রেকর্ড গড়া জয় বাংলাদেশের

রেকর্ড গড়া জয় বাংলাদেশের

মুশফিকুর রহিম দেশে ফিরে এসেছেন। ইনজুরির কারণে একাদশে নেই মুস্তাফিজুর রহমান। তামিম ইকবাল ‘ম্যানেজ’ করে খেলছেন। সব মিলিয়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে পূর্ণ শক্তির একাদশ পায়নি বাংলাদেশ। তবু দুই দলের শক্তির ব্যবধান কতখানি সেটির প্রমাণ মিলল সবুজ গালিচায়। মাঠের লড়াইয়ে টাইগারদের কাছে অনায়াসেই ধরাশায়ী হলো স্বাগতিকরা।

আগে ব্যাট করে জিম্বাবুয়েকে ২৭৭ রানের বড় লক্ষ্য দেয় টাইগাররা। ওয়ানডেতে এই স্কোর এখন খুব বেশি বড় তা বলা যাবে না, তবে এই রানের ভারও সইতে পারেনি ব্রেন্ডন টেলরের দল। ‘বড় টার্গেটে’র চাপে তারা খেই হারিয়েছে। বাংলাদেশি বোলারদের বোলিং তোপে মাত্র ১২১ রানেই গুটিয়ে যায় তারা। ফলে ১৫৫ রানের রেকর্ড ব্যবধানে জয় পায় সফরকারী বাংলাদেশ।

ওয়ানডেতে রানের হিসেবে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এটিই সবচেয়ে বড় জয় বাংলাদেশের। আগেরটি ছিল ১৪৫ রানের; ২০১৫ সালে ঢাকায় এসেছিল সেই জয়।

আজ বাংলাদেশের হয়ে ব্যাট হাতে আলো ছড়িয়েছেন ওপেনার লিটন দাস। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন তিনি। ব্যাটে রান না পেলেও বোলিংয়ে বাজিমাত করেছেন সাকিব। একদিনের ক্রিকেটে দেশের হয়ে মাশরাফি বিন মুর্তজাকে (২৬৯) ছাড়িয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি (২৭৪) বনে যাওয়ার দিনে একাই প্রতিপক্ষের ৫ উইকেট তুলে নিয়েছেন তিনি।

২৭৭ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই বিপদে পড়ে জিম্বাবুয়ে। নিজের প্রথম ওভার করতে এসে সফলতার দেখা পান পেসার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। শূন্য হাতে ফেরান তাদিওয়ানাশে মারুমানিকে। এরপর তাসকিন আহমেদে কাটা পড়ে আরেক ওপেনার মাধেভেরে ফেরেন ৯ রান করে। ডিওন মায়ার্স প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করলেও তাকে ১৮ রানের বেশি করতে দেননি শরিফুল।

অধিনায়ক টেলর জিম্বাবুয়ে ব্যাটিং অর্ডারের আস্থা হলেও এদিন সে আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি তিনি। ইনিংসের ১৬তম ওভারে তাকে ফিরিয়ে প্রথম সাফল্য পান সাকিব। পরে একে একে ফেরান রায়ান বার্ল (৬), ব্লেসিং মুজারাবানি (২), রেগিস চাকাভা (৫৪) ও রিচার্ড এনগারাভাকে (২)। ৯ ওভার ৫ বল করে মাত্র ৩০ রান দিয়ে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো ৫ উইকেটের স্বাদ পান সাকিব। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ২১ বারের মতো। 

জিম্বাবুয়ের শেষ ব্যাটসম্যান টিমিসেন মারুমা চোটের কারণে ব্যাটিংয়ে নামতে পারেননি। ফলে ১২১ রানে ৯ উইকেট হারানোর পর থেমে যায় জিম্বাবুয়ে ইনিংস। এতে ১৫৫ রানের রেকর্ড জয় পায় বাংলাদেশ।

এর আগে হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। ইনিংসের তৃতীয় ওভারের শুরুর বলে উইকেটের পেছনে চাকাভার হাতে ক্যাচ দিয়ে খালি হাতে ফেরেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। সুবিধা করতে পারেননি ওয়ানডাউনে নামা সাকিব আল হাসানও। তার ব্যাটে রান খরা দীর্ঘদিনের। আজ শুরুটা অবশ্য সাবলীলই মনে হচ্ছিল, তবে বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান তুলতে গিয়ে তিনিও ধরেন সাজঘরের পথ। ব্লেসিং মুজারাবানির দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফেরেন ২৫ বলে ১৯ রান করে।

আশা জাগালেও ইনিংস বড় করতে পারেননি মোহাম্মদ মিঠুন। তিনি আউট হন সাকিবের সমান ১৯ রান করে। খানিক পর মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতও ৫ রান করে ফিরে গেলে ৭৪ রান তুলতেই ৪ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে টাইগাররা।

সেখান থেকে দলকে টেনে তোলেন ওপেনার লিটন দাস ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মিছিলে কোনও ঝুঁকি নেননি একপাশ আগলে থাকা লিটন। সাবলীল ব্যাটিংয়ে রানের চাকা সচল রাখেন তিনি। ৭৮ বলে তুলে নেন ফিফটি। পরে ইনিংসটাকে তিন অঙ্কে রূপ দেন তিনি। 

ওয়েসলে মাধেভেরের করা ইনিংসের ৪০তম ওভারের তৃতীয় বলটি ডিপ মিড উইকেটে ঠেলে দিয়ে ১ রান নিয়ে শতকের উদযাপনটা সেরে নেন লিটন।

এর একটু আগে সাজঘরে ফেরেন সদ্যই টেস্ট ফরম্যাট থেকে অবসরের ‘ইচ্ছে’ জানানো মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। করেন ৫২ বলে ৩৩ রান। লিটন-মাহমুদউল্লাহর পঞ্চম উইকেটে ৯৩ রানের জুটি খেলায় ফেরায় বাংলাদেশকে। 

আফিফ হোসেনের সঙ্গে পাক্কা ৫০ রানের পার্টনারশিপ গড়ে ১০২ রান করে আউট হন লিটন। ১১৪ বলের ইনিংসটি সাজান ৮টি চারের সাহায্যে। শেষদিকে আফিফের ৩৫ বলে ৪৫ ও মেহেদী হাসান মিরাজের ২৫ বলে ২৬ রানের সৌজন্যে ৯ উইকেট হারিয়ে স্কোর বোর্ডে ২৭৬ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের হয়ে লুক জংওয়ে ৩টি এবং রিচার্ড এনগারাভা ও ব্লেসিং মুজারাবানি ২টি করে উইকেট পান।