পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসছেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসছেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী

বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে আগামী রোববার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বর্তমান আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে চীনের আগ্রহেই এ বৈঠক হচ্ছে বলে উভয় পক্ষের কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে। বৈঠকে যোগ দিতে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই আগামী শনিবার দুই দিনের সরকারি সফরে ঢাকায় আসবেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন কম্বোডিয়ায় আসিয়ানের মন্ত্রী পর্যায়ের একটি বৈঠক শেষে একই দিন রাতে ফিরবেন। সে কারণে শনিবারই বৈঠক আয়োজন সম্ভব হবে না বলে বাংলাদেশ চীনকে জানিয়েছে।

বর্তমান আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফর গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট সাবেক রাষ্ট্রদূত হ‌ুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, আলোচনার জন্য বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মধ্যে রয়েছে কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে চীনের উদ্যোগে গঠিত ত্রিপক্ষীয় ব্যবস্থা ও তাদের প্রভাব কাজে লাগানো। ওয়াং ই সম্প্রতি মিয়ানমার সফর করেছেন। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বিচার আদালত রোহিঙ্গা গণহত্যা বিষয়ে মামলা চালিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছে। এতে মিয়ানমারের সামরিক সরকারের ওপর আসিয়ানের আন্তর্জাতিক মহলেও কিছু চাপ তৈরি হয়েছে। এ কারণে এই সফর বাংলাদেশের জন্য একটি সুযোগও বটে।

সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলগত জোট (আইপিএস) ও ইন্দো-প্যাসিফিক অর্থনৈতিক জোট (আইপিইএফ) কার্যকর করার ক্ষেত্রে আমেরিকা, ভারত ও জাপানের তৎপরতাও এখন চোখে পড়ার মতো। এ ছাড়া তাইওয়ানকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নাড়াচাড়া বাড়তে থাকাও চীনকে চিন্তিত করে তুলেছে। এই প্রেক্ষাপটে অর্থনৈতিক উদ্যোগের বাইরে কোনো কৌশলগত ও সামরিক জোটে বাংলাদেশ যোগ দেবে না বললেও চীন এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে চায়। আগামী সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বৈঠক আছে। জাতিসংঘে তাইওয়ান প্রসঙ্গ এলে বাংলাদেশের সমর্থন চীনের দরকার হবে। শ্রীলঙ্কায় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দুরবস্থার প্রেক্ষাপটে ঋণের ফাঁদ নিয়ে যে কথা রটেছে, বাংলাদেশসহ বন্ধুরাষ্ট্রকে সেসব বিষয়ে চীন আশ্বস্ত রাখতেও চাইবে বলে মনে করেন তিনি।

এ ছাড়া ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা, রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বাণিজ্য-সংকট, বৈশ্বিক খাদ্য, জ্বালানি ও বিভিন্ন পণ্যের সরবরাহ সংকট এবং চীনের দুই উদ্যোগ গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ ও গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ নিয়েও ওয়াং ই কথা বলতে চাইবেন বলে ঢাকার কূটনীতিকেরা মনে করছেন। তাঁরা জানান, চীন থেকে বাংলাদেশে শিল্প-কারখানাগুলোর কাঁচামালের সরবরাহ ঠিক রাখা এবং চীনের অর্থায়নে বাংলাদেশে গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের নির্ঝঞ্ঝাট বাস্তবায়নও বাংলাদেশের অগ্রাধিকারের মধ্যে রয়েছে।

২০২১ সালের এপ্রিলে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল উই ফেঙ্ঘির ঢাকা সফর করেছিলেন। সে সময় তিনি এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণাধীন সামরিক জোটে যোগ না দিতে বাংলাদেশকে সতর্ক করেছিলেন।