ঔষধ ও কসমেটিকস বিল, ২০২৩’ সংসদে পাস

কসমেটিকস ব্যবসায় লাইসেন্স নিতে হবে, ওষুধ মজুতে জেল

কসমেটিকস ব্যবসায় লাইসেন্স নিতে হবে, ওষুধ মজুতে জেল

কসমেটিকসে নকল ঠেকানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এখন থেকে কসমেটিকস ব্যবসার জন্য ঔষধ প্রশাসন থেকে লাইসেন্স নিতে হবে। এই বিধান করে ‘ঔষধ ও কসমেটিকস বিল, ২০২৩’ সংসদে পাস হয়েছে। কসমেটিকসের গুণাগুণ সম্পর্কে বিজ্ঞাপনে অসত্য তথ্য দিলে তিন লাখ টাকা জরিমানার বিধানও রয়েছে আইনে।

এছাড়া বিলে ওষুধের কৃত্রিম সংকট ও বেশি মুনাফার লোভে মজুত করলে ১৪ বছর জেল ও ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। কসমেটিকসের অবৈধ ব্যবহারেও শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সংসদের বৈঠকে বিলটি উত্থাপন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। পরে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। এর আগে বিলের ওপর আনা বিরোধীদলীয় সদস্যদের জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনীর প্রস্তাব নিষ্পত্তি করা হয়। যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদসহ কয়েকজন এমপির আনা কয়েকটি সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।

বিলের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির সদস্য ফখরুল ইমাম ও শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, কসমেটিকস এবং ওষুধ দুটি ভিন্ন দ্রব্য। কিন্তু হঠাৎ করেই ঔষধ প্রশাসনের হাতে কেন দেওয়া হচ্ছে। এই বিষয়ে বৈঠকের আয়োজন করা হলেও কসমেটিকস ব্যবসায়ীদের সেখানে ডাকা হয়নি।

১৯৪০ সালের ড্রাগস আইন এবং ১৯৮২ সালের আইন দুটিকে এক করে যুগোপযোগী করে এই বিল আনা হয়েছে এমন দাবি করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দুই আইন একীভূত করে একটি করা হয়েছে। কসমেটিকস ব্যবসায়ীদের ক্ষতি সরকারের উদ্দেশ্য নয়। মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং ভেজাল ওষুধ ও কসমেটিকস প্রতিরোধ করাই সরকারের উদ্দেশ্য।

বিলে বিউটি পার্লার বা অন্য কোথাও নিবন্ধিত চিকিৎসক ছাড়া মানবদেহে ফিলার, বোটক্স, গ্লুটাথিয়ন বা অন্য কোনও কসমেটিকস প্রয়োগ দণ্ডনীয় অপরাধ বলে গণ্য হবে।

প্রস্তাবিত বিলে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের দায়িত্ব ও কর্মপরিধি সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কসমেটিকস বিক্রি, আমদানি ও উৎপাদন করতে হলে লাইসেন্স নিতে হবে। ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর লাইসেন্স অথরিটি হিসেবে কাজ করবে। এখন যারা কসমেটিকসের ব্যবসা বা উৎপাদন করছেন তাদের লাইসেন্স নিতে হবে। এ জন্য ঔষধ প্রশাসন বিধি প্রণয়ন করবে।

চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করলে ২০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মাধ্যমে ওষুধের নিরাপত্তা, কার্যকারিতা, নতুন ওষুধ, ভ্যাকসিন মেডিক্যাল ডেভেলপ করার বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।

বিলে বলা হয়েছে, ওভার দ্যা কাউন্টার ওষুধ ছাড়া রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ব্যতীত কোনও ওষুধ বিক্রি ও ব্যবহার বন্ধ থাকবে এবং এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। মেডিক্যাল ডিভাইস ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত আইনে ধারা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মেডিক্যাল ডিভাইসকে ওষুধ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। কিছু ওষুধের দাম সরকার নির্ধারণ করে দেবে বলে বিলে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিলের তফসিলে ৩৩ ধরনের অপরাধ চিহ্নিত করে সেগুলোর ক্ষেত্রে কী সাজা হবে তা উল্লেখ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে অপরাধের ধরন অনুযায়ী সর্বনিম্ন ১০ হাজার টাকা জরিমানা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের জেল ও ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান করা হয়েছে।

কসমেটিস উৎপাদনকারী, আমদানিকারী, বাজারজাতকারী বা বিক্রেতা কোনও কসমেটিসের গুণাগুণ সম্পর্কে অসত্য বিজ্ঞাপন দিলে তিন লাখ টাকা জরিমানা গুনতে হবে।

বিলের ওপর আলোচনা

বিলের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে জাপার সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিজের দায়িত্ব ঠিকভাবে করতে পারছে না। ২৩৬টি ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে। এসব বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কিছুই করছে না। এরমধ্যে আবার তাদের কেন এই দায়িত্ব দেওয়া হবে, বিষয়টি পরিষ্কার নয়।

জাপার আরেক সদস্য রওশন আরা মান্নান বলেন, দেশের বাজারে পাওয়া দামি ব্র্যান্ডের কসমেটিকস কেরানীগঞ্জ ও  জিনজিরাসহ পুরনো ঢাকায় তৈরি হয়। এগুলো তৈরি হয় ক্ষতিকর কেমিক্যাল ও আটা ময়দা দিয়ে। ফলে এগুলো ব্যবহার করে মানুষ ক্যানসারসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

গণফোরাম সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, এই বিলের সঙ্গে স্বার্থান্বেষী মহলের স্বার্থ জড়িত। এর মধ্যে বেশ কিছু ধারা জনস্বার্থ পরিপন্থি হতে পারে। তাই বিলটি তড়িঘড়ি পাস করা ঠিক হবে না।

গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, সাধারণ মানুষকে প্রতি মুহূর্তে অসাধু ব্যবসায়ী ও লুটেরারা শোষণ করছেন। তাদের সম্পর্কে বলা যাবে না। আর বাণিজ্যমন্ত্রী তো নিজেই বলে দিয়েছেন সিন্ডিকেটে হাত দেওয়া যাবে না। অবশ্য মানুষ এখন বলে, বাণিজ্যমন্ত্রী নিজেই সিন্ডিকেটের মূলহোতা এবং গডফাদার। তাই স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে আমার অনুরোধ, এমন কিছু করবেন না যাতে মানুষের কষ্ট হয়।

দেশের প্রতিটি ব্যবসা অসাধু সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি বলে দাবি করেন গণফোরামের সংসদ সদস্য। তিনি বলেন, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর থেকে কিছু ওষুধের মূল্য তালিকা দেওয়া হয়। কিন্তু সেটার কোনও মনিটরিং নেই। একটা প্যারাসিটামলের দাম এক টাকা। কিন্তু এর সঙ্গে একটা কিছু যোগ করে দুই টাকা বা তিন টাকা করে দেওয়া হয়। যার ইচ্ছেমতো দাম ধরে দেয়। কারণ এটি মূল্য তালিকায় নেই।