স্বাগতম মাহে রমাদান

স্বাগতম মাহে রমাদান
যখন রমাদান মাস আসে তখন জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়; শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়

‘আহলান সাহলান মাহে রমাদান, সুস্বাগতম রমাদান মাস’। ‘হে আল্লাহ রজব ও শাবান মাস আমাদের জন্য বরকতময় করুন এবং রমাদান আমাদের নসীব করুন!’ এই প্রার্থনা কবুল হলো। সুস্বাগতম জানাচ্ছি মহিমান্বিত মাহে রমাদানকে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ (স.) বলেন : যখন রমাদান মাস আসে তখন জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়; শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়। (বুখারী, খ-: ৩, হাদীস: ১,৭৭৮)।

নাজাতের বারতা নিয়ে এলো মাহে রমাদান। প্রিয় নবী (স.) বলেন : রমাদানের প্রথম অংশ রহমত বা দয়া করুণা, মাঝের অংশ মাগফিরাত বা ক্ষমা, শেষাংশ নাজাত বা মুক্তি। (বায়হাকী শরীফ)। রহমতের বারিতে সিি ত হয়ে, ক্ষমার মহিমায় উদ্বেলিত নব জীবন লাভ করে, নাজাত তথা অনন্ত মুক্তির নবদিগন্তের জান্নাতি আহ্বানে অফুরান কল্যাণের পথে অভিযাত্রার সুবর্ণ সুযোগ মাহে রমাদান।

‘সওম’ শব্দটি আরবি, এর অর্থ বিরত থাকা; বহুবচন হলো ‘সিয়াম’। ফার্সি, উর্দু, হিন্দি ও বাংলায় সওমকে ‘রোজা’ বলা হয়। কোরআন কারীমে এসেছে : “হে যারা ঈমান এনেছ! তোমাদের প্রতি ‘সিয়াম’ ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের জন্য; যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো। (সূরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৩)।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন মহানবী হজরত মুহাম্মাদ (স.) বলেন : ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সহিত সওয়াবের নিয়তে রমাদান মাসে সওম পালন করবে, তার অতীতের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (বুখারী, প্রথম খ-, হাদীস: ৩৭)। প্রিয় নবী (স.) আরো বলেন : ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সহিত সওয়াবের উদ্দেশ্যে রমাদান মাসে রাতে ইবাদাত করবে তারাবীহ নামাজ আদায় করবে, তার অতীতের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (বুখারী, প্রথম খ-, হাদীস: ৩৩-৩৬)। রমাদান মাসে রয়েছে দয়াময়ের করুণার পরম পূর্ণতার মহিমন্বিত রজনী লাইলাতুল কদর বা শবে কদর তথা মহিমাময় মহামর্যাদাপূর্ণ সম্মানীত রাত্রি। বিশ^নবী রসূলে আকরাম (স.) বলেন: ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সহিত সওয়াবের আশায় লাইলাতুল কদরে ইবাদাতে অতিবাহিত করবে তার অতীতের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (বুখারী, প্রথম খ-, হাদীস: ৩৪)। প্রিয় নবীজি (স.) বলেন : জান্নাতে রায়্যান নামক একটি দরজা আছে। এ দরজা দিয়ে কিয়ামতের দিন রোজাদারেরাই শুধু প্রবেশ করবেন। তাদের প্রবেশের পরেই এই দরজাটি বন্ধ করে দেওয়া হবে। তাদের ছাড়া আর কেউ এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। (বুখারী, খ-: ৩, হাদীস: ১৭৭৫)। রমাদান মাসে প্রতিটি নেক আমলের ফজিলত সত্তর গুণ বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়। একেকটি নফল ইবাদাতের সওয়াব বা বিনিময় ফরজ ইবাদাতের সমান দান করা হয়।

সাবালক বা প্রাপ্ত বয়স্ক, সাধারণ বুদ্ধিমত্তা বা স্বাভাবিক জ্ঞানসম্পন্ন, রোজা পালনে সক্ষম সুস্থ সকল নারী ও পুরুষের জন্য রমাদান মাসে রোজা পালন বাধ্যতামূলক ফরজ ইবাদাত। ঋতুবতী নারী, সন্তান প্রসবকারী মা, অসুস্থ ব্যক্তিগণ রোজাপরবর্তীতে কাজা আদায় করবেন। এমন অক্ষম ব্যক্তি যিনি পুনরায় সুস্থ হয়ে রোজা পালনের সামর্থ লাভের সম্ভাবনা বিদ্যমান নেই, তারা রোজার জন্য ফিদিয়া প্রদান করবেন। অর্থাৎ প্রতিটি রোজার জন্য একটি সদকাতুল ফিতরের সমান দান করবেন। জাকাত গ্রণের উপযুক্তদেরই এই ফিদইয়া প্রদান করা যাবে।

রমাদান মাসে ফরজ হলো একটি, পূর্ণ একমাস রোজা পালন করা। রমাদানের সাথে সম্পৃক্ত ওয়াজিব দুইটি। যথা : সদকাতুল ফিতর আদায়করা ও ঈদের নামাজ পড়া। রমাদান মাসের উপলক্ষে বিশেষ সুন্নাতসমূহ হলো : রজব মাস ও শাবান মাস বরকতের জন্য এবং রমাদানপ্রাপ্তির জন্য দোয়া করতে থাকা; রজব ও শাবান মাস থেকে রমাদানের প্রস্তুতি গ্রহণ করা, রজব ও শাবান মাসে অধিক পরিমাণে নফল রোজা রাখা ও নফল নামাজ আদায় করা, শাবান মাসের চাঁদের তারিখের হিসাব রাখা; রমাদানের চাঁদ দেখা; সাহরী খাওয়া, তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা, ইফতার করা ও করানো, বিশ রাকাত তারাবীহ নামাজ আদায় করা, কোরআন কারীম বেশি বেশি তিলাওয়াত করা এবং ইতিকাফ করা; রমাদানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোয় শবে কদর সন্ধান করা, ঈদের জন্য শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা।

রমাদানের পবিত্রতা রক্ষা করুন। রমাদানে ইবাদাতের পরিবেশ বজায় রাখুন। রমাদানের ফরজ ওয়াজিব ও সুন্নাতসমূহ পালন করুন। নিজে নেক আমল করুন অন্যদেরও নেক আমলে উদ্বুদ্ধ ও সহায়তা করুন। দুনিয়ার শান্তি ওপরকালের মুক্তি নিশ্চিত করুন। রমাদানেন রোজা পালন ও ইবাদাতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ এবং কোপ ও রোষ থেকে নিষ্কৃতি ও বালা-মুসিবত থেকে মুক্তির চেষ্টা করুণ। হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ তাআলা বলেন : ‘রোজা অমারই জন্য, আমিই এর বিনিময় প্রতিদান দেবো।’ (বুখারী, খ-: ২, পৃষ্ঠা: ২২৬)।

লেখক: চেয়ারম্যান, ইসলামিক স্কলার্স ফোরাম বাংলাদেশ; যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি এবং সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সূফীজম