শাবিপ্রবির উপাচার্য বিরোধী আন্দোলন

হাসপাতালের বেডে থেকেও অনশন!

হাসপাতালের বেডে থেকেও অনশন!
ছবি- জাগো সিলেট

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে আমরণ অনশন চলাকালে অসুস্থ হয়ে পড়েন পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ৩য় বর্ষে অধ্যয়নরত কাজল দাস নামের এক শিক্ষার্থী। গত বুধবার বিকেল ৩টা থেকে শুরু হওয়া এ অনশনের ২১ ঘন্টায় মাথায় বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ টায় তিনি অসুস্থ হন। পরে তাকে নগরের জালালাবাদ রাগিব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ‘বেশি জ্বর ও প্রেসার কমে যাওয়ায় তার অবস্থা খারাপে দিকে যাচ্ছে।’

হাসপাতালে থেকে ঐ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, ‘হাপাতালে এসেও তিনি এখনও কোন খাবার গ্রহন করেননি। যতক্ষন পর্যন্ত উপাচার্য পদত্যাগ না করবেন তিনি তার আমরণ অনশন চালিয়ে যাবেন।’

কাজল বলেন, ‘আমি কথা বলার পরিস্থিতিতে এখন নেই। আপনারা জানেন, আমাদের দাবি কি, আমার বন্ধুরা কেউ অনশন ভাঙ্গবে না। যে অযোগ্য ভিসি ছাত্রদের উপর গুলি চালায়, পুলিশ দিয়ে শিক্ষার্থী পেঠায় সে এই পদে থাকার সকল নৈতিকতা হারিয়েছে। আমার মৃত্যু হলেও অনশন ভাঙবো না, যদি না ঐ ভিসি পদত্যাগ না করে।’

অসুস্থ এই অনশনরত শিক্ষার্থী সঙ্গে হাসপাতালে থাকা সামিরা ফারজানা নামের এক শিক্ষার্থী জানান, ‘দুপুর ১২টার দিকে (বৃহস্পতিবার) কাজল জ্ঞান হারায়। পরে আমরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসি। সে এখনও অনশন ভাঙ্গেনি। যদি তার কিছু হয়ে যায় তবে এই দায়ভার কিন্তু ভিসিকেই নিতে হবে। আমরা আশা করবো ভিসি দ্রæত পদত্যাগ করে আমাদের ক্যাম্পাসে ফিরে যাবার পরিস্থিতি সুষ্টি করে দিবেন।’

এরআগে গেল বুধবার বিকেল তিনটা থেকে শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশনে বসেন। উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অনশনে ১৫ ছেলে শিক্ষার্থী ও ৯ মেয়ে শিক্ষার্থী রয়েছেন।

পদত্যাগের দাবিতে অনশনরত ২৪ শিক্ষার্থীর মধ্যে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত ৭ জন শিক্ষার্থীকে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সর্বশেষ রাত ১২টার দিকে একজনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অসুস্থদের মধ্যে চারজন ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং দুজন জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

অনশনে থাকা বাকিরা তীব্র শীত আর অনাহারে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তাদের আটজনের শরীরে স্যালাইন পুশ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত- গেল ১৩ জানুয়ারী বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলের প্রভোস্ট সহযোগী অধ্যাপক জাফরিন আহমেদ লিজার বিরুদ্ধে ‘অসদাচরণের’ অভিযোগে প্রভোস্ট কমিটির পদত্যাগসহ তিন দফা দাবি আদায়ে আন্দোলনে নামেন ওই হলের ছাত্রীরা। ঐ রাত ৯টা থেকে ৩টা পর্যন্ত উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন হলের শিক্ষার্থীরা। দাবি পূরণ না হওয়ায় আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন তারা। শনিবার সন্ধ্যায় আন্দোলনরতদের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের জন্য সকল বিভাগের ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।

রোববার বেলা আড়াইটার দিকে একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিং শেষে রেজিস্ট্রার ভবন থেকে বের হলে উপাচার্যের পিছু নেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় উপাচার্য ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়া আইসিটি ভবনে আশ্রয় নিলে শিক্ষার্থীরা  সেখানে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে রোববার বিকেলে এসে সহিংসতায় রূপ নেয় আন্দোলন। পুলিশ এসে উপাচার্যকে উদ্ধার করে। এসময় ২১টি সাউন্ড গ্রেনেড ও ৩২ রাউন্ড শটগানের গুলি ছোড়ার কথা জানায় পুলিশ। আহত হন শিক্ষার্থীসহ অনেকেই। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। সোমবার দুপুর ১২টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে উপাচার্যের পদত্যাগের একদফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা। সোমবার বিকেলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন। পরে তারা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন।

এদিকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় ৮ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে গণিত বিভাগের অধ্যাপক ডা. রাশেদ তালুকদারকে।