আইসিউইর সামনে স্বজনদের আহাজারি!

আইসিউইর সামনে স্বজনদের আহাজারি!

হাসপাতালের নতুন ভবনের এমারজেন্সি গেইট পার হয়ে দুতলায় উঠেই আইসিউই বিভাগ। সেখানে যেতেই কানে ভেসে আসে আর্তনাদ আর আহাজারির শব্দ। বুক চাপড়িয়ে, মাথায় হাত দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে প্রিয়জন হারানোর বেদনায় জ্ঞান হারাচ্ছেন স্বজনরা। কেউ বা এসে দিচ্ছেন শান্তনা আর কেউবা এসে নিজেই কাঁদতে কাঁদতে করছেন বিলাপ।

মঙ্গলবার দুপুরে দুইটার দিকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিউইর সামনে গিয়ে দেখা যায় এ চিত্র।

সিলেটের ওসমানীনগরে যুক্তরাজ্য প্রবাসী একই পরিবারে পাঁচ সদস্যকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধারের পর বাবা-ছেলে মৃত ও অপর তিনজন আহত হবার ঘটনায় স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে হাসপাতাল এলাকা।

এরআগে এদিন সকাল ১১টার দিকে উপজেলার তাজপুর বাজার এলাকার একটি বাসার কক্ষ থেকে তাঁদের উদ্ধার করা হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর বাবা-ছেলে মারা যান। অসুস্থদের মধ্যে মৃত ব্যক্তির স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছেন।

নিহতরা হচ্ছেন- উপজেলার দয়ামীর ইউনিয়নের ধিরারাই (খাতুপুর) গ্রামের মৃত আবদুল জব্বারের ছেলে যুক্তরাজ্য প্রবাসী রফিকুল ইসলাম (৫০) ও রফিকুলের ছোট ছেলে মাইকুল ইসলাম (১৬)। অপরদিকে, আশঙ্কাজনক অবস্থায় রফিকুল ইসলামের স্ত্রী হুছনারা বেগম (৪৫), ছেলে সাদিকুল ইসলাম (২৫) এবং মেয়ে সামিরা ইসলামকে (২০) সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

দুলাভাইকে হারিয়ে আইসিউই সামনে বসে বিলাপ করছেন মৃত রফিকুল ইসলামের শ্যালক সেবুল আহমদ। এসময় তিনি বলেন, ‘দুলাভাই দেশে এসেছিলেন তার ছেলেকে চিকিৎসা করাতে। গতকালই আমাকে বলেছিলেন তিনি একটু ঘুরতে চান। তার আর ঘুরতে যাওয়া হলো না। আমার বোন বিধবা হয়ে গেলে।’

তিনি আরও বলেন, গতকালও আমি দুলাভাইয়ে বাসায় ছিলাম। ঘুম থেকে উঠে যখন তারা কোন সাড়া দিচ্ছিলেন না তখন আমরা পুলিশকে খবর দেই।

যুক্তরাজ্য প্রবাসী রফিকুল ইসলাম চাচাতো ভাই রুবেল বলেন, ‘ভাই-ভাতিজা শেষ। বাকিরা সবাই গুরুতর। আমাদের একটা পরবিারের সবশেষ হয়ে গেল।’

এদেকে বিষক্রিয়ার কারণে ঘটনাটি ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছেন সিলেটের পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।

জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে পরিবার নিয়ে যুক্তরাজ্যে বসবাস করে আসছেন রফিকুল ইসলাম। অসুস্থ ছেলে সাদিকুল ইসলামকে চিকিৎসা দেয়ার জন্য গত ১২ জুলাই স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে দেশে এসে এক সপ্তাহ ঢাকায় থাকেন। চিকিৎসা শেষে গত ১৮ জুলাই উপজেলার তাজপুর স্কুল রোড এলাকার চারতলাবিশিষ্ট একটি ভবনের দ্বিতীয় তলায় বাসা ভাড়া নেন। সোমবার রাতের খাবার শেষে প্রবাসী রফিক মিয়া ও তার স্ত্রী সন্তানসহ ৫জন একটি কক্ষে এবং রফিকুল ইসলামের শশুর আনফর আলী, শাশুড়ি বদরুন্নেছা, শ্যালক দেলোয়ার হোসেন, শ্যালকের স্ত্রী শোভা বেগম ও মেয়ে সাবিলা বেগম (৮) অন্যান্য কক্ষে ঘুমিয়ে পড়েন।

মঙ্গলবার সকালে বাসার সুস্থ স্বজনরা ডাকাডাকি করে প্রবাসী রফিকুল ইসলামসহ তার স্ত্রী-সন্তানরা ঘরের দরজা না খোলায় ৯৯৯ নম্বরে কল করেন। খবর পেয়ে দুপুর ১২টার দিকে ওসমানীনগর থানাপুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে কক্ষের দরজা ভেঙে রফিকুল ইসলামসহ তার স্ত্রী হুছনারা বেগম, ছেলে মাইকুল ইসলাম, সাদিকুল ইসলাম ও মেয়ে সামিয়া ইসলামকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ওসমানী হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার রফিকুল ইসলাম ও মাইকুল ইসলামকে মৃত ঘোষণা এবং আশঙ্কাজনক অবস্থা হওয়ায় অসুস্থ তিনজনকে নিবিড় পরিচর্চা কেন্দ্রে (আইসিইউ) প্রেরণ করেন।