সিলেটে এক আঙিনায় মসজিদ-মন্দির

সিলেটে এক আঙিনায় মসজিদ-মন্দির

‘পৃথিবীটা মানুষের হোক, ধর্ম থাকুক অন্তরে, মসজিদে আজান হোক, ঘণ্টা বাজুক মন্দিরে।’ এই পঙতিমালার বাস্তবরূপ যেন সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলায়। একই আঙিনায় দুই ধর্মের দুই উপাসনালয় মসজিদ ও মন্দির। প্রায় ৭০ বছর ধরে এই মন্দির ও মসজিদে শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের উপসানা করে আসছেন হিন্দু ও মুসলমানরা।

বিয়ানীবাজার উপজেলার তিলপাড়া ইউনিয়নের শানেস্বর বাজারে দেখা গেছে সম্প্রীতির এমন দৃশ্য। ওই বাজারের একই উঠানে জামে মসজিদ ও সার্বজনীন পূজা মণ্ডপ রয়েছে। যে যার মতো ধর্ম পালন করে চলেছেন। এখন চলছে শারদীয় দুর্গোৎসব।

স্থানীয়রা জানান, সোনাই নদীর তীরবর্তী বাজারে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা মুসলমান ব্যবসায়ীরা নামাজ পড়ার জন্য মন্দিরের পাশেই একটি ছোট ঘর তোলেন। আর সেটির নামকরণ করা হয় শানেস্বর বাজার জামে মসজিদ হিসেবে। ওই সময় থেকে এক উঠোনে চলছে দুই ধর্মের দুই উপাসনালয়।

পূজা শুরুর আগে মসজিদ ও মন্দির কমিটি বসে সিদ্ধান্ত নেন। আজানের সময় থেকে নামাজের প্রথম জামায়াত শেষ না হওয়া পর্যন্ত মন্দিরে ঢাক ও ঢোলসহ যাবতীয় শব্দ বন্ধ থাকে। নামাজের প্রথম জামায়াত শেষ হলে মন্দিরের কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়। এখন পর্যন্ত মন্দির-মসজিদ নিয়ে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

মসজিদের নিয়মিত মুসল্লি সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘মসজিদের পাশেই মন্দির। মসজিদ-মন্দির প্রায় কাছাকাছি সময়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমরা মন্দির কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করি। তারাও আমাদের সহযোগিতা করেন। নামাজের সময় মন্দিরের ঢাক-ঢোল বন্ধ রাখা হয়। কোনো বিশৃঙ্খলা ছাড়াই যুগ যুগ ধরে চলছে এ সম্প্রীতির বন্ধন।’

স্থানীয় সনাতন ধর্মীয় নেতা বিবেকানন্দ দাস বিবেক জানান, ‘এখানে মসজিদ-মন্দিরকে ঘিরে সামান্য বিশৃঙ্খলাও হয় না। জন্মের পর থেকে এভাবে চলতে দেখছি আমি।’

বিয়ানীবাজার প্রেস ক্লাবের সভাপতি সজীব ভট্টাচার্য বলেন, ‘একই উঠানে মসজিদ-মন্দির হলেও উভয় ধর্মের মানুষ সম্প্রীতির বন্ধনে থেকে স্ব-স্ব ধর্ম পালন করে আসছেন। কোনো বিশৃঙ্খলা ছাড়াই যুগ যুগ ধরে চলছে এ সম্প্রীতির বন্ধন।’

বিয়ানীবাজার থানার ওসি দেবদুলাল ধর বলেন, ‘আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শতভাগ নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে কাজ করছি যাতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি না হয়। মসজিদ-মন্দিরকে ঘিরে কোনোদিন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। এরপরও প্রশাসন সতর্ক থাকে। সব ধর্মের মানুষ একে-অপরকে সহায়তা করে।’