বিএনপির সমাবেশ ঘিরে উত্তপ্ত সিলেট

বিএনপির সমাবেশ ঘিরে উত্তপ্ত সিলেট

সমাবেশের আগে সরকারদলীয় নেতা-কর্মী ও পুলিশের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ করেছে বিএনপি, তবে অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগ বলেছে, বিএনপির নেতা-কর্মীরাই তাদের কর্মসূচিতে হামলা চালিয়েছে। সিলেটে আগামী শনিবার অনুষ্ঠেয় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনীতি।

সমাবেশ সফলে সিলেটজুড়ে ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছে বিএনপি। গত কয়েক দিনে এ কার্যক্রম চলাকালে একাধিক স্থানে হামলা ও সংঘাত হয়েছে। সরকারদলীয় নেতা-কর্মী ও পুলিশের বিরুদ্ধে এসব হামলার অভিযোগ করেছে বিএনপি, তবে অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগ বলেছে, বিএনপির নেতা-কর্মীরাই তাদের কর্মসূচিতে হামলা চালিয়েছে।

বিএনপির নেতারা শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, সমাবেশের আগে গণগ্রেপ্তার চালাতে পারে পুলিশ। এ কারণে তাদের অনেকে রাতে বাসায় থাকছেন না। আরও হামলার ঘটনা ঘটতে পারে বলেও আশঙ্কা তাদের। অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কায় রয়েছে পুলিশও। তাই শুক্রবার থেকে সিলেটে শুরু হতে যাওয়া দুই দিনব্যাপী ইজতেমা পিছিয়ে নিতে অনুরোধ করেছে মহানগর পুলিশ।

সিলেটের ওসমানীনগরে মঙ্গলবার বিকেলে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও দলটির নিখোঁজ নেতা ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনার গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া যায়। লুনার অভিযোগ, গণসমাবেশের প্রচারপত্র বিলিকালে পুলিশের উপস্থিতিতে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালিয়ে তার গাড়ি ভাঙচুর করেন। ওই সময় পুলিশ উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ফয়সল আহমদ মিলন ও উমরপুর ইউনিয়ন বিএনপির নেতা নুরুল ইসলামকে আটক করে বলেও জানান লুনা।

এমন অভিযোগ অস্বীকার করে ওসমানীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাবেদ আহমদ আম্বিয়া পাল্টা দাবি করেন, যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী চলাকালে বিএনপির নেতা-কর্মীরা হামলা চালিয়েছেন।

একই দিনে সিলেটের বিয়ানীবাজারেও বিএনপির প্রচার মিছিল চলাকালে ধাওয়া দেয় ছাত্রলীগ। বিয়ানীবাজারের দক্ষিণবাজারে সমাবেশ সফলের আহ্বানে ছাত্রদল মিছিল বের করলে তাদের ধাওয়া করা হয়। ধাওয়া খেয়ে ছাত্রদল ও বিএনপি নেতারা অন্যদিকে সরে যান।

ধাওয়ার বিষয়ে বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য কাওছার আহমদ বলেন, ‘ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা উসকানিমূলক স্লোগান দিয়ে এখানকার পরিস্থিতি অশান্ত করার চেষ্টা করেছিল। ছাত্রলীগ সেটি প্রতিহত করেছে।’

এর আগে গত সোমবার সিলেটের কানাইঘাট, রোববার গোলাপগঞ্জ এবং মৌলভীবাজারে প্রচারপত্র বিলিকালে পুলিশ বাধা দেয় বলে অভিযোগ করেন বিএনপি নেতারা।

সিলেট জেলা বিএনপির সভপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপির পক্ষে গণজোয়ার দেখে সরকারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তাই সমাবেশের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা ততই বেপোরোয়া হয়ে উঠেছে। ‘তারা আমাদের প্রচার কার্যক্রমে বাধা দিচ্ছে; হামলা চালাচ্ছে, তবে কোনো বাধাই ১৯ নভেম্বর সিলেটে সমাবেশ ঠেকাতে পারবে না।’

গণসমাবেশের আগে পুলিশ সিলেট বিভাগের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি নেতাদের ধরপাকড় করছে বলে অভিযোগ দলটির নেতাদের, তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশ বলছে, আগে থেকে মামলা থাকা ও পুলিশের কাজে বাধা দেয়ায় কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। সমাবেশকে কেন্দ্র করে কাউকেই ধরা হয়নি।

সিলেট জেলা বিএনপি সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার বিয়ানীবাজার উপজেলায় একজন, কানাইঘাট উপজেলায় একজন এবং ওসমানীনগর উপজেলায় দুই নেতাকে আটক করেছে পুলিশ।

এর আগে সোমবার ভোররাতে হবিগঞ্জে বিএনপির তিন নেতাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার তিনজন হলেন হবিগঞ্জ সদর উপজেলার ৫ নম্বর গুপায়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হাফিজুর রহমান খান, একই ইউনিয়নের সাবেক আহ্বায়ক মো.শাহিন মিয়া ও সহসভাপতি আব্দুল হামিদ।

হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক জি কে গউছ বলেন, ‘সমাবেশ সফলে বিএনপির প্রচার কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করতেই পুলিশ আমাদের তিন নেতাকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গেছে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা ছিল না।’

হবিগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মর্তুজা জানান, আগের একটি ভাঙচুর মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এর আগে রোববার মৌলভীবাজার থেকে লিফলেট বিতরণকালে পুলিশকে মারধরের অভিযোগে জেলা ছাত্রদলের সভাপতিসহ বিএনপির পাঁচ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই দিন দুপুরে শহরের চৌমুহনী এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

পরদিন দায়িত্ব পালনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অভিযোগে বিএনপির ১২ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামি করে মামলা করে পুলিশ।

মৌলভীবাজার সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মশিউর রহমান বলেন, বিএনপির নেতা-কর্মীরা লিফলেট বিতরণকালে পুলিশকে মারধর করে। মারধরের ঘটনায় কয়েকজন পুলিশ সদস্যও আহত হন। এ কারণেই মামলা ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বিনা কারণে পুলিশ বিএনপি নেতা-কর্মীদের ধরপাকড় করছে অভিযোগ করে সিলেট মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব মিফতাহ সিদ্দিকী বলেন, ‘কেবল সমাবেশকে বাধাগ্রস্ত করা ও নেতা-কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক ঢুকিয়ে দিতেই এমনটি করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের সঙ্গে পুলিশও আমাদের ওপর হামলা চালাচ্ছে; নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করছে। মানুষ ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে। তারা ভয়কে জয় করে নিয়েছে। আর কোনো বাধা দিয়ে কাজ হবে না।’

এ বিষয়ে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, ‘বিএনপির কাজই হচ্ছে মিথ্যাচার। মিথ্যা কথা বলে তারা মানুষকে উসকে দিতে চায়।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বা অঙ্গসংগঠনের কেউ কোথাও তাদের ওপর হামলা চালায়নি; তারাই বরং হামলা চালাচ্ছে। এই নগরীতেই তারা মিছিল করে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাঙচুর করেছে, তবু আমাদের নেতা-কর্মীরা সহনশীলতার পরিচয় দিচ্ছে। তারা নির্বিঘ্নে তাদের কার্যক্রম চালাতে পারছে।’

পুলিশের সিলেট রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘পুলিশ নিজে আক্রান্ত না হলে বা সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ না পেলে তাদের বাধা দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। বিএনপি নির্বিঘ্নে কর্মসূচি পালন করছে। বিনা কারণে কাউকে আটকও করা হয়নি।’