সিলেট - সুনামগঞ্জে ভয়াবহ বন্যা

সিলেটজুড়ে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত দশ হাজার!

সিলেটজুড়ে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত দশ হাজার!

সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে। তবে বাড়ছে ভোগান্তি। চারদিকে ছড়াচ্ছে পানিবাহিত রোগ। জ্বর, ডায়রিয়া, সাপের দংশন ও চর্মরোগসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন লোকজন। চলমান বন্যার কারণে বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) দুপুর পর্যন্ত সিলেট বিভাগে এসব রোগে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৯ হাজার ৮৬৩ জন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫০৭ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের ‘হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম’ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, এ পর্যন্ত পানিবাহিত রোগে সিলেট বিভাগে ৯ হাজার ৮৬৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ২ হাজার ৮৪৭, সুনামগঞ্জে ১ হাজার ৭৭৮, হবিগঞ্জে ৩ হাজার ৩৪ ও মৌলভীবাজারে ২ হাজার ২৩৬ জন। তারা জ্বর-সর্দি-কাশি, ডায়রিয়া, সাপের দংশন, চোখের প্রদাহ ও চর্মরোগসহ নানা রোগে আক্রান্ত হন। তবে এর মধ্যে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাই ছিলো বেশি। 

সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেট বিভাগে ৫০৭ জন ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ৫৪, সুনামগঞ্জে ১০০, হবিগঞ্জে ২৩১ ও মৌলভীবাজারে ১২২ জন।

এদিকে, পানিতে ডুবে ও বন্যার কারণে বিভিন্নভাবে সিলেট বিভাগে এ পর্যন্ত ৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ১৮, সুনামগঞ্জে ২৮, হবিগঞ্জে ৫ ও মৌলভীবাজারে ৮ জন।

তবে পানিবাহিত রোগ-বালাই যাতে সিলেটকে কাবু করতে না পারে সে লক্ষে কাজ করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য বিভাগের ৪২৯টি টিম কাজ করছে বিভাগজুড়ে। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা. মোহাম্মদ নূরে আলম শামীম বলেন, পানিবাহিত রোগ-বালাই সিলেটে যাতে ছড়াতে না পারে সেজন্য বিভাগজুড়ে ৪২৯টি টিম কাজ করছে। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ১৪০, সুনামগঞ্জে ১২৩, হবিগঞ্জে ৯২ ও মৌলভীবাজারে ৭৪টি। 

উল্লেখ্য, গত ১৫ জুন সিলেটে দ্বিতীয় দফা বন্যা হানা দেয়। এক সপ্তাহের মধ্যে প্লাবিত করে শহর ও গ্রামের ৯০ ভাগ এলাকা। স্মরণকালের ভয়াবহন বন্যার কবলে পড়ে সিলেট। এক সপ্তাহ পর থেকে বন্যার পানি কমতে শুরু করে কয়েকদিন পর ফের বাড়তে থাকে। ফলে দীর্ঘমেয়াদি বন্যার কবলে পড়েন সিলেটবাসী। এ অবস্থায় খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়। বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা।

প্রায় দুই সপ্তাহ পর বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে গেলেও পানি নামতে থাকে খুবই ধীরে। নগরীসহ সিলেটের বন্যাকবলিত অনেক এলাকার পানি এখনও পুরোপুরি নামেনি। নিম্নাঞ্চলের অনেক গ্রাম এখনো প্লাবিত।

বানের পানিতে কাচা বাড়ি-ঘর বিধ্বস্ত হওয়ায় লোকজন বিপাকে পড়েছেন। বন্যা পরবর্তী রোগ-বালাই দেখা দেওয়ার পাশাপাশি গো-খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। তবে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বন্যার্তদের ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।

সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার পর্যন্ত পাওয়া হিসামতে- বন্যায় জেলার ৪ লাখ ৮৪ হাজার ৩৮৩টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ। মোট ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪০ হাজার ৯১টি।