ইফতারের আগে দোয়া কবুল হয়

ইফতারের আগে দোয়া কবুল হয়

জাগো সিলেট: ইফতার আরবি শব্দ। রোজা সমাপ্ত করার উদ্দেশ্যে সূর্যাস্তের পর যে কোনো কিছু পানাহার করাকে ইফতার বলে। এটি রমজান ও রোজার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইফতার করতে হয়। ইফতার অহেতুক বিলম্ব করা; বিশেষত আরো ভালো করে রাত হওয়ার অপেক্ষায় বিলম্ব করা বা রোজার সময় দীর্ঘ করার উদ্দেশ্যে বিলম্ব করা চরম অনুচিত কাজ।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছন: মুসলমানরা ততক্ষণ কল্যাণের উপর থাকবে যতক্ষণ তারা ইফতার জলদি করবে। -বুখারি
আবু দাউদের বর্ণনায় আছে, ইহুদি-খ্রিষ্টানরা দেরি করে ইফতার করে। সুতরাং ইহুদি-খ্রিষ্টানদের রোজার সঙ্গে আমাদের রোজার সাদৃশ্য এড়িয়ে চলার জন্য যেভাবে আমাদের অবশ্যই সেহরি খেতে হবে, সেভাবে ইফতারও খেতে হবে দ্রুত।

ইফতার তাড়াতাড়ি করার অর্থ হলো আমরা খাবারের প্রতি প্রচণ্ড আগ্রহী ছিলাম, কিন্তু মহান প্রভুর নিষেধের কারণে আমরা তা গ্রহণ করতে পারিনি। এখন তিনি অনুমতি দিয়েছেন তাই আর কোনো বাধা নেই। অর্থাৎ ইফতার দ্রুত করার মাধ্যমে দাসত্ব প্রকাশ পায়। পক্ষান্তরে সূর্যাস্তের বিষয়টি জানার পরেও ইফতারে বিলম্ব করলে তা ভিন্ন কিছু বুঝায়। মনে হয়, এতক্ষণের পানাহার বর্জন করাটা প্রভুর জন্য ছিল না, নিজের কোনো গরজে ছিল। তাই শুধু আমাদের নবী নন, বরং সমস্ত নবীর স্বভাব ছিল, সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেরি না করে ইফতার করা।

ইফতার করতে হবে সূর্যের পূর্ণ গোলক ডুবে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে। যদিও পশ্চিমের আকাশে তখন যথেষ্ট আলো থাকবে। মনে রাখতে হবে, পশ্চিমের আকাশ অন্ধকার হওয়ার সঙ্গে ইফতারের সম্পর্ক নেই। সূর্যের গোলক ডুবে যাওয়ার পরেও কিন্তু পশ্চিমের আকাশ কিছুক্ষণ ফর্সা থাকে।

ইফতারের পূর্ব সময়টা স্বাভাবিকভাবেই আমাদের জন্য খুব ব্যস্ত সময়। ইফতারের সামগ্রী তৈরি ও সাজানোতে সময়টা হয়ে ওঠে সারাদিনের সবচেয়ে ব্যস্ত সময়। শত ব্যস্ততার ভেতরেও আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে স্মরণ রাখতে হবে- এটা নিশ্চিত দোয়া কবুলের সময়। ইবনা মাজাহর বর্ণনাতে আছে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন: ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া নিশ্চয় ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। তাই ইফতারের আগের সময়গুলো অহেতুক গল্পগুজবে নষ্ট না করে, এমনকি অন্য কোনো দরকারি বা ভালো কাজে ব্যয় না করে দোয়া, মোনাজাতে লিপ্ত থাকতে সচেষ্ট হোন। নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, স্বজনদের জন্য, জাতির জন্য, মানবতার জন্য প্রার্থনা করুন। নিজেও দোয়াতে মনোনিবেশ করুন, বাসার সবাইকে উদ্বুদ্ধ করুন মোনাজাতে মনোযোগী হতে।

বাইহাকীর বর্ণনাতে আছে, ‘মহান আল্লাহ্ রমজান মাসে প্রতিদিন ইফতারের সময় ৬০ হাজার লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন।’ আর তিরমিযিরি রেওয়াতে আছে, ‘মহান আল্লাহ্ রমজান মাসের প্রত্যেক রাতে বহু জাহান্নামীকে মুক্তি দেন।’ এসব হাদীসের বিবেচনায় বোঝা যায়, ইফতারের আগের সময়গুলো মুমিন জীবনের জন্য অতি মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ। তাই ইফতারের আগের সময় অন্য কাজে ব্যয় না করে আল্লাহর দরবারে ব্যয় করুন। যেন আপনার নাম, আপনার স্বজনদের নাম মুক্তিপ্রাপ্তদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়।

অন্য রোজাদারকে ইফতার করানোটাও ইসলামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ একটি আমল। যা অনেক বড় ছওয়াবের উপলক্ষ। আল্লহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন: কেউ যদি রমজান মাসে কোনো রোজাদারকে ইফতার করায় তাহলে তার গুনাহ মাফ ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির কারণ হবে। আর সে ততোটুকুই ছওয়াব পাবে যতটুকু ছওয়াব রোজাদার ব্যক্তি পাবে। অথচ রোজাদার ব্যক্তির ছওয়াব এতে একটুও হ্রাস পাবে না।

সাহাবাগণ জিজ্ঞাসা করলেন: হে আল্লাহর নবী, আমাদের সবার কাছে এমন কিছু থাকে না, যা দ্বারা সে অন্যকে ইফতার করাবে? উত্তরে তিনি বললেন: এক ঢোক দুধ অথবা একটা খেজুর অথবা এক চুমুক পানি দিয়েও যদি কেউ ইফতার করায় তাকেও মহান আল্লাহ এই ছওয়াব দান করবেন। আল্লাহ তাকে আমার হাউজ থেকে পানি পান করাবেন। ফলে সে জান্নাতে প্রবেশের আগ পর্যন্ত পিপাসায় কষ্ট পাবে না।