ঈদ নেই তাদের পরিবারে

ঈদ নেই তাদের পরিবারে

মাছুম আহমেদ (২৭)। বছর তিনেক আগে ভালোবেসে বিয়ে করেন প্রতিবেশী তরুণী মোছা. শাবলী বেগমকে। তাঁদের দুই বছরের যমজ দুটি ছেলে আছে। কথা ছিল স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে শাবলী ছেলেদের জন্য ঈদের কেনাকাটা করবেন। কিন্তু তুচ্ছ ঘটনার জেরে প্রাণ গেছে মাছুমের। ভালোবাসার মানুষকে হারিয়ে তাই ঈদ নেই শাবলীদের সংসারে।

গত ২২ এপ্রিল তুচ্ছ ঘটনার জেরে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর পৌর এলাকার বাড়িজগন্নাথপুর গ্রামে মারামারির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় মাছুম মাথায় আঘাত পেয়ে সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরের দিন মারা যান।

মাছুমের স্ত্রী শাবলী বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এবারের ঈদে ছেলেদের নিয়ে একসঙ্গে বাজারে গিয়ে সবার জন্য কেনাকাটা করতে চেয়েছিলাম। ভালোবাসার মানুষকে হারিয়ে আমার সব আনন্দ শেষ হয়ে গেছে। পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি নেই। তাই সংসারে কোনো ঈদ নেই।’

মাছুমের শ্বশুর হারুন মিয়া বলেন, ‘জামাতার এমন অপ্রত্যাশিত মৃত্যুতে আমার মেয়ের সংসার তছনছ হয়ে গেছে। দুই বছরের দুটি ছেলে নিয়ে অসহায় অবস্থায় আমার পরিবারে এসেছে। আমাদের মনে তো ঈদের আনন্দ নেই।’

মাছুমের মতো তুচ্ছ ঘটনার জেরে খুন হন আরেক মাছুম মিয়া (২৭)। তিনিও জগন্নাথপুর পৌর এলাকার বাসিন্দা। গত বছর ঈদুল ফিতরের আগে পৌর এলাকার ভবানীপুর গ্রামে যাতায়াতের রাস্তা নিয়ে প্রতিবেশী সুরুজ মিয়ার সঙ্গে মাছুমের মারামারির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গত বছরের ১৬ এপ্রিল খুন হন মাছুম। মাছুমকে হারিয়ে দিশেহারা তাঁর পরিবার। মাছুমের পরিবারেও ঈদ বলে কিছু নেই। এ ঘটনায় মাছুমের বোন তমা আক্তার বাদী হয়ে ১৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। পুলিশ আদালতে মামলার অভিযোগপত্র দিলেও সন্তুষ্ট নয় মাছুমের পরিবার।

মাছুমের বোন তমা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভাইকে হারিয়ে আমাদের পরিবার আজ দিশেহারা। আমাদের পরিবারে ঈদ বলে কিছু নেই। মামলা চলছে।’

জগন্নাথপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, গত দুই ঈদুল ফিতরের পূর্বমুহূর্তে একই এলাকার একই নামের দুই যুবক তুচ্ছ ঘটনার জেরে খুন হওয়ার ঘটনা সত্যিই বেদনাদায়ক। দুই ঘটনার দুটি মামলার একটির অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হয়েছে। আরেকটি মামলায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, দুটি ঘটনাই তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে। ঘটনাগুলো গুরুত্ব দিয়ে দেখছে পুলিশ।