সিলেটে ওয়াকওয়ের বাণিজ্যিক ব্যবহার, প্রতিবাদে প্ল্যাকার্ড হাতে মিসবাহ সিরাজ
নির্মল পরিবেশে নগরবাসীর হাঁটাচলা ও বেড়ানোর সুবিধার্থে নগরের ধোপাদিঘীর পাড়ে নান্দনিক ওয়াকওয়ে নির্মাণ করে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। ভারতীয় দূতাবাসের অর্থায়নে এই ওয়াকওয়ে প্রশংসা কুড়ায় নগরবাসীর।
তবে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কিছুদিন পরই এই ওয়াকওয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা প্রদান করেছে সিটি করপোরেশন। ফলে এখন টিকিট কেটে ওয়াকওয়েতে প্রবেশ করতে হচ্ছে। এতে বিকেলে হাঁটাচলার জন্য সাধারণ নাগরিকরা সেখানে প্রবেশ রতে পারছেন না। এছাড়া ওয়াকওয়ের মধ্যে বিভিন্ন পণ্যের দোকান বসিয়ে এর পরিবেশ নষ্ট করারও অভিযোগ ওঠেছে।
ধোপাদিঘীর পাড় ওয়াকওয়ে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিকেলে প্ল্যা-কার্ড হাতে অবস্থান নেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট জেলা জজ কোর্টের সাবেক পিপি মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ।
'হাঁটার উন্মুক্ত' পরিবেশ চাই'- এমন প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে ধোপাদিঘীর পাড় ওয়াকওয়েতে দাঁড়িয়েই প্রতিবাদ করেন মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। এসময় তার সাথে সিলেটের স্পেশাল পিপি সারোয়ার হোসেন আবদাল, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটি, সিলেটর সভাপতি এডভোকেট কিশোর কর, নাগরিক মৈত্রী সিলেটের সভাপতি এডভোকেট সমর বিজয় সী শেখরসহ স্থানীয় অনেকে প্রতিবাদে শামিল হন।
মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেন, ভারতের আর্থিক সহায়তায় প্রায় পরিত্যক্ত এই ধোপাদিঘী নবরুপে নির্মান করা হয়েছে। কিন্তু নবরুপে তৈরির অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই এটিকে লিজ প্রদানের মাধ্যমে এর ভিতরে চটপটি, ফুচকা এবং জুসের দোকান তৈরি করা হয়েছে। এতে এই এলাকায় এখন আর হাঁটার পরিবেশ নেই। সাধাণ মানুষজন আর হাঁটাচলা করতে পারে না।
তিনি এই ওয়াকওয়ে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার না করে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার দাবি জানান।
জানা যায়, ৬০ লাখ টাকা চুক্তিতে ইশান এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ বছরের জন্য এই ওয়াকওয়ে ইজারা দিয়েছে সিটি করপোরেশন। ইজারা নেয়ার পর ওয়াকওয়ের ভেতরে বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যের অন্তত ১০টি দোকান বসিয়েছে তারা। এছাড়া ওয়াকওয়েতে প্রবেশে সবার কাছ থেকে ফি নেয়া হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ইশান এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী হাসান আহমদ চৌধুরী বলেন, আমরা দুই মাস হলো এটি ইজারা নিয়েছি। ইজারার সব চুক্তিই আমরা মেনে চলছি। আমরা দায়িত্ব নেয়ার পর এখানকার পরিবেশ আরো উন্নত হয়েছে।
ভোর ৫টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত এই ওয়াকওয়ে সবার হাঁটাচলার জন্য উন্মুক্ত থাকে বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
সিলেট সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ২৩ এপ্রিল সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল শাখা থেকে ওয়াকওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের পরিকল্পনা করা হয়। সিসিক ধোপাদিঘীকে নতুন রূপ দেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর ভারত সরকার এগিয়ে আসে এর অর্থায়নে। ‘ধোপাদিঘী এরিয়া ফর বেটার এনভায়মেন্ট অ্যান্ড বিউটিফিকেশন’ নামে প্রকল্প গ্রহণ করে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ শুরু হয়।
সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানান, দীঘিতে পানি ছিল ৩ দশমিক ৪১ একর জায়গাজুড়ে। চারপাশে দখল হওয়া জায়গা উদ্ধারের পর পানির সীমানা বেড়ে কমপক্ষে ৩ দশমিক ৭৫ একরে উন্নীত হয়েছে। নোংরা দুর্গন্ধময় পরিত্যক্ত এই দীঘিকে অপরূপ সৌন্দর্যে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ধোপাদিঘীতে সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। চারদিকে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। বসার জন্য রয়েছে বেঞ্চ। পুকুরে নামার জন্য রয়েছে দৃষ্টিনন্দন ঘাট। পুকুরের নোংরা পানিকে পরিষ্কার করা হচ্ছে। নৈসর্গবিদের পরামর্শে গাছ লাগানো হবে। স্থাপন করা হয়েছে পাবলিক টয়লেট।
গত বছরের ১১ জুন এটি উদ্বোধন করা হয়।