বাঁধের দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ না করতে সাংবাদিকদের উপঢৌকন পাউবো কর্তার

বাঁধের দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ না করতে সাংবাদিকদের উপঢৌকন পাউবো কর্তার

চলতি অর্থ বছরের সুনামগঞ্জের হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ ও অনিয়ম দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ না করতে সাংবাদিকদের উপঢৌকন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদের বিরুদ্ধে। এ সময় তিনি বেসরকারি টেলিভিশন ও পত্রিকার প্রায় ১৮ জন সাংবাদিককে ১০ হাজার করে উপঢৌকনের টাকা বিতরণ করেন।

গতকাল শনিবার রাত ৮ টা থেকে ১০ ঘটিকা পর্যন্ত নিজের কার্যালয়ে বসেই এ সকল টাকা বিতরণ করেন নির্বাহী প্রকৌশলী। এ সময় প্রতিবেদকের কাছে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মকর্তাসহ উপঢৌকন টাকা পাওয়া একজন সাংবাদিক।

জানা যায়, চলতি বছরের হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করে বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম, এতে করে বিপাকে পড়ে যায় পানি উন্নয়ন বোর্ড, এছাড়া গেল ১১ ফেব্রুয়ারি হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের অনিয়মের জন্য শাল্লা উপজেলার ইউএনওসহ পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং পিআইসির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করে বসে হাওর বাঁচাও আন্দোলন এবং ঘটনাটি খুব আলোড়ন সৃষ্টি করায় সংবাদ প্রকাশ করে বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো। তারই প্রেক্ষিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে আর সংবাদ প্রকাশ না করতে গ্রাম-গঞ্জে বেশ কয়েকজন সাংবাদিককে টাকা দিয়ে নিজের করে নেন নির্বাহী প্রকৌশলী।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জানান, শনিবার রাতে হঠাৎ করেই আমাদের অফিসের একে একে সাংবাদিকদের ভিড় লেগে যায়, সবার মুখে শুনতে পাই আমাদের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার স্যার নাকি সব সাংবাদিককে ঈদের বোনাস দিচ্ছে ১০ হাজার টাকা করে, আপনিও আসেন আসলে পাবেন।

দৈনিক কালের কণ্ঠের সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি শামস শামীম বলেন, হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজের অনিয়ম দুর্নীতি তুলে না ধরতে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার আমাকে ফোন দিয়ে বলেন অফিসে আসেন আপনার জন্য সম্মানী আছে, তখন আমি সাফ নিষেধ দিয়ে দেই আমি এসবে কোনদিন যাব না টাকাও নিব না।

দৈনিক বিজনেস বাংলাদেশের প্রতিনিধি দিলাল আহমদ বলেন, খবর পাই পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী ঈদ বোনাস দিচ্ছেন সেই খবর সংগ্রহ করতে গেলে দেখি উনি অফিস থেকে চলে গিয়েছেন এরপর থেকে একাধিকবার উনাকে ফোন করা  হলেও উনি আমারে ফোন ধরেননি, তাহলে প্রশ্ন থেকেই যায় উনি কোন এখতিয়ারে সরকারি টাকাগুলো নিয়ে এমন খেলানেলা করলেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী-২ মো. শামছুদ্দোহা বলেন, হ্যাঁ সাংবাদিকরা এসেছিলেন আমাদের অফিসে তবে আমার রুমে কেউ আসেনি এবং তারা উপর তলায় গিয়েছে কিন্তু কেন কি কারণে গিয়ে সেটা জানি না।

এদিকে এ ঘটনার ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদারকে ফোন দেয়া হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি পরবর্তীতে তার ব্যবহার করা সরকারি নাম্বারটি বন্ধ করে দেন, এছাড়া তার বাসভবন পানি উন্নয়ন বোর্ডের রেস্ট হাউস সেখানে গেলেও তিনি সাংবাদিক আসার খবর পেলে গাড়ি নিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যান।

এ ব্যাপারে সিলেট বিভাগীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিসের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী খুশী মোহন সরকার বলেন, আমি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নই, তবে খোঁজ নিয়ে জানতে পারব এরকম কাজ করে থাকলে তাকে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হবে এবং সে সরকারি ফোন নাম্বার চাইলেই বন্ধ করে রাখতে পারবে না সেটির অধিকার আমাদের কারোর নেই এটিও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।