সিলেটে ৩ অক্টোবর থেকে সিএনজি চালকদের কর্মবিরতির হুমকি

সিলেটে ৩ অক্টোবর থেকে সিএনজি চালকদের কর্মবিরতির হুমকি

৬ দফা দাবি না মানলে আগামী ৩ অক্টোবর থেকে সিলেটে সিএনজি অটোরিকশাচালকরা অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করবেন বলে হুমকি প্রদান করেছেন।

সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সিলেট জেলা সিএনজিচালিত অটোরিকশা মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন হুমকি দেন সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. জাকারিয়া আহমদ।

লিখিত বক্তব্যে জাকারিয়া বলেন, করোনা সংক্রমণরোধে দীর্ঘদিন লকডাউন শেষে গত ১১ আগস্ট থেকে দেশের অন্যান্য স্থানের মতো সিলেটেও সকল ধরণের যানবাহন চলাচল করছ। লকডাউনে পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম অর্থনৈতিক সংকটে থাকা অটোচালকরা জীবিকা নির্বাহের একমাত্র বাহন সিএনজি চালিত অটোরিকশা নিয়ে রাস্তায় বের হয়। কিন্তু সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে সিলেটের পুলিশ প্রশাসন ওৎপেতে থেকে অটোরিকশা রাস্তায় বের হওয়া বিভিন্ন অজুহাতে মামলা-জরিমানা করছে। সরকারি ছুটি ও লকডাউন ঘোষণার কারণে অনেক মালিক ও শ্রমিক তাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স ও কাগজপত্র হালনাগাদ নবায়ন করে নিতে পারেন নাই। কিন্তু পুলিশ সেই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে শ্রমিকদের উপর যে অবিচার ও জুলুম করছে।

জাকারিয়া আরও বলেন, দীর্ঘদিন থেকে সিলেটের মানুষ সিএনজি চালিত অটোরিকশায় শেয়ারে যাতায়াত করে আসছে। আমরাও তিনজনের স্থলে পাঁচজন যাত্রী বহন করি। কিন্তু করোনা সংক্রমণ রোধে শারিরিক দুরত্ব নিশ্চিত করতে পাছজনের স্থলে তিনজন যাত্রী বহনের নির্দেশনা দেয় সরকার। গত ১১ আগস্ট থেকে সিলেটের ট্রাফিক পুলিশ প্রশাসন হঠাৎ করে সিএনজি চালিত অটোরিকশায় শেয়ারে যাত্রী বহন করতে বলছে। অধিক যাত্রী বহন করলে ৫-৬ হাজার টাকার মামলা দিচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরা ১০০ টাকার ভাড়া শেয়ারে ৫জন যাত্রীর কাছ থেকে ২০ টাকা করে নিচ্ছি। কিন্তু পুলিশ তিনজনের অধিক যাত্রীবহনে বাধা দেওয়ায় ১০০ টাকার ভাড়ার স্থলে তিনজন যাত্রীর কাছ থেকে ৯০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। এতে প্রায়ই যাত্রীদের সাথে আমাদের চালকদের বাকবিতন্ডা ঘটছে। পুলিশের বেঁধে দেওয়া নিয়ম অনুসারে এই ভাড়া আদায় ব্যতিত বিকল্প কোন পথ নেই।

পুলিশ প্রশাসন অটোরিকশা শ্রমিকদের উস্কানি দিচ্ছে উল্লেখ করে জাকারিয়া বলেন, পুলিশ প্রশাসন এই শোকের মাসে শ্রমজীবী মানুষকে উস্কানি দিয়ে মাঠে নামাতে চেয়েছিল। আমরা তাদের উস্কানিতে পা দেই নি। ধৈর্য্য ধরে এ পর্যন্ত জুলুম অত্যাচার সহ্য করে এসেছি। এভাবে জুলম ও বৈষম্যমূলক আচরণ করলে আমরা বসে থাকবো না।

তিনি আরও বলেন, সিলেটের রাস্তায় অবৈধ ব্যাটারি চালিত রিকশা, অটোবাইক, মোটরবাইক, টমটম, প্রাইভেটকার ও লাইটেস যাত্রী পরিবহন করলেও ট্রাফিক প্রশাসন এদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করে না। শুধুমাত্র মামলা-জরিমানা দিয়ে হয়রানি করা হয় অটোরিকশা চালকদের। পুলিশ প্রশাসনকে এমন বৈষম্যমূলক আচরন থেকে বিরত থাকার আহবান জানান তিনি।

জাকারিয়া বলেন, আমাদের আরেকটি নতুন বিষফোড়া র্উাড শেয়ারিং। নগরের বিভিন্ন মোড়ে সারিবদ্ধ ভাবে পুলিশের পাশে বসে ডেকে ডেকে যাত্রী বহন করেন মোটরসাইকেল রাইডাররা। এটা কোন নিয়মের মধ্যে না পড়লেও পুলিশ সেটাকে দেখেও না দেখার বান করে। অথচ আমাদের বিভিন্ন পার্কিং স্থানের পাশে এসে এরকম ডাকাডাকি করে যাত্রী নেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র অনেক সংঘাত-সংঘর্ষ হয়েছে। এসব বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না নিলে কোন অপ্রীতিকর ঘটনার দায়ভার সংশ্লিষ্ট পুলিশ প্রশাসনকে নিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা গত ১৪ সেপ্টেম্বর সিলেটের জেলা প্রশাসক ও সভাপতি, আঞ্চলিক পরিবহণ কমিটি, (আর,টি,সি) বরাবরে ০৬ দফা দাবী সম্বলিত একখানা স্মারকলিপি প্রদান করেছি। আমাদের দাবি বাস্তবায়ন না হলে আগামী ৩ অক্টোবর থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করা হবে বলে জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, সিলেট জেলা সিএনজি চালিত অটোরিকশা মালিক-শ্রমিক সমিতির সভাপতি শাহ মো. দেলওয়ার, সহসভাপতি ইকবাল আহমদ চৌধুরী (সাহাব), যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জালাল আহমদ, সিলেট জেলা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আজাদ মিয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহাব উদ্দিন ও সাংগঠনিক সম্পাদক ইকবাল আহমদসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।