ছাত্রলীগ পেটানো বরগুনার অতিরিক্ত এসপিকে বরিশালে বদলি

ছাত্রলীগ পেটানো বরগুনার অতিরিক্ত এসপিকে বরিশালে বদলি

বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে কর্মীদের পুলিশের লাঠিপেটা এবং বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর সঙ্গে তর্কাতর্কির ঘটনায় আলোচিত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মহররম আলীকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে যুক্ত করা হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রেঞ্জ ডিআইজি এস এম আক্তারুজ্জামান।
 
তিনি জানান, সার্বিক দিক বিবেচনা করে ও তদন্তের স্বার্থে মহরম আলীকে বরিশালে আমার কার্যালয়ে নিযুক্ত করা হয়েছে।  

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ডিআইজি বলেন, ‘বরগুনার ঘটনায় দেশজুড়ে আলোচনার সৃষ্টি করেছে। ওই ঘটনায় পুলিশের পেশাদারিত্ব কতটা ছিল, ঘটনাস্থলে কী কী হয়েছে তার সব কিছুই তদন্ত করা হবে।

সোমবার দুপুর ১২টার দিকে বঙ্গবন্ধুর ৪৭তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কমপ্লেক্সে তার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে ফেরার সময় শিল্পকলা একাডেমির সামনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ওপর পদবঞ্চিত কয়েকজন হামলা চালায়। এ সময় দুই গ্রুপের নেতাকর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষের মধ্যেই পুলিশ ছাত্রলীগের কর্মীদের বেধড়ক মারধর করে।

এ সময় বরগুনা-১ আসনের এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, বরগুনার পৌর মেয়র কামরুল আহসান মহারাজ, জেলা যুবলীগের সভাপতি রেজাউল করিম এটম উপস্থিত ছিলেন।

জেলা যুবলীগের সভাপতি রেজাউল করিম এটম জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর জেলা শিল্পকলা একাডেমির সামনে বের হন এমপি শম্ভু। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহররম আলীর কাছে লাঠিপেটার কারণ জানতে চান তিনি।

তখন মহররম আলী বলেন, ‘স্যার আমাদের গাড়ি ভেঙেছে ছাত্রলীগ। তাদের আমরা ফুলের টোকাও দিইনি। আমাদের গাড়ি ভাঙল কেন জবাব দিয়ে যেতে হবে।’

এ সময় এমপি বলেন, ‘কী করবেন? আটকে পেটাবেন? আপনারা ওদের ঠ্যাকাননি কেন?’ এর উত্তরে ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘মামলা দেব।’

এ সময় সেখানে উপস্থিত আরেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস এম তারেক রহমান বলেন, ‘স্যার আমরা ঠ্যাকাইতে গেলে বলপ্রয়োগ করতে হবে, সেটি আপনাদের জন্য ভালো হবে না।’

এমপি ও ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে পুলিশের তর্ক-বিতর্কের সময় সেখানে উপস্থিত জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সবুজ মোল্লার বড় ভাই জসীম মোল্লা পুলিশের লাঠিপেটা নিয়ে এমপি শম্ভুর কাছে অভিযোগ করতে থাকেন।

একপর্যায়ে এমপির সামনেই জসীম মোল্লা পুলিশের সঙ্গে তর্কে জড়ালে এএসপি মহররম তাকে ধমক দিয়ে বলেন, ‘গাড়ি ভাঙচুরের অ্যাকশন হবে কিন্তু।’ জবাবে জসীম বলেন, ‘মামলা দেন, মারলেন কেন?’

এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে এমপির সামনেই ডিবি পুলিশ জসীম মোল্লাকে পিটুনির পর আটক করে নিয়ে যেতে চান। এ সময় এমপি ফের বলেন, ‘মেরেছেন তো এবার ছেড়ে দেন।’ পরে পুলিশ জসীম মোল্লাকে ছেড়ে দেয়।

এ ঘটনায় এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বলেন, ‘পুলিশ বলেছিল গাড়ি ভাঙচুরকারীকে তারা চিনতে পেরেছে। আমি বলেছি, যে ভাঙচুর করেছে, তাকে দেখিয়ে দিন। আমি তাকে আপনাদের হাতে সোপর্দ করব। আসলে তাদের (পুলিশের) উদ্দেশ্যই ছিল ছাত্রলীগের ছেলেদের মারবে। আমি তাদের মার ফেরানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু সেখানে এত পুলিশ আসছে, যে কমান্ড শোনার মতো কেউ ছিল না।’

এমপি শম্ভুর করা অভিযোগ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত ডিআইজি বলেন, ‘ঘটনার পর ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। সেখানে কী ঘটেছে ডিআইজি স্যারের নেতৃত্বে আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। এমপি সাহেব মুরব্বি মানুষ। তার সঙ্গে পুলিশের কেউ অশোভন আচরণ করে থাকলে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

এ বিষয়ে জানতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) মহররম আলী ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) এস এম তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তারা কল রিসিভ করেননি। পরে সরকারি নম্বরের হোয়াটসঅ্যাপে খুদেবার্তা পাঠালেও সাড়া মেলেনি।

সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে উপস্থিত পুলিশের ভূমিকার বিষয়টি তদন্তে জেলা পুলিশের উচ্চপদস্থ তিন কর্মকর্তাকে নিয়ে সোমবার রাতে কমিটি গঠন করা হয়।