সিলেটে প্রবাসী নারীর কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

সিলেটে প্রবাসী নারীর কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

সিলেটে শেয়ারবাজারের নামে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলেছেন এক প্রবাসী নারী। ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি কোম্পানি লিমিটেডের (আইএসসিএল) সিলেট অফিসের ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেন তিনি। 

শনিবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ১ কোটি ৯ লাখ ২৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ওই নারী। 

সিলেট জেলা প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি আইএসসিএলের সিলেট অফিসের (মানরু শপিং সিটি) ব্যবস্থাপক কামরুজ্জামান রুম্মানকে দায়ী করেন। শাহজালাল উপশহরের স্প্রিং গার্ডেন-২ এর বাসিন্দা যুক্তরাজ্য প্রবাসী ফেরদৌসী রহমান এ অভিযোগ করেন।

তবে অভিযুক্ত কামরুজ্জামান রুম্মান যুগান্তরকে বলেন, ফেরদৌসী রহমান মিথ্যাচার করছেন। শেয়ারবাজারের সম্পূর্ণ লেনদেন চেক ও ব্যাংকের মাধ্যমে হয়। এখানে ধামাচাপার কোনো সুযোগ নেই। শেয়ারবাজারের বাইরে তিনি আমার সঙ্গে অন্য এক ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছিলেন। সেই ব্যবসায় আমার দেওয়া চেকের মাধ্যমে আমাকে হয়রানি ও ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন। এর আগেও সংবাদ সম্মেলন করে তিনি আমার মানসম্মান ডুবিয়েছেন। আবারো তিনি শুরু করেছেন অপপ্রচার। 

এদিকে সংবাদ সম্মেলনে ফেরদৌসী রহমান দাবি করেন, তিনি বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের একজন দ্বৈত নাগরিক এবং বিনিয়োগকারী। তার স্বামী আজিজুর রহমানও তার জীবদ্দশায় বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যে অনেক বিনিয়োগ করেছেন। তার মৃত্যুর পর তিনি ব্যবসায় হাল ধরার পাশাপাশি বিভিন্ন সেক্টরে বিনিয়োগ করা অব্যাহত রাখেন; কিন্তু বিনিয়োগ করে তিনি মহাপ্রতারণা ও জালিয়াতদের খপ্পরে পড়েছেন। 

সংবাদ সম্মেলনে তিনি উল্লেখ করেন, চিটাগাং স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি কোম্পানি লিমিটেডের (আইএসসিএল) সিলেট অফিসের (মানরু শপিং সিটি) ব্যবস্থাপক কামরুজ্জামান রুম্মানের মাধ্যমে শেয়ারবাজারে তিনি ১ কোটি ৯ লাখ ২৩ হাজার ৫০০ টাকা বিনিয়োগ করেন। সেই টাকা ১০ বছরেও উদ্ধার করতে পারেননি। রুম্মান তাকে না বলে তার শেয়ার বিক্রি, ক্রয়কৃত শেয়ারের টাকা গ্রহণ ও আত্মাসাৎ করে নানা টালবাহানা করছেন। 

সংবাদ সম্মেলনে ফেরদৌসী বলেন, তার শেয়ার ও বিও অ্যাকাউন্টে জমাকৃত শেয়ারের লভ্যাংশ, বোনাস শেয়ার ও রাইট শেয়ার দেওয়া তো দূরের কথা, তার বিনিয়োগ করা টাকা উদ্ধার করতে পারছেন না দীর্ঘ সময়ে। স্থানীয়ভাবে একাধিক সালিশ ছাড়াও চট্রগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেও সুরাহা পাননি। তার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন শুধু আইএসসিএল এবং এর শাখা ইনচার্জ কামরুজ্জামানকে ৫ লাখ টাকা করে মোট ১০ লাখ টাকা জরিমানা করে। কিন্তু বিনিয়োগকৃত টাকা উদ্ধার বা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

বিনিয়োগকৃত টাকা উদ্ধারে আদালতের আশ্রয় নেবেন জানিয়ে তিনি অভিযোগ করেন, কামরুজ্জামান তার মামা চট্রগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক চেয়ারম্যান ব্যবসায়ী ফখরুদ্দিন আলী আহমদসহ কিছু প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের মদদে পার পেয়ে যাচ্ছেন। 

তিনি বলেন, ২০০৬ সালের পর সিলেটে অবস্থানকালে আইএসসিএলের সিলেট ইনচার্জ, জকিগঞ্জের এমএ সালাম চৌধুরীর ছেলে ও নগরীর তোপখানা ১৫৯ সুরমা ভ্যালির বাসিন্দা কামরুজ্জামান রুম্মানের সঙ্গে পরিচয় হয়। তখন জানতে পারেন রুম্মান তার আত্মীয়। ২০১০ সালের দিকে পরিচয় ও আত্মীয়ের সূত্র ধরে রুম্মান তাকে আইএসসিএলে বিনিয়োগে অনুরোধ করেন। রুম্মান জানান- আইএসসিএল কর্তৃপক্ষ তার আত্মীয় এবং মামা ফখরুদ্দিন আলী আহমদ চট্রগামে স্টক এক্সচেঞ্জের প্রেসিডেন্ট। প্রতিষ্ঠান ও এর সঙ্গে জড়িতরা বিশ্বস্ত মনে হওয়ায় প্রবাসী ওই নারী ২০১০ সালে বিনিয়োগ শুরু করেন।

টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠার পর ফখরুদ্দিন আলী আহমদের প্রস্তাবে ২০১৮ সালের ৯ মে নগরে বৈঠক করেন। এতে তার মামা ফয়সল, খাদিমপাড়ার ইউপি চেয়ারম্যান মাজহারুল ইসলাম ডালিম উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো সুরাহা হয়নি। পরবর্তীতে রুম্মান তার কাছে ভুল স্বীকার করেন এবং টাকা ফেরত দেওয়ার প্রস্তাব দেন। ডালিম চেয়ারম্যানের মধ্যস্থতায় তার চাচাতো ভাই সাবেক এমপি ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, ফখরুদ্দিন আলী আহমদ ও রুম্মানসহ হোটেল স্টার প্যাসিফিকে একই মাসের ২৬ তারিখ ও ২৪ জুন আরেকটি বৈঠক হয়। এতে বিভিন্ন স্টেটমেন্ট ও কাগজপত্র পর্যালোচনা করে কোম্পানির হিসাবে জমা করা তার ৭৪ লাখ টাকা কোম্পানি ও বাকি টাকা রুম্মান তার ব্যাক্তিগতভাবে পরিশোধ করবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু এ সিদ্ধান্তও বাস্তবায়ন করা হয়নি। ফখরুদ্দিন আলী আহমদ উল্টো তার ভাগনে রুম্মানকে রক্ষা করতে উঠেপড়ে লাগেন।