সরকারের সিদ্ধান্তেই রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নিচ্ছে নির্বাচন সংস্কার কমিশন
নির্বাচন বিষয়ক সংস্কারে মতামত নিতে ২২টি রাজনৈতিক দল ও জোটকে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন সংস্কার কমিশন। ইতোমধ্যে এসব দল ও জোটের কাছে চিঠি পৌঁছে গেছে।
সংস্কার কমিশনের সূত্র বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছে, কমিশনের পরামর্শে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে চিঠি দিতে সম্মতি দেওয়া হয়। এসব দল ও জোট নির্বাচনে সরকারই ভূমিকা রেখেছে বলে সূত্রটি জানায়।
কাদের চিঠি দেওয়া যাবে, কাদের দেওয়া যাবে না, তাও ঠিক করেছে সরকার, কমিশনের নির্ভরযোগ্য সূত্র এ তথ্য জানায়।
কমিশনের উচ্চ পর্যায়ের সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে ২২টি রাজনৈতিক দল ও জোটকে লিখিত মতামত দিতে আহ্বান জানিয়ে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন সংস্কার কমিশন। এই ২২টি দল ও জোটের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীও রয়েছে।
কমিশনের একজন সদস্য জানান, নির্বাচন কমিশনে জামায়াতের নিবন্ধন না থাকলেও দলটিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আইনত এতে কোনও বাধা সৃষ্টি হতে পারে কিনা ভবিষ্যতে, এমন প্রশ্নের জবাবে কমিশনের একজন সদস্য সোমবার (১১ নভেম্বর) রাতে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এগুলো সমাধান হয়ে যাবে। গভর্নমেন্ট এগুলো দেখেই দিয়েছে। আমাদের সিদ্ধান্ত না এগুলো, সরকারের সিদ্ধান্ত।’
গত ৩ অক্টোবর নির্বাচন সংস্কার কমিশন গঠন করে ড. ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। এরইমধ্যে কমিশন নির্বাচন সংশ্লিষ্ট আইন-বিধিগুলো পর্যালোচনা শুরু করেছে। এই প্রক্রিয়ায় সাধারণ মানুষের মতামতও চায় কমিশন। আগামী ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত মতামত দেওয়া যাবে।
জানতে চাইলে কমিশন প্রধান অধ্যাপক ড. বদিউল আলম মজুমদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা অলরেডি রাজনৈতিক দল এবং জোটগুলোকে চিঠি দিয়েছি। একইসঙ্গে আমরা কন্সালটেশন শুরু করেছি। সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার আবু হেনার সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা এখন চিহ্নিত করেছি কোন কোন ক্ষেত্রে মতামত নেবো। কোন কোন ক্ষেত্রগুলো আমাদের অগ্রাধিকার, এগুলো চিহ্নিত করেছি।’
‘এখন আমরা মতামত নিচ্ছি সাধারণ মানুষের এবং একটা ওয়েবসাইট স্থাপন করেছি, ই-মেইল অ্যাড্রেসে মতামত নিচ্ছি। আমরা মানুষের কাছ থেকে সুপারিশ নিচ্ছি। আমরা সব আইন-কানুন, বিধিবিধান লাইন বাই লাইন ধরে ধরে পড়ছি।’
কবে নাগাদ প্রতিবেদন দেবে কমিশন, এমন প্রশ্নের জবাবে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘ডিসেম্বরের আগে হবে না, অনেক কাজ।’
কমিশন সূত্র জানায়, সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা বা মতামত নেওয়ার পক্ষে ছিল না। পরে কমিশনের ভেতর থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে ‘এড়িয়ে না’ যাওয়ার পরামর্শ দিলে সরকার পক্ষ রাজি হয় এবং কাদের (চিঠি) দেবে আর দেবে না, এসবও উল্লেখ করা হয়।
এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে যেটা নেবো, সেটা হলো তাদের সুপারিশ। আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করবো না। কারণ সংলাপের আমাদের কোনও সুযোগ নেই। আমাদের তো নেগোসিয়েশনের কোনও সুযোগ নাই। আমাদের কাজটা হবে টেকনিক্যাল কাজ, কতগুলো সুপারিশ করা, আমরা তাদের কাছ থেকে সুপারিশ নেবো।’
অধ্যাপক মজুমদার আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নেগোসিয়েশন করলে ‘এটা বাদ দাও’ ‘ওটা যোগ করো’— আমাদের সেটা করার সুযোগ নাই। এটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার করবে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে। সব কমিশন যখন রিপোর্ট জমা দেবে—তখন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার বসবে, বসে একটা সমঝোতা করার চেষ্টা করবে।’
প্রসঙ্গত, কমিশনের কমিটির কার্যপরিধি ও সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য— গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত নির্বাচন সংক্রান্ত ধারাগুলো, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২ (আরপিও), যার মধ্যে অন্যতম হলো জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধিমালা পর্যালোচনা, নির্বাচন সংক্রান্ত সব ফরম পর্যালোচনা, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের লক্ষ্যে প্রস্তাবনা তৈরি (যেমন- নির্বাচন কমিশন, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, মাঠ প্রশাসন, জাতীয় পরিচয়পত্র-এনআইডি নিবন্ধকের কার্যালয়), বিদ্যমান নির্বাচন পদ্ধতি পর্যালোচনা ও প্রয়োজনীয় সুপারিশ তৈরি।
আরও রয়েছে বর্তমান নির্বাচন পরিচালনা ব্যবস্থা পর্যালোচনা ও সুপারিশ, প্রবাসী ও নির্বাচনি দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় আইন ও কারিগরি দিক পর্যালোচনা ও সুপারিশ তৈরি, নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ, বাংলাদেশে অতীতে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনগুলো মূল্যায়ন এবং দুর্বলতা ও শিক্ষণীয় চিহ্নিত করা, বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর নির্বাচনি প্রক্রিয়া পর্যালোচনা এবং শিক্ষণীয় দিকগুলো চিহ্নিত করা, অংশীজনের কাছ থেকে মতামত গ্রহণ এবং সংস্কার প্রস্তাবনাসহ প্রতিবেদন তৈরি।