নির্বাচন করার জন্য দল থেকে পদত্যাগ করছেন আরিফ!
সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হচ্ছেন আরিফুল হক চৌধুরী। বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন তিনি। এ জন্য দল থেকে পদত্যাগ করবেন আরিফ। আরিফুল হক চৌধুরীর ঘনিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আরিফুল হক চৌধুরী বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। তিনি যুক্তরাজ্য রয়েছেন। আজ সোমবার তার দেশে ফোর কথা।
সিলেটসহ আরও ৪টি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন ঘিরে সম্ভাব্য প্রার্থীরা আগে থেকে চালিয়ে যাচ্ছেন প্রচার-প্রচারণা। বিশেষ করে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের ডজন খানেক নেতা কৌশলে নৌকার প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালিয়ে আসছেন। নৌকা পেতে কেন্দ্রে লবিং তদবিরও রক্ষা করে চলেছেন। রোববার (৯ এপ্রিল) এসব প্রার্থী হতে আগ্রহীদের ৫ জন দলের মনোনয়ন কিনেছেন।
অন্যদিকে, জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলনের নেতারাও সমানতালে প্রচারণা চালালেও নীরব কেবল বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এ অবস্থায় আলোচনায় আসেন আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী দলটির যুক্তরাজ্য শাখার যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
অন্যদিকে, বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য পদ বহন করা আরিফুল হক চৌধুরী প্রার্থী হচ্ছেন না-এমন খবর এতদিন বলাবলি হচ্ছিল। লোকমুখের কথা যেন সত্যি হতে চলছিল মেয়র নির্বাচনের আগে আরিফুল হক চৌধুরীর শারীরিক অসুস্থতা। সম্প্রতি শারীরিক অবস্থাও ভালো যাচ্ছিল না তার। হৃদরোগে আক্রান্ত হলে হার্টে ব্লক ধরা পড়ার পর ৩টি রিং স্থাপন করা হয়। অসুস্থতা কাটিয়ে পুরোনো উদ্যমে কর্মে ফিরলেও সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় দলীয় সিদ্ধান্ত।
যে কারণে বিএনপি নির্বাচনে না যাওয়া নিয়ে তার প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা ছিল ক্ষীণ। তবে হঠাৎ মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর যুক্তরাজ্য সফর নিয়ে সিলেটে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি হয়।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি নির্বাচনে না গেলেও আরিফুল হক চৌধুরী যাতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন, দল থেকে গ্রীণ সিগন্যাল নিতে তার যুক্তরাজ্য যাত্রা। হয়েছেও তাই। বিএনপি নির্বাচনে না গেলেও দলীয় পদ ছেড়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও আরিফুল হক চৌধুরীকে বহিস্কার হতে বহিস্কার হতে হবে না।
ফলে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে সিসিক নির্বাচনে তৃতীয়বারের মতো মেয়র পদপ্রার্থী হচ্ছেন আরিফুল হক চৌধুরী। যে কারণে যুক্তরাজ্য থেকে নির্ধারিত সফর সংক্ষিপ্ত করে সোমবার (১০ এপ্রিল) দেশে ফিরছেন তিনি। মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর ঘনিষ্টজন এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এ বিষয়ে আরিফুল হক চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলেও তিনি মৌনতা অবলম্বন করেন। দেশে ফিরে তার অবস্থান জানান দেবেন এমনটি ইঙ্গিত দেন তিনি।
২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সব কেন্দ্র মিলিয়ে আরিফুল হক চৌধুরীর প্রাপ্ত ভোট ছিল ৯২ হাজার ৫৯৩ ভোট। আর বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের প্রাপ্ত ভোট ছিল ৮৬ হাজার ৩৯৭। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের চেয়ে ৬ হাজার ১৯৬ ভোট বেশি পেয়েছিলেন আরিফুল হক চৌধুরী।
সিলেট পৌরসভাকে সিটি করপোরেশন ঘোষণা করা হয় ২০০২ সালে। প্রথম নির্বাচন হয় চারদলীয় জোট সরকার আমলে। এতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়েছিলেন বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। তিনি পৌরসভা থাকাকালে চেয়ারম্যান থেকে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। পরে ২০০৮ সালে কারাগারে থাকা অবস্থায় দ্বিতীয়বার বিজয়ী হন কামরান। তৃতীয় নির্বাচন হয় ২০১৩ সালের ১৫ জুন। এ নির্বাচনে কামরানের সঙ্গে মেয়র পদে প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী। এতে আরিফুল হক পেয়েছিলেন ১ লাখ ৭ হাজার ৩৩০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বদরউদ্দিন আহমদ কামরান পেয়েছিলেন ৭২ হাজার ২৩০ ভোট।
সর্বশেষ ২০১৮ সালের সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের সঙ্গে দলীয় ফোরামে তীব্র লড়াই করেছিলেন আসাদ উদ্দিন আহমদ ও অধ্যাপক জাকির হোসেন। এরপর দলের মনোনয়ন পান কামরানই। ঘটনাবহুল ওই নির্বাচনে কামরান হেরে যান। এতে দলীয় সর্তকবার্তাও পেয়েছিলেন সিলেটের নেতারা।
কামরানের মৃত্যুর পর থেকে মেয়র পদে আরিফুল হক চৌধুরীকে ভোটের মাঠে চ্যালেঞ্জ করার মতো প্রার্থীর অভাব দেখা দেয়। তবে আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়ে মাঠে নামেন আসাদ উদ্দিন, অধ্যাপক জাকির হোসেন, সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও সিটি কাউন্সিলর আজাদুর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক এটিএম হাসান জেবুল ও সাংগঠনিক সম্পাদক কামরানপুত্র ডা. আরমান আহমদ শিপলু। সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক কাউন্সিলর বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালিক।
সম্প্রতি লন্ডন থেকে এসে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী মেয়র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় মাঠ গরম হয়ে ওঠে। আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নিজের অবস্থান জানান দিতে তিনি রাতদিন গণসংযোগ করে যাচ্ছেন।