নিহত বিএনপি নেতা কামালের শরীরে ২৫ আঘাত

নিহত বিএনপি নেতা কামালের শরীরে ২৫ আঘাত

সিলেট নগরের আম্বরখানা বড়বাজার এলাকায় ছুরিকাঘাতে নিহত বিএনপি নেতা আ ফ ম কামালের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ।

সোমবার বেলা সোয়া ২টার দিকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

আ ফ ম কামালের সুরতহাল প্রতিবেদনে শরীরের বুকে, হাতে ও পায়ে ২৫টি আঘাতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে বুকের বাম পাশে একটি আঘাত গুরুতর।

সন্ধ্যায় এশার নামাজের পর তাকে গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নে আলীনগর গ্রামে দাফন করা হয়।

বিকেলে নগরীতে জানাযার নামাজের উদ্যোগ নিলেও ময়নাতদন্তে বিলম্বসহ পুলিশের অসহযোগিতার কারণে তা বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা।

এর আগে হাসপাতালের মর্চ্যুয়ারিতে ১টার দিকে কামালের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন উপ পরিদর্শক (এসআই) ইব্রাহিম। তিনি জানান, অনেক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ মুহুর্তে বলা যাবে না।

তবে ময়নাতদন্তকারী সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. শামসুল ইসলাম জানিয়েছেন, ২৫টি ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই মারা গেছেন আফম কামাল।

তিনি আরও জানান, বাম হাত, বুকের বাম পাশ, বামপাশের কাধের নিচ, পায়ের উরুতে এসব আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

লাশ গ্রহণকালে কামালের বড় ভাই মইনুল হক বলেন, আমার ভাইকে আওয়ামী লীগের লোকজনই নির্মমভাবে খুন করেছে। তার শরীর ক্ষতবিক্ষত। তিনি ভাই হত্যার বিচার চেয়ে জড়িতদের গ্রেপ্তার দাবি করেন। এ সময় স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।

আ ফ ম কামালের হত্যা নিয়ে পরস্পর বিরোধেী বক্তব্য দিয়েছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতারা।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী জানিয়েছেন, কামালকে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরাই খুন করে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তিনদিনের শোক প্রকাশ করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তার দাফন শেষে আমরা বসে কর্মসূচি ঘোষনা দেব। এরমধ্যে খুনীদের গ্রেপ্তার না করলে আন্দোলন শুরু হবে।

নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন বলেন, বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিরোধে কামাল খুন হন। খুনের সাথে আমাদের কোনো নেতাকর্মী জড়িত নয়। হত্যাকাণ্ডের পর বিএনপির নেতাকর্মীরা আমাদের প্রতিনিধি সভার টানানো বিভিন্ন পোস্টার, ব্যানার ও তোরণ খুলে ফেলে। জাতির জনক ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ছিড়ে ফেলে। এ বিষয়ে আমার বৈঠক করে করণীয় নির্ধারণ করব।

রোববার রাতে সাড়ে ৮টার দিকে আম্বরখানা বড় বাজার এলাকায় নিজ প্রাইভেট কারে বসাবস্থায় জেলা বিএনপির সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ও সিলেট ল’ কলেজের সাবেক জিএস আ ফ ম কামালকে দুর্বৃত্তরা ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা প্রথমে সেখানে কি ঘটছে বুঝতে পারেন নি। তাদের ধারণা ছিল- একটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দিয়েছে প্রাইভেট কার। কিন্তু কারের ভেতর বসা কামালকে যে কুপানো হয়েছে তা প্রত্যক্ষদর্শীরা আঁচ করতে পারেন নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় মাহবুর রহমান নামের এক ব্যাক্তি। তিনি জানান, দুজন লোক কামালকে একটি সিএনজি অটোরিকশা করে হাসপাতালে নিয়ে যান। রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে গেল কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ওই দিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিক্ষোভ করেন নেতাকর্মীরা। মধ্যরাতে রিকাবিবাজারের কবি নজরুল অডিটোরিয়ামের সামনে লাগানো আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভার ব্যানার ও পোস্টার তারা ছিড়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। বিভিন্ন স্থানে ভাংচুরও করে। এর প্রতিবাদে তাৎক্ষনিক মিছিল করে ছাত্রলীগ। মিছিল থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া করা হয়।

ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। টিভির ফুটেজ দেখে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া যুবকদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ উল্লেখ করে এসএমপির এয়ারপোর্ট থানার ওসি মাইনুল জাকির জানিয়েছেন, হত্যাকাণ্ডেরর ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি। পুলিশ কারণ অনুসন্ধানে কাজ করছে।

নগরীর সুবিদবাজার এলাকার বাসিন্দা আফম কামালের গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার আলীনগর গ্রামে। নব্বইয়ের দশকে ছাতকের গোবিন্দগঞ্জ আব্দুল হক ডিগ্রি কলেজ থেকে ছাত্রদলের রাজনীতি থেকে পরবর্তীতে সিলেটের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। গত শুক্রবার তিনি তার ফেসবুক আইডিতে সর্বশেষ একটি পোস্ট করেন। এতে সিলেট বিএনপির সমাবেশকে সামনে রেখে তিনি উল্লেখ করেন, ‘যেসব ভাই অতীতে আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে মামলা মোকদ্দমার শিকার হয়েছেন, বর্তমানে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা না থাকলেও সতর্ক থাকবেন। যাদের পদপদবী আছে তারাও সর্তক থাকবেন। সিলেটের বাইরের নেতা কর্মীদের আমরা ১০০ ভাগ গ্যারান্টি দিয়ে আশ্বাস্থ করতে চাই,আপনারা নির্দ্বিধায় চলে আসতে পারেন, কোন সমস্যা হবে না। সমস্যা হলে যোগাযোগ করবেন সাথে সাথে আমরা আপনাদের পাশে গিয়ে দাঁড়াবো ইনশা আল্লাহ’।

তিন দিনের কর্মসূচি

বিএনপি নেতা আফম কামালের হত্যাকাণ্ডেরর ঘটনায় জেলা ও মহানগর বিএনপি তার দাফন করা পর্যন্ত সকল কর্মসূচি স্থগিত করেছে। পাশাপাশি তিন দিনের শোক কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে কালো ব্যাজ ধারনের মধ্য দিয়ে তিন দিনের শোক কর্মসূচি শুরু হবে।

সোমবার বিকালে জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, মহানগর বিএনপির আহবায়ক আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকি, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী ও মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মিফতাহ সিদ্দিকী এক বিবৃতিতে হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছেন। তারা বলেন, ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসীরা জেলা বিএনপির সাবেক স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক আ ফ ম কামালকে হত্যা করেছে। অবিলম্বে ঘটনার সাথে জড়িত সন্ত্রাসীদের ও নেপথ্য গডফাদারদের গ্রেপ্তার দাবি করেন তারা।