বলা হয়নি কখনো 'সুন্দর'

বলা হয়নি কখনো 'সুন্দর'

নানান রংয়ের ছোট ছোট ইলেকট্রিক বাতি দিয়ে পুরো বাড়ি সাজানো। বেশ দূর থেকে দেখে যে-কেউ মনে করবে এ বাড়ির কারো বিয়ে-টিয়ে হচ্ছে। সত্যিই বিয়ে হচ্ছে; আজ উপমার বিয়ে। সেই বিয়ের অনুষ্ঠানে যাচ্ছে বাবু। বাবু রিক্সায় চড়ে বিয়ে বাড়ির আরেকটু কাছাকাছি আসতেই দরজার সামনে বাহারি রংয়ের কাপড় দিয়ে তৈরি গেট দেখতে পায়। এমন গেট দেখে রিক্সার ওপর বসে বাবু ৯০ এর দশকের বিয়ে বাড়ির কথা মনে করে। তখন সে ছোট।

বিয়ের দিনে রঙিন কাগজ কেটে নকশা তৈরি করতো, আর নকশাগুলো দড়িতে টাঙ্গিয়ে বাড়ি সাজানো হতো। আর গেট! গেট তো তৈরি করতো কলাগাছ, বাঁশ দিয়ে এবং রঙিন কাগজ দিয়ে। এগুলো সব করতো পাড়ার আধবয়সী ছেলেপেলেরা। একথা ভাবতে ভাবতে তার রিক্সা ওই বাড়ির সামনে এসে থামে। রিক্সা থামিয়ে রিক্সার ড্রাইভার বলে "মামা বিয়ে বাড়িত তো এসে গেছি। নামবেন না?" 

বাবু রিক্সা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে খুব অবাক দৃষ্টিতে বাড়িটা দেখতে থাকে। আজ খুব অচেনা লাগছে বাড়িটা। অথচ বাড়ির প্রতিটি মানুষ তার পরিচিত। এই বাড়িতে এবারই যে প্রথম এসেছে বা নতুন দেখছে এমন নয়৷ এর আগে উপমার দাওয়াতে অনেকবার এসেছে এখানে। দাওয়াতে এসে কখনো কখনো তারা একসঙ্গে বাহিরে হাঁটাহাঁটি করেছে, অনেক গল্প করেছে আবার কোনো সময় বাহিরের রেস্তোরাঁয় বসে একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করেছে...

এদিকে রেস্তোরাঁর কথা মাথায় আসতেই বাবু উপমার কথা ভাবে; রেস্তোরাঁয় যাবার আগে উপমা সাজুগুজু করে বের হতো। সাজলে কোনো কোনো মেয়েকে ছবির মতো সুন্দর লাগে। এমন মেয়েদের মধ্যে উপমাও একজন এমনটা ভাবে বাবু। কিন্তু তাকে যে সুন্দর দেখায় সে কথা কখনো উপমাকে বলতো না, উল্টো তাকে বাবু প্রায়ই বলতো "তোমাকে না সাজলেই অনেক সুন্দর লাগে। সাজলে তোমার প্রকৃত সৌন্দর্য যেন হারিয়ে যায়।" এই কথা যে অনেক বড় মিথ্যা কথা সেটা খুব ভালো করে জেনেও এমন করে কেন বলতো সে? আজ তার উত্তর খোঁজে। তার কাছে বারবার মনে হচ্ছে, সে কম সেজে থাকলে অন্যরা তার সৌন্দর্য সহজে বুঝতে পারবে না। আবার একটু পরে মনে হয়, শুধুই কি সৌন্দর্য খোঁজে পাওয়া না-কি উপমাকে হারানোর ভয়। আবারও দ্বিধা চলে আসে তার উত্তরের মাঝে...

এমন এলোমেলো কথা ভাবছে কেন সে? আজ তো উপমার বিয়ে। তবে কেন তার এমন হচ্ছে। নিজের কাছে নিজেই প্রশ্ন করে বাবু। কোনো উত্তর আসে না মাথায়। এদিকে বিয়ের সকল পর্ব প্রায় শেষের দিকে। বাবুকেও ফিরতে হবে তার ঠিকানায়। সে বিদায় নিতে গেছে উপমার কাছে। এতক্ষণে বৌ সেজে বসে আছে উপমা। আজ অনেক সাজুগুজু করেছে সে। কি অসম্ভব রকমের সুন্দর দেখাচ্ছে তাকে! কিন্তু বাবু আর তাকিয়ে থাকতে পারছে না তার দিকে। তাকিয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে খুব ...

লেখক
সহসভাপতি- শাবিপ্রবি প্রেসক্লাব