রায়হানের মায়ের কাছে প্রাণভিক্ষা চাইলেন আকবর

রায়হানের মায়ের কাছে প্রাণভিক্ষা চাইলেন আকবর

সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে নিহত রায়হান আহমদের মায়ের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছেন এই ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত পুলিশের বহিস্কৃত উপ পরিদর্শক (এসাআই) আকবর হোসেন ভূইয়া।

রায়হানের মা সালমা বেগম ও সৎ বাবা হাবিবুল্লার কাছে ক্ষমা চেয়ে প্রাণভিক্ষা চান বহিস্কৃত এই পুলিশ সদস্য। তবে আকবরকে কখনো ক্ষমা করবেন না বলে জানিয়েছেন সালমা বেগম ও হাবিবুল্লাহ।

বৃহস্পতিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রায়হান হত্যা মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ শেষে আদালত চত্বরে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এসব তথ্য জানান রায়হানের মা ও সৎ বাবা।

গতবছরের ১১ অক্টোবর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে মারা যান নগরের আখালিয়া এলাকার যুবক রাহহান আহমদ। সে সময় বন্দরবাজার ফাঁসির ইনচার্জ ছিলেন এসআই আকবর হোসেন ভূইয়া। তার নির্যাতনেই রায়হানের মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তেও রায়হানের মৃত্যুতে আকবরের সংশ্লিস্টতার প্রমাণ মেলে। গত ৫ মে আকবর হোসেনসহ ৬ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র প্রদান করে পিবিআই।

বৃহস্পতিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) এই অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন সিলেটের অতিরিক্ত মূখ্য মহানগর হাকিম আব্দুল মোমেনের আদালত।

অভিযোগপত্র আদালতে গ্রহণের পর আদালত প্রাঙ্গনে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে সালমা বেগম ও হাবিবুল্লাহ জানান, কিছুদিন আগে রায়হান হত্যা মামলার বিচারবিভাগীয় তদন্তের জন্য রায়হানের মা সালমা, স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নী ও সৎ বাবা হাবিবুল্লাহকে পুলিশ সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার ফটকে নিয়ে সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। সাক্ষ্যগ্রহণকালে কারান্তরীণ আসামি আকবর হোসেন ভুঁইয়া, এসআই হাসান উদ্দিন, এএসআই আশেক এলাহী, কনস্টেবল টিটুচন্দ্র দাস ও হারুনুর রশিদকে রায়হানের পরিবারের সদস্যদের সামনে নিয়ে আসা হয়।

এসময় তারা রায়হানের মা ও সৎ বাবার পা ধরে কেঁদে কেঁদে ক্ষমা চান। তবে সালমা ও হাবিবুল্লাহ এস.আই আকবরদের কখনো ক্ষমা করবেন না বলে জানান।

এসময় আকবরসহ অন্য পুলিশ সদস্যরা সালমা বেগমকে বলেন, ‘আমরা ভুল তথ্য পেয়ে রায়হানের মতো ভালো একটি ছেলেকে নির্যাতন করেছি। আমাদের ভুল হয়েছে। আমরা বুঝতে পারিনি। আমাদের ক্ষমা করে দিন।’

এর উত্তরে সালমা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলেও তো তোমাদের কাছে সেদিন প্রাণ ভিক্ষা চেয়েছিলো। কিন্তু তোমরা সেদিন পাষণ্ড ছিলে। আমার ছেলের প্রাণ ভিক্ষা দাওনি। তাই আজ আমরাও তোমাদের কোনোভাবেই ক্ষমা করবো না।’

এদিকে, বৃহস্পতিবার সকালে অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর আদালতে এই মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণের পর পলাতক আসামি আব্দুল্লাহ আল নোমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ১১ অক্টোবর ভোরে সিলেট শহরের আখালিয়ার এলাকার বাসিন্দা রায়হান আহমদকে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। পরে তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তিনি সেখানে মারা যান। পরদিন তার স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নী কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলাটির তদন্তে প্রথমে পুলিশ ছিল। পরে ১৩ অক্টোবর মামলাটি স্থানান্তর করা হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে। গত ৫ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক আওলাদ হোসেন আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ১ হাজার ৯০০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।

যে ছয়জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়, তাদের পাঁচজনই পুলিশ সদস্য। তারা হলেন- বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভুঁইয়া, এসআই হাসান উদ্দিন, এএসআই আশেক এলাহী, কনস্টেবল টিটুচন্দ্র দাস ও হারুনুর রশিদ।

অভিযুক্ত অপরজন আব্দুল্লাহ আল নোমান, যার বাড়ি কোম্পানীগঞ্জে। তার বিরুদ্ধে ঘটনার পর ভিডিও ফুটেজ গায়েব করার অভিযোগ রয়েছে।

অভিযুক্ত পাঁচ পুলিশ সদস্য কারাগারে থাকলেও নোমান এখনও পলাতক রয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি ভারতে পালিয়ে গেছে।

এদিকে, পুলিশ হেফাজতে রায়হানের মৃত্যুর ঘটনায় ময়নাতদন্ত রিপোর্টে তার শরীরে ১১১টি আঘাতের চিহ্ন থাকার কথা উল্লেখ করা হয়।

রায়হানের মৃত্যুর পরই পালিয়ে যান এসআই আকবর। গেল বছরের ৯ নভেম্বর দুপুরে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার লক্ষীপ্রসাদ ইউনিয়নের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকে আকবর হোসেন ভূঁইয়া গ্রেপ্তার করে পুলিশ।