উত্তর কোরিয়ায় ১১ দিন হাসতে পারবেনা কেউ

উত্তর কোরিয়ায় ১১ দিন হাসতে পারবেনা কেউ

বাবা কিম জং ইলের দশম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নতুন ফতোয়া দিয়েছে উত্তর কোরিয়ার কিম জং উনের সরকার। রেডিয়ো ফ্রি এশিয়া সূত্রে খবর, টানা ১১ দিন চলবে না মদ্যপান। হাসতেও পারবেন না কেউ। দেশবাসীর চোখেমুখে কোনও ভাবেই যেন খুশির ঝলক দেখা না যায়। শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে এই নিষেধাজ্ঞা।

কিম জং ইল ১৯৯৪ থেকে ২০১১ পর্যন্ত উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন। প্রতি বছরই তার মৃত্যুবার্ষিকীর সময় এমন কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

উত্তর কোরিয়ার বাসিন্দারা জানান, শুক্রবারসহ আগামী ১১ দিন সমস্ত অবসর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাসিন্দারা মুদি কেনাকাটাও করতে পারবেন না। প্রতিবছরের মতো অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বলেন, ‘অতীতেও এই শোকের সময় মদ্যপান করে বা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ধরা পড়া অনেক লোককেই গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং তাদের সঙ্গে আদর্শিক অপরাধী হিসাবে আচরণ করা হয়েছিল। তাদের ধরে নিয়ে যাওয়ার পর আর কখনও দেখা যায়নি’।

এ বছর দশম মৃত্যুবার্ষিকী হওয়ায় শোক পালন চলবে ১১ দিন। সাধারণত, প্রতি বছর ১০ দিনের শোক পালন করা হয়।

‘এমনকি যদি আপনার পরিবারের কোনো সদস্যও এই শোকের সময় মারা যায়, তবে আপনাকে জোরে চিৎকার করে কাঁদার অনুমতি দেওয়া হবে না এবং এই শোক শেষ হওয়ার পরই আপনার স্বজনের মৃতদেহ বাইরে বের করতে পারবেন। শোকের সময়ের মধ্যে পড়লে লোকে তাদের নিজের জন্মদিনও উদযাপন করতে পারে না’।

এই বছরের ক্র্যাকডাউন ডিসেম্বরের শুরু থেকেই চলছে। কারণ উত্তর কোরিয়ার পুলিশ ডিসেম্বরের শুরু থেকেই এবার শোকের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল।

কিম জং ইল ২০১১ সালের ১৭ ডিসেম্বর ৬৯ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

উত্তর কোরিয়ার বর্তমান রাষ্ট্রপ্রধান কিম জং উনের বিরুদ্ধে কখনো অভিযোগ উঠেছে নিজের চাচাকে হিংস্র কুকুরের মুখে ফেলে হত্যা করার। কখনওবা দেশের সেনা প্রধানকে তিনি ‘গায়েব’ করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বার ‘কে পপ’ (দক্ষিণ কোরিয়ার জনপ্রিয় পপ গান) শোনার ‘অপরাধে’ সাত জনকে প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার অভিযোগও উঠল উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উনের বিরুদ্ধে।

একটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার রক্ষাকারী সংগঠন এই সংক্রান্ত একটি রিপোর্টে দাবি করেছে, দক্ষিণ কোরিয়ায় তৈরি ‘কে পপ’ শোনা এবং অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করার ‘অপরাধে’ ২০১২ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে অন্তত সাত জনকে প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড দেন কিম। এর মধ্যে ৬টি ঘটনা ঘটেছে হেসান প্রদেশে। শুধু তাই নয়, ওই সময়ে কিমের নির্দেশে প্রিয়জনের মৃত্যুদণ্ড দেখতে নিকটাত্মীয়দের বাধ্য করা হয়েছিল বলে জানায় সংগঠনটি।

২০১৫ সাল থেকে অন্তত ৬৮৩ জন কিম-বিরোধী উত্তর কোরিয়ান নাগরিকে সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেছে সংগঠনটি। তাতে জানা গেছে, কিমের প্রথম পাঁচ বছরের শাসন কালে নানা কারণে ৩৪০ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। এই তালিকায় রয়েছেন কিমের চাচা জ্যাং সং থেক, দেশের তৎকালীন সেনা প্রধান রি ইয়ং হো।