তেলের দাম স্বাভাবিক হচ্ছে, বাড়ছে চালের

তেলের দাম স্বাভাবিক হচ্ছে, বাড়ছে চালের

দেশের বিভিন্ন মোকামে, পাইকারি ও খুচরা বাজারে কোথাও চালের কোনো সংকট নেই। তবুও বাজারে চালের দাম বাড়ছে। চিনি, ডালসহ প্রায় সব নিত্যপণ্যের দামই বাড়তির দিকে। এ সুযোগে চালের দামও বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এক থেকে দেড় সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দাম সর্বোচ্চ তিন টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

তবে সরকারের নজরদারির কারণে রাজধানীসহ সারা দেশে ভোজ্যতেলের দাম কমে স্বাভাবিক হয়ে আসছে। ইতিমধ্যে দু-একজন মিলমালিক তেল সরবরাহ শুরু করেছেন। তবে এখনো পুরোপুরি সরবরাহ হয়নি। এদিকে আমদানি পর্যায়ে সয়াবিন ও পাম তেলে ভ্যাট কমানোর বিষয়ে গতকাল প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি)। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী পরিশোধিত ও অপরিশোধিত সয়াবিন তেল ও পাম তেল আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত এ সুযোগ অব্যাহত থাকবে।

রাজধানীর পুরান ঢাকার বাবুবাজারের চাল ব্যবসায়ী আবদুর রশিদ জানান, এক সপ্তাহ আগেও প্রতিকেজি মিনিকেট চালের দাম ছিল ৫৮-৬৩ টাকা। গতকাল তা বিক্রি হয়েছে ৬০-৬৫ টাকায়। একইভাবে ৬৩-৭০ টাকার নাজিরশাইল ৬৫-৭২ টাকায়, ৪৪-৪৭ টাকার বিআর-২৮ চাল ৪৫-৪৮ টাকা, ৫৩ টাকার হাসকি নাজির ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে মোটা চালের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। খুচরা বাজারে চাল বিক্রেতারা জানান, বাজারে প্রতি কেজি উন্নতমানের মিনিকেট চালের দাম আগে ছিল ৬৫ টাকা। গতকাল তা ৬৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৬৩-৭২ টাকার নাজিরশাইল ৬৫-৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর হাসকি নাজির ৫০-৫১ টাকায় এবং বিআর-২৮ চাল ৪৮-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা আগে কেজিপ্রতি দেড় থেকে দুই টাকা কম ছিল।

মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে সবকিছুর দাম বাড়ছে, এ কারণে সবাই নিত্যপণ্য কেনা বাড়িয়ে দিচ্ছেন। অনেকে হুজুগেই চালের মজুত করছেন। একজন ক্রেতার মাসে ৫০ কেজি চালের দরকার হলে তিনি ২০০ কেজি কিনে রাখছেন। এভাবে বাজারে চালের দাম বাড়ানো হয়েছে।

চালের মোকামমালিকেরা বলছেন, মিনিকেট ও কাটারিভোগ ছাড়া অন্যান্য চালের দাম স্বাভাবিক রয়েছে। তবে বাজারে সরু চালের চাহিদা বেশি। কেজিপ্রতি সরু ও মোটা চালের ব্যবধান ২২-২৫ টাকা পর্যন্ত। এরপরও সবাই সরু চালই কিনছেন। এসব কারণে সরু চালের দাম বাড়ছে।

নওগাঁ ধান-চাল আড়তদার সমিতির সভাপতি নিরদ বরণ সাহা বলেন, মিনিকেট চালের মৌসুম শেষ পর্যায়ে। আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে বাজারে নতুন মিনিকেট চাল উঠবে। তবে চালের উৎপাদন খরচ যে পর্যায়ে রয়েছে, তাতে নতুন চালের দাম খুব একটা কমবে না।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সরকারি গুদামে চালের মজুত রয়েছে ১৫ লাখ ৭২ হাজার টন, যা বিগত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মজুত। চৈত্র মাসে সরকারি চালের বিশাল এমন মজুত আগে কখনো দেখা যায়নি। সরকার চলতি আমন মৌসুমে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ৮৪ হাজার ৪৭০৯ মেট্রিক টন ধান এবং ৭ লাখ ১২ হাজার ৪ মণ সেদ্ধ চাল সংগ্রহ করেছে। গত মঙ্গলবারের তথ্য অনুযায়ী, সরকারিভাবে চাল আমদানি হয়েছে ৬ লাখ ৫৩ হাজার মেট্রিক টন এবং বেসরকারিভাবে ৩ লাখ ৬ হাজার মেট্রিক টন।

এদিকে পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারের ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা বলেন, বাজারে সরকার-নির্ধারিত দামে তেল বিক্রি শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে একাধিক কোম্পানি ভোজ্যতেল সরবরাহ শুরু করেছে। তবে সবগুলো কোম্পানি সরবরাহ করলে দাম দ্রুতই নিয়ন্ত্রণে আসবে। বর্তমানে সরকার-নির্ধারিত এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৬৮ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৪৩ টাকা এবং পাম তেল ১৩৩ টাকা। যদিও অনেক বাজারেই খোলা পাম তেল লিটারপ্রতি ১৫০-১৫৫ টাকা, এক লিটারের বোতল ১৬৫-১৭০ টাকা, ৫ লিটারের বোতল ৭৮০-৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ ও দাম প্রায় নিয়ন্ত্রণে আসার পেছনে সরকারের নজরদারিকে সাধুবাদ জানিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। সংগঠনের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, এবার সরকার মিলে তদারকি করায় বাজারে ইতিবাচক সাড়া পড়ছে। তবে চালের দাম বাড়ার পেছনে কিছু ভোক্তার অস্বাভাবিক ক্রয়ও দায়ী। অনেকের ক্রয়ক্ষমতাও বেড়েছে। তবে চালের বাজারে কেউ যাতে অনৈতিক সুবিধা নিতে না পারে, সেদিকে সরকারের নজরদারি বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।