নিরাপদ মাতৃত্ব: সিলেটে এক বছরে অস্ত্রোপচারে জন্ম নিয়েছে ১৪ হাজার শিশু

নিরাপদ মাতৃত্ব: সিলেটে এক বছরে অস্ত্রোপচারে জন্ম নিয়েছে ১৪ হাজার শিশু

সিলেটে গত এক বছরে ২২ হাজার ৫৮৬ জন নারী সন্তান প্রসব করেছেন। এর মধ্যে ৩৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ হয়েছে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে। যদিও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে তা ১০ থেকে ১৫ শতাংশের মধ্যে থাকার কথা। ২০২২ সালের এই চিত্র সিলেট জেলায়। এমন পেক্ষাপটে আজ (২৮ মে) সারাদেশের মতো সিলেট পালিত হচ্ছে নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস। 

নিরাপদ মাতৃস্বাস্থ্য, মাতৃমৃত্যু হার কমানো ও নবজাতকের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যেই প্রতি বছর ২৮ মে নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস পালিত হয়ে আসছে। 

দিসবটিতে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রসূতি বিভাগে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। পাশাপাশি সিলেটের সব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর বহির্বিভাগে গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েদের নিরাপদ মাতৃত্ব এবং মাতৃমৃত্যুর হার কমিয়ে আনার জন্য পরামর্শ দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে।

সিভিল সার্জন কার্যালয় জানিয়েছে, ২০২২ সালে জেলায় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দিয়েছেন ১৪ হাজার ৮০ জন এবং স্বাভাবিক প্রসব করেছেন ৮ হাজার ৫০৬ জন। সরকারি হাসপাতালগুলোর তুলনায় বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে স্বাভাবিক প্রসবের হার কম। সরকারি হাসপাতালে প্রায় ৮০ শতাংশ স্বাভাবিকব এবং ২০ শতাংশ অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রসব হয়ে থাকে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ঠিক এর উল্টো চিত্র দেখা যায়।

সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক সৌমিত্র চক্রবর্তী বলেন, এ হাসপাতালে স্বাভাবিক প্রসবের তুলনায় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান প্রসবের হার বেশি। এর মূল কারণ, হাসপাতালে আসা অধিকাংশ নারীকে বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা বেসরকারি ক্লিনিক থেকে রেফার্ড করা হয়; অর্থাৎ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আসেন তাঁরা। সে ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার করতে হয় বেশি। গত বছর সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা গেছেন ৫৩ জন নারী। নবজাতক (১ থেকে ২৮ দিন বয়স) মারা গেছে ১০৫ জন।

চিকিৎসকেরা বলছেন, একজন নারীকে গর্ভাবস্থায় (প্রসবের আগপর্যন্ত) অবস্থায় চারবার চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হয়। এর মধ্যে গর্ভকালীন এক থেকে দুই মাসের মধ্যে একবার, চতুর্থ মাসে একবার, ষষ্ঠ ও অষ্টম মাসে আরও দুইবার। ২০২২ সালের সরকারি হিসাব অনুযায়ী, গর্ভকালীন অবস্থায় একবার হলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েছেন ২১ হাজার ২৪ জন। নিয়ম অনুযায়ী চারবার চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েছেন ৫ হাজার ৫০০ জন। আগের থেকে এ হার বাড়ছে।

সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন জন্মেজয় দত্ত বলেন, সিলেটে ১১টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মধ্যে বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অস্ত্রোপচারের সন্তান প্রসবের হার বেশি। ঘরে সন্তান প্রসবের হার কমিয়ে শূন্য শতাংশে নামিয়ে আনতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। নারীরা যেন এলাকার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সন্তান প্রসব করতে পারেন, সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ সে লক্ষ্যে কাজ করছে। এমন উদ্যোগের ফলে মাতৃমৃত্যু ও নবজাতকের মৃত্যুর হার কমে আসছে।

তিনি বলেন, প্রথম সন্তান জন্মের সময় অস্ত্রোপচার হলে দ্বিতীয় ও তৃতীয় সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক সন্তান প্রসবের সুযোগ কমে যাবে। আর বেসরকারি হাসপাতালে ব্যবসায়িক মনোবৃত্তির সেখানে অস্ত্রোপচারের সংখ্যা বেশি।