সিলেটে একের পর এক শিশু নিখোঁজ, উৎকণ্ঠা

সিলেটে একের পর এক শিশু নিখোঁজ, উৎকণ্ঠা

সিলেট বিভাগে সম্প্রতি বেড়েছে শিশু নিখোঁজের ঘটনা। এতে অভিভাবকদের মাঝে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। সর্বশেষ শনিবার সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থেকে সাথী আক্তার প্রিয়া নামের ৮ বছরের এক শিশু নিখোঁজ হয়েছে। 

এছাড়া সিলেট বিভাগের চুনারুঘাট থেকে গত চার দিনে চার শিশু নিখোঁজ হয়েছে। হারিয়ে যাওয়া শিশুদের বয়স ৮ থেকে ১১ বছরের মধ্যে। এসব ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় অভিভাবকরা সাধারণ ডায়েরি করেছেন। তবে কোনো শিশুই এখনো উদ্ধার হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। 

জানা গেছে, শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মোমিনখলা থেকে সাথী আক্তার প্রিয়া (৮) হারিয়ে যায়। সে কুমিল্লা জেলার লাকসাম থানার নাগুটি গ্রামের পেয়ার আহমদ ইলিয়াসের মেয়ে। ইলিয়াস ব্যবসায়ীক কারণে পরিবার নিয়ে দক্ষিণ সুরমার মোমিনখলায় থাকেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পরিবারের সদস্যরা ঘুমে থাকা অবস্থায় শিশু সাথী আক্তার প্রিয়া সবার অগোচরে বাসার বাইরে বের হয়ে আর ঘরে ফেরেনি।

পরে সম্ভাব্য সকল স্থানে খুঁজেও প্রিয়াকে কোথাও পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় প্রিয়ার ভাই মো. সালেহ আহমদ দক্ষিণ সুরমা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে সালেহ আহমদ সিলেটভিউ-কে বলেন- ‘আমার বোন দেশের বাড়িতে মায়ের সঙ্গে থাকতো এবং সেখানে স্থানীয় একটি মাদরাসায় পড়তো। কিন্তু মাসখানেক আগে আমাদের মা ও বোন প্রিয়াকে আমাদের কাছে দক্ষিণ সুরমায় নিয়ে আসি। প্রিয়াকে সিলেটে কোনো মাদরাসায় ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম আমরা। এরই মাঝে ঘটে গেলো এই দুর্ঘটনা। প্রিয়াকে হারিয়ে আমরা সকল ভাই-বোন ও আমাদের বাবা-মা দিশেহারা। বাবা-মা শুধু চোখের জল ফেলে কাঁদছেন এবং বার বার জ্ঞান হারাচ্ছেন।’

সালেহ আহমদ জানান- তার বোন প্রিয়ার গায়ের রং ফর্সা, মুখ গোলাকার, উচ্চতা আনুমানিক ৪ ফুট ২ ইঞ্চি। হারানোর আগে তার পরণে ছিলো মিষ্টি রঙের সেলোয়ার-কামিজ।

এদিকে, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট থেকে গত চার দিনে চার শিশু নিখোঁজ হয়েছে। হারিয়ে যাওয়া শিশুদের বয়স ৮ থেকে ১১ বছরের মধ্যে। হারিয়ে যাওয়া শিশুর বিষয়ে অভিভাবকরা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। কিন্তু কোনো শিশুই এখনো উদ্ধার হয়নি।

এদিকে একের পর এক শিশু নিখোঁজের ঘটনায় পুরো উপজেলাজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নানা আলোচনা-সমালোচনা অব্যাহত রয়েছে।

জানা যায়, গত ২২ অক্টোবর চুনারুঘাট পৌর শহরের বাসা থেকে বের হলে লিজা আক্তার নামের এক শিশু নিখোঁজ হয়। লিজা আমকান্দি গ্রামের কবির মিয়ার কন্যা। সে চুনারুঘাট পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শেণির ছাত্রী। এ নিয়ে ২৬ অক্টোবর থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।

গত বুধবার শানখলা ইউনিয়নের পাইকুড়া গ্রামের ব্যবসায়ী বাচ্চু মিয়ার ছেলে আল আমিন নিখোঁজ হয়। সে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪র্থ শ্রেণিতে পড়ে।

একই দিন দেওরগাছ গ্রামের ফরিদ মিয়ার ছেলে তানভীর (৮) নিখোঁজ হয়ে যায়। সে একটি মাদ্রাসার ছাত্র।

এদিকে সীমান্ত ইউনিয়ন গাজীপুরের বাসুল্লা গ্রাম থেকে ১০-১২ বছরের এক শিশুকে মতিভ্রম অবস্থায় উদ্ধার করেছেন এলাকাবাসী। সে একেক বার একেক নাম ঠিকানা বলে যাচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, এর আগেও বহু শিশু চুনারুঘাট থেকে হারিয়ে গেছে। ২-৩ মাস পর কোনো কোনো শিশু বাড়ি ফিরেছে বিপর্যস্ত অবস্থায়। অনেকের কোনো সন্ধানই মেলেনি। ঘন ঘন শিশু নিখোঁজের ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।

এ বিষয়ে সিলেট রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ের পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা বলেন- বিষয়টি উদ্বেগের। এ নিয়ে কাজ করছে পুলিশ।