যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস

যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস

যুক্তরাজ্যে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির সদস্যদের ভোটে দলের নেতা নির্বাচিত হয়েছেন লিজ ট্রাস এবং তিনিই দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন। আজ মঙ্গলবার বরিস জনসন ডাউনিং স্ট্রিট থেকে বিদায় নেওয়ার পর তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেবেন। লিজ ট্রাস হবেন দেশটির তৃতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী। আর ঋষি সুনাক জিততে পারলে ব্রিটেনের প্রথম অশ্বেতাঙ্গ প্রধানমন্ত্রী হতেন।

এদিকে নতুন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল এক অভিনন্দন বার্তায় শেখ হাসিনা বলেন, আপনার নিয়োগ আপনার দেশকে অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য আপনার নেতৃত্বের প্রতি ব্রিটিশ জনগণের বিশ্বাস ও আস্থার প্রমাণ।

বিবিসি জানাচ্ছে, সাধারণ ভোটারদের বদলে এবারের নতুন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে বেছে নিয়েছেন ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির ১ লাখ ৬০ হাজার সদস্য। সবশেষ ১১ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর (এডওয়ার্ড হিথের পর থেকে) মধ্যে সাধারণ নির্বাচনে জয়ী না হয়েই ডাউনিং স্ট্রিটে প্রবেশ করা ষষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী হলেন লিজ ট্রাস।

গতকাল প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, মোট ভোট পড়েছে ৮২ দশমিক ৬ শতাংশ। এর মধ্যে লিজ ট্রাস পেয়েছেন ৮১ হাজার ৩২৬ ভোট (৫৭ দশমিক ৪ শতাংশ)। আর ঋষি সুনাক পেয়েছেন ৬০ হাজার ৩৯৯ ভোট (৪২ দশমিক ৬ শতাংশ)।

২০১৯ সালে ৬৬ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট পেয়ে কনজারভেটিভ দলের নেতা নির্বাচিত হয়েছিলেন বরিস জনসন। ২০০৫ সালে ডেভিড ক্যামেরন পেয়েছিলেন ৬৭ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট। আর ২০০১ সালে ডানকান স্মিথ পেয়েছিলেন ৬০ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট।

গত জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন যখন দলের মধ্যে তীব্র অসন্তোষের মুখে পদত্যাগের ঘোষণা দিতে বাধ্য হন, তার পরই ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টিতে নতুন নেতা নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এই প্রতিযোগিতায় শেষ পর্যন্ত টিকে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস এবং সাবেক অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই শিক্ষার্থী ছাত্রজীবনের শুরুতে ছিলেন মধ্যপন্থি লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির সঙ্গে যুক্ত। কনজারভেটিভ পার্টির পেছন সারি থেকে যেভাবে সরকারের শীর্ষ পদে তার দ্রুত উত্থান ঘটেছে, তা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বিস্মিত করেছে।

লিজ ট্রাস যেসব পোশাক পরেন এবং ছবি তোলার জন্য যেসব জায়গা বেছে নেন, যেমন এস্তোনিয়ায় গিয়ে ট্যাংকে এবং মস্কোয় গিয়ে পশমের টুপি পরে ছবি তোলা ইত্যাদির কারণে অনেকে তাকে প্রথম নারী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের সঙ্গে তুলনা করেন।

যুক্তরাজ্যের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মার্গারেট থ্যাচার। তিনি ১৯৭৯ থেকে টানা ১১ বছর প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। টেরিজা মে ২০১৬ সালে যুক্তরাজ্যের দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন, কিন্তু ব্রেক্সিট নিয়ে তীব্র বিভেদ এবং টানাপড়েনের মধ্যে তাকে বিদায় নিতে হয়।

শেখ হাসিনার অভিনন্দন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ (গতকাল) বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে যুক্তরাজ্যে নবনির্বাচিত টরি লিডার লিজ ট্রাসকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছেন। এক অভিনন্দন বার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আপনার নিয়োগ আপনার দেশকে অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য আপনার নেতৃত্বের প্রতি ব্রিটিশ জনগণের বিশ্বাস ও আস্থার প্রমাণ।

বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সহনশীলতার অভিন্ন মূল্যবোধে গভীরভাবে নিহিত বিদ্যমান ঐতিহাসিক সম্পর্কের কথা পুনর্ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা অত্যন্ত সন্তোষ প্রকাশ করে বলেনÑ ‘বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে জোরদার সহযোগিতা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, সবকিছুর ঊর্ধ্বে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ-ব্রিটিশ প্রবাসীরা দুই দেশের উন্নয়নে অভিন্ন সম্পদ হিসেবে কাজ করছেন।

কমনওয়েলথভুক্ত দুটি দেশ বন্ধুত্বের ৫০ বছর উদযাপন করছে বলে ২০২২ সাল অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য বছর উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং কৌশলগত অংশীদারিত্ব আরও জোরদার করতে তিনি লিজ ট্রাসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার জন্য আগ্রহী। শেখ হাসিনা লিজ ট্রাসের সুস্বাস্থ্য, সুখ এবং অত্যন্ত দায়িত্বশীল পদে সাফল্য এবং যুক্তরাজ্যের জনগণের জন্য শান্তি, অগ্রগতি এবং সমৃদ্ধি কামনা করেন।