অনন্ত হত্যার রায়ের পর্যবেক্ষণে যা বললেন আদালত

অনন্ত হত্যার রায়ের পর্যবেক্ষণে  যা বললেন আদালত

স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের অধিকার প্রতিহত ও লেখালেখি চিরতরে স্তব্দ করতেই অনন্ত বিজয় দাশকে হত্যা করা হয়েছে। তাকে হত্যার মাধ্যমে মুক্তবুদ্ধি ও প্রগতিশীলতা চর্চাকারীদের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে দেওয়াই ছিলো খুনিদের মূল উদেশ্য।

বুধবার অনন্ত বিজয় দাশ হত্যা মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে এমন মন্তব্য করেছেন আদালত। দুপরে সিলেটের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইবুনালের বিচারক নুরুল আমীন বিপ্লব এই রায় প্রদান করেন। রায়ে চার আসামিকে মৃত্যুদন্ড ও একজনকে খালাস প্রদান করা হয়। মৃত্যুদন্ড পাওয়া ৪জনকে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছে।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত উল্লেখ করেন, অনন্ত বিজয় বিজ্ঞান মনস্ক ও প্রগতিশীল চিন্তার লোক ছিলেন। তিনি ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে মুক্তবুদ্ধির চর্চা করতেন। অনন্ত বিজয় দাশের স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের মৌলিক অধিকারকে প্রতিহত করার জন্য এবং তার লেখনীকে চিরতরে স্তব্ধ করার জন্য সন্ত্রাসী কায়দায় প্রকাশ্যে দিবালোকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। হত্যাকান্ডের নৃশংসতা ও বিভৎসতা দ্বারা যে সকল লেখক মুক্তবুদ্ধি, প্রগতিশীলতা, বিজ্ঞান ও সমাজে প্রচলিত কুসংস্কার বিষয়ে লেখেন বা বক্তব্য রাখেন তাদের মধ্যে ভীতি ও শঙ্কা ছড়িয়ে দেওয়াই ছিলো মূল উদ্দেশ্য।

আদালত আরও বলেন, জনমনে ভীতির সঞ্চার করে এবং জননিরাপত্তাকে বিঘিœত করে ভিকটিম হত্যা করে এই আসামিগণ গর্হিত অপরাধ করেছেন- যা বর্হিবিশে^ রাষ্ট্রের ভাবমূর্তিকে অনুজ্জ্বল করেছে। ফলে এই আসামগিণ দন্ড প্রদানের ক্ষেত্রে আদালতের কোন অনুকম্পা পেতে হকদার নয়। বরং এই আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দিলে অন্যান্য সন্ত্রাসী জঙ্গি উগ্রবাদী মতাদর্শের লোকজন এই ধরণের হত্যাকান্ডে উৎসাহিত হবে।

পর্যবক্ষণে আদালত বলেন, অনন্তকে হত্যার পরপরই টুইটারে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম এই হত্যার দায় স্বীকার করলেও  বাংলা টিম বা অন্যকোন নিষিদ্ধ সত্ত্বার সংশ্লিস্টতার বিষয়টি সাক্ষ্য দ্বারা প্রমাণিত হয়নি।

মামলা থেকে শফিউর রহমান ফারাবিকে খালাস প্রদান প্রসঙ্গে আদালত বলেন, হত্যাকান্ডের সময়ে ফারাবি অন্য মামলায় কারাগারে ছিলেন।

সিলেটের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ কৌশলী মোমিনুর রহমান টিটু বলেন, মামলার রায়ে আদালত বলেছেন, হত্যাকারীরা একটি সংঘবদ্ধ গোষ্ঠি। পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তারা অনন্তকে হত্যা করেছে।

চাঞ্চল্যকর এই মামলার রায়ে দ-িতরা হলেন কানাইঘাট উপজেলার আবুল হোসেন, খালপাড় তালবাড়ির ফয়সাল আহমদ, সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বিরেন্দ্রনগরের  মামুনুর রশীদ ওরফে হারুন অর রশিদ ও কানাইঘাটের ফালজুর গ্রামের আবুল খায়ের রশীদ আহমদ।

খালাস দেয়া হয়েছে নগরের রিকাবীবাজার এলাকার সাফিউর রহমান ফারাবী ওরফে ফারাবী সাফিউর রহমান। ফারাবী ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার দ-িত আসামি।

সম্পূরক অভিযোগপত্রে নাম আসা ছয়জনের মধ্যে ২০১৭ সালের ২ নভেম্বর মান্নান হঠাৎ অসুস্থ হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ১২ মে সকালে নগরের সুবিদবাজারে নিজ বাসার সামনে খুন হন অনন্ত বিজয়। পেশায়ঢ ব্যাংক কর্মকর্তা অনন্ত বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখি করতেন। যুক্তি নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করতেন আর যুক্ত ছিলেন মুক্তমনা ব্লগের সাথে।  এ ছাড়া বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। পুলিশের অভিযোগপত্র মতে, লেখালেখির কারণে উগ্রবাদী গোষ্ঠিই তাকে হত্যা করেছে।

অনন্তকে হত্যার পরদিনই তার বড় ভাই রতেœশ্বর দাশ সিলেট বিমানবন্দর থানায় অজ্ঞাতনামা চারজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। এর প্রায় ৭ বছর পর আজ মামলার রায় প্রদান করা হলা।