উপহারের ঘরে অনিয়ম, পিএমও’র টিম পরিদর্শনে সিলেট-হবিগঞ্জ

উপহারের ঘরে অনিয়ম, পিএমও’র টিম পরিদর্শনে সিলেট-হবিগঞ্জ

করোনামহামারির কঠোর ‘বিধি-নিষেধ’ এর মধ্যেও আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়ি পরিদর্শনে সিলেট-হবিগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছুটে গেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) পাঁচটি টিম।

আগামী কয়েকদিন আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত এবং নির্মাণাধীন বাড়িগুলোর অবস্থা দেখতে বিভিন্ন জেলা-উপজেলা সদর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম চষে বেড়াবে এসব টিম।

শুক্রবার (৯ জুলাই) সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এক যোগে এসব টিম সারাদেশের বিভিন্ন জেলার উদ্দেশে রওনা হয়। প্রথম দফায় সারাদেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলাকে পাঁচটি ব্লকে ভাগ করে পরিদর্শন শুরু করেছে এসব টিম।

পরিদর্শনকারী টিমগুলোকে বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় নির্মিত এবং নির্মাণাধীন বাড়িগুলোর নির্মাণশৈলী ও গুণগতমান, অনুমোদিত ডিজাইন ও প্রাক্কলন অনুযায়ী হয়েছে কিনা, তা যাচাই করার এবং ছবিসহ প্রতিবেদন তৈরির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সরেজমিন পরিদর্শনে যাওয়া উচ্চ পর্যায়ের পাঁচটি টিমের একটিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের পরিচালক মো. মাহবুব হোসেন নিজেই।

শুক্রবার দুপুরে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের পরিচালক মো. মাহবুব হোসেনের নেতৃত্বে দু’টি টিম মুন্সিগঞ্জ জেলার সদর উপজেলায় পৌঁছায়। সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়িগুলো পরিদর্শন এবং উপকারভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন তারা।

এ দু’টি টিমে অন্যান্যের মধ্যে মুন্সিগঞ্জে উপস্থিত রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান, মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল, প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব এ.বি.এম সরওয়ার-ই-আলম সরকারসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও মাঠ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

মুন্সিগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়ি পরিদর্শন শেষে টিম দু’টি আলাদা হয়ে ভিন্ন ভিন্ন জেলার উদ্দেশে রওনা হবে।

আর আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমানের নেতৃত্বে অপর টিম হবিগঞ্জ সদর, মৌলভীবাজার সদর ও সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার বাড়িগুলো পরিদর্শন করবেন।

আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প পরিচালক মো. মাহবুব হোসেনের নেতৃত্বে একটি টিম টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলা এবং বগুড়া জেলার বগুড়া সদর, শেরপুর ও শাহজাহানপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নির্মিত ও নির্মাণাধীন বাড়িগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করবে।

এছাড়া বাকি তিনটি টিমের মধ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্প প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে একটি টিম ময়মনসিংহ ও জামালপুর জেলা, প্রকল্পের উপ-প্রকল্প প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে একটি টিম নীলফামারী ও লালমনিরহাট জেলা, সহকারী প্রকল্প পরিচালক বদরুল আলমের নেতৃত্বে একটি টিম পাবনা, মানিকগঞ্জ, নাটোর জেলার বিভিন্ন এলাকার বাড়ি সরেজমিন পরিদর্শনে গেছেন।

পর্যায়ক্রমে অন্যান্য এলাকাগুলোতেও এ পরিদর্শন কার্যক্রম চলমান থাকবে বলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় (পিএমও) সূত্রে জানা গেছে।

আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প পরিচালক মো. মাহবুব হোসেন জানান, যে কোনো পরিস্থিতিতে এ পরিদর্শন কার্যক্রম চলমান থাকবে।

তিনি বলেন, আমাদের কাছে প্রতিটি কেসই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ প্রতিটি বাড়ির সঙ্গে একেকটি পরিবারের স্বপ্ন জড়িত। এজন্যই এ রকম একটি মহামারি পরিস্থিতির মধ্যেও আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পরিদর্শনে নেমেছি।

মো. মাহবুব হোসেন বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্প প্রধানমন্ত্রীর সবচেয়ে বড় মানবিক প্রকল্প। এ প্রকল্পের অনিয়ম বা গাফলতি নিয়ে আমাদের অবস্থান শুরু থেকেই জিরো টলারেন্স। এরই মধ্যে যেসব জায়গা থেকে অভিযোগ এসেছে, সেসব জায়গায় প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিয়েছি। একই সঙ্গে আমরা যেসব বাড়ি নির্মাণ নীতিমালা অনুযায়ী হয়নি, সেসব বাড়ি সংস্কার অথবা পুনর্নির্মাণে যা যা প্রয়োজন সব কিছু করে দেব।

তিনি বলেন, অনেক জায়গায় অতিবৃষ্টি, বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে কিছু কিছু বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা সেসব জায়গায় পুনরায় বাড়ি নির্মাণ অথবা সংস্কার করে দিচ্ছি। তবে এ মানবিক প্রকল্প, প্রধানমন্ত্রীর ড্রিম প্রজেক্টকে বিতর্কিত করতে একটি সংঘবদ্ধ মহল এটা নিয়ে অপপ্রচারে লিপ্ত আছে, যেটি কাম্য নয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওপর আস্থা রাখুন। ভূমিহীন-গৃহহীন সবাইকে বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হবে।

অতিবৃষ্টি, বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয়ণের কিছু বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া নির্মাণে ত্রুটির কারণেও বিভিন্ন এলাকায় বেশ কিছু বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি নির্মাণে ত্রুটির বিষয়টি সামনে আসতেই নড়ে চড়ে বসেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণে অনিয়ম, অবহেলা ও অর্থ আত্মসাৎকারীদের ব্যাপারে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে এগোচ্ছে। অভিযোগ তদন্ত করে অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে সরকার। এরই মধ্যে পাঁচজন সরকারি কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের স্লোগান হলো- ‘আশ্রয়ণের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার’। প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প। এর সঙ্গে আমাদের সবার আবেগ জড়িয়ে আছে। তাই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কোনো ধরনের ক্রটিবিচ্যুতি, অনিয়ম, দুর্নীতি ও শৈথিল্যের ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। অনিয়ম ও অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেলে শাস্তি পেতেই হবে। কাউকেই বিন্দু পরিমাণ ছাড় দেওয়া হবে না।

‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে শেখ হাসিনা মডেল’ বাস্তবায়নে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত সর্বমোট এক লাখ ১৮ হাজার ৩৮০টি পরিবারকে দুই শতাংশ খাস জমিসহ দুই কক্ষ বিশিষ্ট আধা পাকা বাড়ি দেওয়া হয়েছে।

‘বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দেশে দুই লাখ ৯৩ হাজার ৩৬১টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার এবং জমি আছে ঘর নেই অথবা অত্যন্ত জরাজীর্ণ ঘর এ রকম পাঁচ লাখ ৯২ হাজার ২৬১টি পরিবারের তালিকা করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সবাইকে বাড়ি নির্মাণ করে দেবে সরকার।