সিলেট ও সুনামগঞ্জের ভয়াবহ বন্যা নজিরবিহীন

সিলেট ও সুনামগঞ্জের ভয়াবহ বন্যা নজিরবিহীন

সিলেট ও সুনামগঞ্জের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি নজিরবিহীন বলে বর্ণনা করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বন্যা ও পানি ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম। দীর্ঘকাল ধরে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে গবেষণা করছেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘এই ধরনের বন্যা অতীতে দেখা যায়নি। স্বল্প সময়ে অতিমাত্রায় বৃষ্টিজনিত বন্যা সব রেকর্ড ভেঙ্গেছে। পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক। অতীতে দেশে যত বন্যা হয়েছে এবারের সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যার সঙ্গে তার মৌলিক দু'টি পার্থক্য আছে। উজান আর ভাটিতে কখনও দুই দিনের এতো পরিমাণ বৃষ্টির নজির নেই। শুধু মেঘালয়ে বৃহস্পতিবার ৯৭২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। একই দিন সুনামগঞ্জে বৃষ্টি হয়েছে ৩৭৫ মিলিমিটার। আর গত তিন দিনে ভারতের আসাম আর মেঘালয় মিলিয়ে আড়াই হাজার মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। এটা ১২২ বছরের মধ্যে নতুন রেকর্ড। এত অল্প সময় এতো অধিক বৃষ্টি অতীতে দেখা যায়নি। এটা বৈশ্বিক অস্থির আবহাওয়ার ফল। আগামী কয়েকদিনে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পারে। আবহাওয়ার এমন নতুন আচরণের কারণে আগামীতে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারেও আমাদের নতুনভাবে ভাবতে হবে।’

সাইফুল ইসলাম বলেন, এরকম বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য আমরা প্রস্তুত নই। সিলেট শহরে তেমন কোন বাঁধই নেই। সিলেট এবং সুনামগঞ্জ এখন  বিশাল নদীতে পরিণত হয়েছে। 

সাইফুল বলেন, ‘আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে- আগামী এক-দুই দিনের মধ্যে আরেকটি রেকর্ড হতে যাচ্ছে। এতদিন সুরমা নদীর সুনামগঞ্জ পয়েন্টে সর্বোচ্চ পানির লেভেল ছিল ৯.২৯ মিটার। শুক্রবার ওই পয়েন্টে পানির লেভেল ছিল ৮.৮৫ মিটার। সুরমার পানির লেভেলের রেকর্ড ভেঙে যাচ্ছে। কারণ আগামী ২-৩ দিন উজান-ভাটিতে প্রচুর বৃষ্টি হবে।’

তিনি বলেন, ‘ উজানের পানি ভাটি হয়ে নামে। এমননিতে মে মাসে সিলেট অঞ্চলে একটি বড় বন্যা হয়ে গেছে। নদ-নদী পানিতে এখনও ভরা। অল্প সময়ে দ্বিতীয় বন্যা ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। সাধারণত মেঘালয় থেকে পানি সুনামগঞ্জের সুরমা কুশিয়ারা হয়ে মেঘনায় নামে। এরপর মেঘনা থেকে বঙ্গোপসাগরে যায়। সিলেটের পাহাড়ি এলাকা দ্রুত নগরায়ন হচ্ছে। নদ-নদীতে আগের চেয়ে বেশি পলি পড়ছে। অন্যান্য জলাদারও কমছে। এই বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জায়গাও আগের চেয়ে কম। এতে দ্রুত পানিতে বিস্তৃত হচ্ছে এলাকা।’

বুয়েটের এই শিক্ষক আরও বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে যেটা জরুরি করণীয় তা হলো- দ্রুত দুর্গত মানুষকে সরিয়ে নেওয়া। নিরাপদ পানি ও খাবারের ব্যবস্থা করা। এছাড়া মানুষের সম্পদ, গৃহস্থালি সামগ্রী ও পশু-পাখি নিরাপদে নেওয়ার ব্যবস্থা করা।’

তিনি বলেন, ‘বন্যার নতুন ধরনের কারণে দীর্ঘ মেয়াদে আমাদের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। নদী খনন ছাড়াও, জলাভূমি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। বাঁধ নির্মাণ করতে হবে পরিকল্পিতভাবে।’

ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভূ-উপগ্রহভিত্তিক সংস্থা ইসিএমডব্লিইউর পূর্বাভাস অনুযায়ী, শনিবার বাংলাদেশের উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ৫০০-৬০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হবে। আমেরিকান মডেল অনুযায়ী- ৫০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হবে। যুক্তরাজ্যের মডেল অনুযায়ী- ১১০০ মিলিমিটার ও ফ্রান্সের মডেল অনুযায়ী- ৬৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হবে। জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃত্রিম উপগ্রহ ভিত্তিক বন্যা পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী- সিলেটের ৮০ ভাগ স্থলভাগ এখন পানির নিচে। যুক্তরাষ্ট্রের ম্যারিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র বলছে, শুক্রবার সকাল ৬টার দিকে সুনামগঞ্জ নদীতে সেকেন্ডে ১২ হাজার ঘনমিটার পানি প্রবাহিত হয়েছিল। পানির উচ্চতা বিপদসীমার প্রায় এক মিটার ওপর প্রবাহিত হয়।