধীন দুই উপজেলায় ১২৫টি কেন্দ্রের মধ্যে সদরে ৬২টি কেন্দ্রের মধ্যে ৪৫টি ঝুঁকিপূর্ণ ও ১৭টি সাধারণ কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়। দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় ৬৩টি কেন্দ্রের মধ্যে নির্ধারণ করা হয় ২৪টি ভোটকেন্দ্র সাধারণ ও ৩৯টি ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া সিলেট জেলা পুলিশের আওতাধীন দুই উপজেলায় ১৭৭টি কেন্দ্রের মধ্যে ৯০টি ঝুঁকিপূর্ণ ধরা হয়েছে। এর মধ্যে গোলাপগঞ্জ উপজেলায় ১০৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ৪০টি সাধারণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ ৬৩টি। বিশ্বনাথ উপজেলায় ৭৪টি কেন্দ্রের মধ্যে সাধারণ ৪৭টি ও ঝুঁকিপূর্ণ ২৭টি।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, জেলা পুলিশের আওতাধীন গোলাপগঞ্জ ও বিশ্বনাথ উপজেলায় ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে একজন উপ-পরিদর্শকের (এসআই) নেতৃত্বে পাঁচজন ও সাধারণ কেন্দ্রগুলোতে চারজন করে পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের সঙ্গে প্রতি কেন্দ্রে ১২ জন আনসার সদস্য ছাড়াও বিজিবি সদস্যরা রয়েছেন।
সিলেট জেলা পুলিশের আওতাধীন গোলাপগঞ্জ ও বিশ্বনাথে ১৭৭ কেন্দ্রের মধ্যে ৯০টি ঝুঁকিপূর্ণ জানিয়ে ডিএসবির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সুফিয়ান বলেন, গোলাপগঞ্জ-বিশ্বনাথে এক হাজার ২৪৭ জন পুলিশ সদস্য এবং দুই হাজার ১২৪ জন আনসার সদস্য রয়েছেন।
তিনি বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে একজন উপ-পরিদর্শকের (এসআই) নেতৃত্বে পাঁচজন এবং সাধারণ কেন্দ্রে চারজনের ফোর্স স্ট্যান্ডবাই রয়েছে। গোলাপগঞ্জে ২১টি ও বিশ্বনাথে ১৬টি মোবাইল টিম রয়েছে এবং প্রতিটিতে পুলিশের পাঁচজন করে সদস্য।
গোলাপগঞ্জ ও বিশ্বনাথে চারটি করে স্ট্রাইকিং ফোর্স রয়েছে। প্রতিটিতে ১০ জন করে পুলিশ সদস্য। দুই উপজেলায় ডিবির ছয়টি টিমও রয়েছে। উপজেলা দুটিতে এপিবিএনের ১০ জনের দুটি টিম রয়েছে, মাঠে রয়েছে বিজিবিও।
স্ট্রাইকিং টিমের সঙ্গে ২১ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে রয়েছেন। এর মধ্যে গোলাপগঞ্জ উপজেলায় ১২ জন ও বিশ্বনাথ উপজেলায় নয়জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন। দুটি উপজেলায় দায়িত্ব পালন করছেন দুজন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন ঘিরে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মহানগরের আওতাধীন সদর ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলার ১২৫টি কেন্দ্রে এক হাজার ২৭৫ জন পুলিশ ও এক হাজার ৬২৫ জন আনসার সদস্য নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছেন।
তিনি বলেন, সিলেট সদর উপজেলায় ৬২টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৭টি সাধারণ এবং ৪৫টি গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) ধরা হয়েছে। আর দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় ৬৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ২৪টি সাধারণ ও ৩৯টি ঝুঁকিপূর্ণ ধরে নিরাপত্তা পরিকল্পনা করা হয়েছে।
সাইফুল বলেন, দুটি উপজেলায় সাধারণ ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি কেন্দ্রে চারজন করে পুলিশ সদস্য স্ট্যান্ডবাই রয়েছেন। সেই সঙ্গে ১৩ জন করে আনসার সদস্য। প্রতি তিনটি ইউনিয়নে ছয়জনের করে ১৫টি স্ট্রাইকিং ফোর্স দায়িত্ব পালন করছে। তিনটি করে কেন্দ্রে মোবাইল টিম টহল দিচ্ছে।
এর বাইরেও সিআরটি, সাদা পোশাকে পুলিশ, বিজিবি দায়িত্ব পালন করছে। এ ছাড়া নির্বাচন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার রোধে পুলিশের সাইবার টিমও তৎপর রয়েছে।
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইমরুল হাসান বলেন, সিলেটের চারটি উপজেলায় নির্বাচনে ৩৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ভোটের দিন দায়িত্ব পালন করছেন।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, নির্বাচনে সিলেটের চারটি উপজেলায় চারজন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি প্রতিটি ইউনিয়নে একজন করে ৩৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন দায়িত্বে। এর মধ্যে সিলেট সদর উপজেলায় সাতজন, দক্ষিণ সুরমায় আটজন, গোলাপগঞ্জে ১২ জন এবং বিশ্বনাথে নয়জন।