মানুষ যেন উন্নয়নের কথা ভুলে না যায়, মনে করাতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

মানুষ যেন উন্নয়নের কথা ভুলে না যায়, মনে করাতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

উন্নয়নের কথাগুলো মানুষের কাছে তুলে ধরতে দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি  বলেছেন, ‘উন্নয়নের কথাগুলো মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে। প্রতিটি অঞ্চলে গিয়ে মানুষের কাছে বারবার বলতে হবে। কে কী বলল, সেদিকে কর্ণপাত করার কোনো দরকার নেই। আমরা কী করেছি, তা মানুষের কাছে তুলে ধরতে পারলে সেটাই হবে আসল জবাব।’

 এ প্রসঙ্গে তিনি স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘কে কী বলল সেদিকে না যেয়ে আমরা মানুষের জন্য যে উন্নয়ন করেছি, সেই উন্নয়নের কথাগুলো একেবারে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। বারবার বলতে হবে। এদিকে দৃষ্টি দিতে হবে এবং এই কাজটা করতে হবে।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘ষড়ঋতুর দেশ আমাদের। দুই মাস পরপর ঋতু বদলায়, মানুষের মনও বদলায় এবং ভুলেও যায়। কাজেই দুই মাস পর ভুলে যেন না যায়, সে জন্য আমরা কী কাজ করেছি মানুষের কাছে বারবার সেটা বলতে হবে, বোঝাতে হবে। কারণ, একটা শ্রেণি আছে, যারা মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চায়। এই জ্ঞানপাপীদের কথা শুনে অজ্ঞান হয়ে কেউ যেন বিভ্রান্ত না হয়।’

আজ বুধবার বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। তিনি তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।

আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ ১৯৯৪ সালের ২৭ জুলাই প্রতিষ্ঠা করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্র এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। মা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী জয়ের জন্য সবার দোয়া কামনা করেন।

প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগ যেভাবে মানুষের সেবায় নিয়োজিত রয়েছে, সেভাবেই কাজ করে যাবে এবং সংগঠনকে সুসংগঠিত করে শক্তিশালী করার পাশাপাশি দুঃসময়ে যেভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে, তা অব্যাহত রাখবে। একটি সুশৃঙ্খল সংগঠন হিসেবে জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মাণে আর্তমানবতার সেবায় নিজেদের নিয়োজিত রাখবে এবং নিবেদিতপ্রাণ হয়েই রাজনীতি করবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে বিএনপি নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ে সমালোচনা করে কিন্তু দেশের নির্বাচনব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পর থেকে। তিনি বলেন, ‘জনগণের ভোট যে চুরি করে, জনগণ তাকে মেনে নেয় না, এটা প্রমাণিত সত্য। ৩০ মার্চ গণ–আন্দোলনের মুখে খালেদা জিয়া বাধ্য হয়েছিল পদত্যাগ করতে। সে কথাটা বোধ হয় তারা (বিএনপি) ভুলে গেছে।’

এ সময় ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের এক পদে একাধিক মনোনয়ন প্রদানের মাধ্যমে মনোনয়ন–বাণিজ্যের প্রসঙ্গও টেনে আনেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আজ নির্বাচনব্যবস্থায় যতটুকু সংস্কার, সেটা আমাদেরই প্রস্তাব অনুযায়ী হয়েছে। স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ছবিসহ ভোটার তালিকা, ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটারকে বাদ দেওয়া—এর সবই করা হয়েছে। বিএনপি করেছে ভুয়া ভোটার, আমরা করেছি ভুয়া ভোটারবিহীন “স্বচ্ছ ভোটার তালিকা”। আগে যেমন স্টিলের বাক্সে আগে থেকেই সিল মেরে বাক্স ভর্তি করত, সে সুযোগ আর নেই।’

প্রধানমন্ত্রী এ সময় করোনার পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ এবং একে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার উল্লেখ করে সবাইকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের পাশাপাশি মিতব্যয়ী ও সঞ্চয়ী হওয়ার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন। দেশের প্রতি ইঞ্চি জমি ও প্রতিটি জলাধারকে কাজে লাগানোর মাধ্যমে উৎপাদন বাড়িয়ে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনেও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উন্নত দেশগুলোও আজ হিমশিম খাচ্ছে এবং তারাও আজ সাশ্রয়ী হওয়ার পদক্ষেপ নিয়েছে। আর বাংলাদেশে যেন সেই দুঃসময় না আসে, সে জন্য কতগুলো বিষয়ে আমরা আগাম পদক্ষেপ নিয়েছি।’ তিনি বলেন, পানি ও বিদ্যুতের ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। নিজেদের সঞ্চয় বাড়াতে হবে। কেননা, বিশ্বব্যাপী যে মন্দার ঢেউ দেখা দিয়েছে, তা থেকে স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশও বাদ যাচ্ছে না। তারপরও সরকার ভর্তুকি দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ সাশ্রয়ী হওয়ার চেষ্টা করছে এবং বিদ্যুতের ব্যবহার সীমিত রাখার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর মানে এই নয় যে বিদ্যুৎ একেবারে নাই বা শেষ হয়ে যাচ্ছে, তা কিন্তু না।’ দেশের উন্নয়নের কথা না বলে যাঁরা ভুল তথ্য তুলে ধরে মানুষকে বিভ্রান্ত করেন, তাঁদেরও কঠোর সমালোচনা করেন তিনি।

একটি মিডিয়ায় অনলাইন ভার্সনে দেশের ডিজেল, অকটেন, পেট্রলের সংকট প্রসঙ্গে সংবাদ পরিবেশনের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘ডিজেল আমাদের কিনতে হয়, এটা ঠিক। কিন্তু অকটেন আর পেট্রোল কিন্তু আমাদের কিনতে হয় না। আমরা যে গ্যাস উত্তোলন করি, সেখান থেকে বাই প্রডাক্ট হিসেবে আমরা কিন্তু রিফাইন করে পেট্রল ও অকটেন পাই। বরং আমাদের যতটুকু চাহিদা, তার চেয়ে অনেক বেশি পেট্রল এবং অকটেন কিন্তু আমাদের আছে।’

রিজার্ভ নিয়ে যাঁরা সমালোচনা করেন, তাঁদের পাল্টা সমালোচনা করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘২০০১-২০০৬ সালে বিএনপি যখন ক্ষমতায়, তখন রিজার্ভ তিন বিলিয়নের কিছু ওপরে, ৩ দশমিক ৮ এই রকমই ছিল। আর আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর ৪৮ বিলিয়ন পর্যন্ত আমাদের রিজার্ভ বাড়াতে সক্ষম হয়েছিলাম।’

রিজার্ভ কেন রাখা হয়, তার ব্যাখ্যায় সরকারপ্রধান বলেন, আপৎকালীন তিন মাসের খাদ্যশস্য কেনার মতো বা আমদানি করার ব্যয় মেটানোর সক্ষমতা যেন থাকে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের এখন যে রিজার্ভ আছে, তাতে তিন মাস কেন, ছয় মাস বা নয় মাসের খাবারও আমরা কিনে আনতে পারব। কিন্তু আমরা যেন নিজেরা উৎপাদন করতে পারি, নিজেরা সাশ্রয়ী থাকি।’

কোনো ষড়যন্ত্রই দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে থামাতে পারবে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের এ অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে অনেক চক্রান্ত চলছে। আমি বিশ্বাস করি, যত চক্রান্তই করুক, বাংলাদেশের এ অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি অপ্রতিরোধ্য গতিতে, ইনশা আল্লাহ এগিয়ে যাব।’