মৌলভীবাজারে টিসিবির তালিকায় উপসচিবের বাবার নাম!

মৌলভীবাজারে টিসিবির তালিকায় উপসচিবের বাবার নাম!
ফাইল ছবি

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর উপকার ভোগী তালিকা তৈরীতে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে। ইউনিয়নে ৯২৫ জন কার্ডধারী তালিকায়  এক উপসচিবের বাবা, টিভি শোরুমের মালিক, ব্যবসায়ী, বিত্তশালী ও প্রবাস ফেরত ব্যক্তিদের নামও রয়েছে। এছাড়াও ইউপি সদস্যদের বাবা, ছেলে, বোনসহ সচ্ছল আত্মীয় স্বজনের নামও তালিকায় আছে।

স্বল্প আয়ের জনগোষ্টিকে উপকারভোগী হিসেবে  টিসিবির তালিকায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অন্তর্ভূক্তির জন্য সরকারী নির্দেশনা থাকলেও সেটি মানা হয়নি আদমপুর ইউনিয়নে।

বঞ্চিতদের অভিযোগ, ইউনিয়নের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তাদের নিজেদের ইচ্ছামাফিক আত্বীয়-স্বজন ও নিজস্ব লোকদের মাধ্যমে টিসিবির কার্ড করেছেন। এতে ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডে বঞ্চিতদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টির পাশাপাশি এলাকায় চলছে তোলপাড়।

নিয়ে জানা যায়, ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক টিসিবি পণ্য বিতরণের তালিকায় রয়েছে ৭নং ওয়ার্ডের উত্তর ভানুবিল গ্রামের বাসিন্দা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পদে কর্মরত প্রদীপ কুমার সিংহের বাবা অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা কৃষ্ণ কুমার সিংহের নাম। তিনি স্বচ্ছল। তার বাড়ি পাকা এবং গাড়ি রয়েছে।

৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল গফুরের ছেলে ধান ব্যবসায়ী আবুল হোসেন, পিতা জহুর উল্যা ও ভাই এরফান আলীর নাম রয়েছে তালিকায়। অথচ ইউপি সদস্য আব্দুল গফুরের দুই ছেলে ফ্রান্স ও দুবাই প্রবাসী।

এছাড়াও তালিকায় রয়েছে আদমপুর বাজারে বড় ওষুধ ব্যবসায়ী কীর্তিজিত সিংহ ও উত্তর ভানুবিল গ্রামের বিত্তশালী মো: গনু মিয়ার নাম। যার দ্বিতলা বাড়ি ও তিন ভাই প্রবাসে। ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল আজিমের ছেলে ফাহাদ আলী, মেয়ের জামাই জুবের মিয়া ও বোন সাহেদা আক্তারের নামও রয়েছে টিসিবির তালিকায়।

স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মে পিছিয়ে যাননি ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হাজী আলমগীর ফারুক। স্বচ্ছল হয়েও ছেলে শামসুল আলম শুভর নাম দিয়েছেন তালিকায়। সংরক্ষিত নারী সদস্য গুলনাহার বেগমের ভাই ও স্বজনদের নামও রয়েছে।

একই ভাবে ৩নং ওয়ার্ডের অধিবাসী আদমপুর বাজারের ওয়ালটন টিভির শোরুমের মালিক যুবলীগ নেতা মইনুল ইসলামের নামও তালিকায় স্থান পেয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ওয়ার্ডে আরো অর্ধশতাধিক স্বচ্ছল ব্যক্তির নাম রয়েছে তালিকায় যারা বিভিন্ন ব্যবসার সাথে জড়িত বা তাদের স্বজনরা প্রবাসে থাকেন।  দরিদ্রদের বাদ দিয়ে স্বচ্ছল ব্যক্তিরা টিসিবি কার্ড পাওয়া বঞ্চিতদের মধ্য দেখা দিয়েছে ক্ষোভ।

স্থানীয় সমাজকর্মী তাজউদ্দিন আহমেদ তাজু বলেন, তালিকা তৈরীতে আরও যাচাই বাছাই ও স্বচ্ছতার প্রয়োজন ছিলো। দরিদ্ররা পেলে উপকার হতো।

উপকারভোগী উপসচিবের বাবা কৃষ্ণ কুমার সিংহকে নিজের নাম অন্তর্ভূক্তির কথা জানতে চাইলে তিনি স্থানীয় মেম্বারের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন।

৭নং ওয়াডের্র ইউপি সদস্য আব্দুল গফুর টিসিবির তালিকায় উপ-সচিবের পিতার নাম, নিজের ছেলে, পিতা ও ভাইয়ের নাম অন্তর্ভূক্তির বিষয় স্বীকার করে বলেন, আসলে আমি এতো সব বুঝিনি, আমার ভূল হয়েছে। এ জন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, এ রকম আর হবে না। চেয়ারম্যানকে বলে তালিকা থেকে নাম কেটে দিব।

আরেক ইউপি সদস্য আজিম মিয়া  বলেন, দরিদ্র অনেকে টাকা দিয়ে  পণ্য কিনতে  আগ্রহী না হওয়ায়  স্বচ্ছলদের নাম দিতে হয়েছে।

আদমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবদাল হোসেন মেম্বারদের স্বজনপ্রীতির কথা স্বীকার করে বলেন, আমি অনিয়ম পছন্দ করি না, মেম্বারদের তালিকায় কিছুটা স্বজনপ্রীতি হয়েছে, আমি স্বচ্ছলদের নাম কেটে দিব।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশেকুল হক বলেন, আমি জনপ্রতিনিধিদের দেয়া তালিকা অনুয়ায়ী কার্ডে স্বাক্ষর করেছি। সেখানে কারা স্বচ্ছল তা জানি না, এ রকম হলে চেয়ারম্যানকে বলে দিব নাম কেটে দেয়ার জন্য।

উপসচিবের বাবার নাম টিসিবির তালিকায় থাকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপরটি আমি জানি না। তবে এ রকম হয়ে থাকলে খোঁজ নিয়ে কার্ড বাতিল করা হবে।