দেড় বছরের কাজ শেষ হয়নি তিন বছরেও

দেড় বছরের কাজ শেষ হয়নি তিন বছরেও

সিলেটের দক্ষিণ সুরমার কদমতলী এলাকায় ১১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে দেশসেরা আধুনিক বাস টার্মিনাল। সিলেট থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াতকারী যাত্রীদের আধুনিক সেবা নিশ্চিতে সাড়ে সাত একর জমির ওপর টার্মিনালটি করছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)।

সিসিক সূত্র জানিয়েছে, টার্মিনালে রয়েছে বহির্গমন ও আগমনের দুইটি পৃথক ভবন, একটি প্রশাসনিক ভবন ও বিকল গাড়ি মেরামতের জন্য একটি ওয়ার্কশপ শেড। বাস্তবায়ন হলে এটি হবে দেশসেরা অন্যতম আধুনিক বাস টার্মিনাল।

টার্মিনালের আধুনিকায়ন প্রক্রিয়ায় হচ্ছে ডাম্পিং গ্রাউন্ড নির্মাণ আর টার্মিনালের অবকাঠামোগত উন্নয়ন। ডাম্পিং গ্রাউন্ডের জন্য ৫২ কোটি টাকা এবং টার্মিনালের অবকাঠামোগত উন্নয়নে ৬৫ কোটি টাকা ব্যয় হবে।

তবে কাজ সময়মতো শেষ না হওয়ায় বাসস্ট্যান্ড এলাকায় চরম বিশঙ্খলা বিরাজ করছে। বিশাল সড়কের পুরোটা জুড়েই এখন শত শত গাড়ি। গাড়ির কারণে সড়ক দিয়ে যান চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজটের।

পরিবহণসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাস টার্মিনাল নির্মাণে দীর্ঘসূত্রতার কারণে সড়কে গাড়ি রাখতে হচ্ছে। যথাসময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় অনেক লোকসান গুনতে হচ্ছে। যথাসময়ে বাস ছাড়তে ও প্রবেশ করতে পারছে না। এতে অনেক সময় নষ্ট হচ্ছে। যাত্রীরাও ভোগান্তিতে পড়ছেন।

সরেজমিনে কদমতলী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, টার্মিনালের নির্মাণকাজ চলায় ভেতরে গাড়ি রাখার সুযোগ নেই। চারদিকে শেড দিয়ে ঘিরে নির্মাণকাজ চলছে। সব গাড়ি টার্মিনালের বাইরে সড়কেই পার্কিং করা। কিনব্রিজ পার হয়ে দক্ষিণ সুরমার হুমায়ুন রশীদ চত্বর পর্যন্ত পুরো সড়ক যেন বাস টার্মিনাল। কেবল সড়ক নয়, আশপাশের বিপণিবিতানগুলোর সামনে, রেলস্টেশনের প্রবেশপথ ও সামনের অংশজুড়েও পার্কিং করে রাখা হয়েছে শত শত বাস।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতি সিলেটের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল কবির পলাশ বলেন, ‘করোনার কারণে দীর্ঘদিন টার্মিনালের কাজ বন্ধ ছিল। এ কারণে যথাসময়ে কাজ শেষ হয়নি। টার্মিনালের আধুনিকায়ন চলায় সড়কেই গাড়ি রাখতে হয়। যথাসময়ে কাজ না হওয়ায় আমাদের অনেক লোকসান গুনতে হচ্ছে। দীর্ঘ যানজটের কারণে যথাসময়ে বাস ছেড়ে যেতে ও প্রবেশ করতে পারে না। এতে অনেক সময় নষ্ট হয়।’

বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে সিলেট সিটি করপোরেশন সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল আধুনিকায়নের কার্যাদেশ ২০১৮ সালে হলেও কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালে। দেড় বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও কাজ শেষ করতে পারেনি ঢাকার নির্মাণ সংস্থা ‘ঢালি কনস্ট্রাকশন ফার্ম’।

তবে এরই মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে দাবি করে সিসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী ও টার্মিনাল নির্মাণকাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলী আকবর বলেন, ‘সিলেটের সঙ্গে সারাদেশের সড়কপথে যোগাযোগের একমাত্র কেন্দ্রবিন্দু সবচেয়ে বড় এই বাস টার্মিনাল। এটি বিমানবন্দরের আদলে তৈরি করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মানের বাস টার্মিনালের সব সুযোগসুবিধা থাকছে এই টার্মিনালে। পর্যটন নগর সিলেটে আগত দর্শনার্থীদের সুযোগসুবিধা নিশ্চিত হবে। টার্মিনালটি ইজারাভিত্তিক পরিচালিত হলেও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকবে সিলেট সিটি করপোরেশন।’

যেসব সুবিধা থাকবে
টার্মিনাল থেকে একই সময়ে ৮০ থেকে ৯০টি বাস আসা-যাওয়া করতে পারবে। ইংরেজি বর্ণমালার ‘এইচ’ বর্ণের আদলে তৈরি টার্মিনালের দুই তলাবিশিষ্ট দুটি মূল ভবন। বহির্গমন ও আগমনের জন্য দুই তলাবিশিষ্ট ভবনে থাকছে অত্যাধুনিক সুযোগসুবিধা।

টার্মিনালে যাত্রীদের জন্য থাকবে বিশ্রাম কক্ষ, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, সুপেয় পানির ব্যবস্থা, নামাজের কক্ষ, প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যবস্থা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পৃথক কক্ষ। প্রত্যেক রুটের জন্য থাকবে আলাদা পার্কিং জোন, প্রবেশ ও বের হওয়ার রাস্তা।

৫৮০০ বর্গ মিটার জায়গা ওপর নির্মিত বহির্গমন ভবনের নিচ তলায় থাকছে ৩০টি টিকিট কাউন্টার, পাঁচটি ইনফরমেশন বুথ, দ্বিতীয় তলায় ৯৭০টি আসনসংবলিত ওয়েটিং স্পেস। এ ছাড়া ভিআইপিদের জন্য ৩০টি আসন রয়েছে এ ভবনে। ১৫০ সিটের রেস্টুরেন্ট ও ৯০ সিটের ফুডকোর্ট থাকছে বহির্গমন ভবনে।

নারী-পুরুষদের জন্য আলাদা ছয়টি টয়লেট জোনে ৪৮টি টয়লেট রয়েছে। ১৪ আসনবিশিষ্ট দুটি ব্রেস্টফিডিং কর্নার জোন, অসুস্থ রোগীদের জন্য প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা কর্নার, যাত্রীদের মালামাল রাখার জন্য সুরক্ষিত ১৩টি লকার জোন থাকছে এই ভবনে।

দুই হাজার বর্গ মিটারের আগমন ভবনে থাকছে আগত যাত্রীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা। যাত্রীদের বসার জন্য ৫১০ সিটের ওয়েটিং স্পেস।

ছয় তলাবিশিষ্ট প্রশাসনিক ভবনের তিনতলা পর্যন্ত কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এতে সিসিটিভি মনিটরিং রুম, ট্যুরিজম করপোরেশন অফিস, ট্যুরিজম পুলিশ সেন্টার, মেডিকেল টিম এবং প্রশাসনিক দপ্তর। এ ছাড়া, ৭৫০ বর্গ মিটার জায়গার ওপর নির্মিত ওয়েলফেয়ার ভবনে থাকছে বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়ন সমিতির জন্য বিশেষ সুযোগসুবিধা।

২৫০ আসনের মাল্টিপারপাস সভাকক্ষ, চালকদের বিশ্রামের জন্য ২৪ বেডের বিশ্রামাগার। ওয়ার্কশপ স্পেস, বিদ্যুৎ সাবস্টেশন, অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে ভবনটির নিচ তলায়।