হরতাল অবরোধ ডাকা মানেই গাড়ি পোড়ানোর ‘উৎসব’
হরতাল অবরোধ মানেই কি মানুষকে ভয় দেখানো? কয়েক দফায় টানা অবরোধে দেড় শতাধিক গাড়ি পুড়েছে, এরইমধ্যে রবিবার শুরু হচ্ছে ৪৮ঘন্টার হরতাল। তার আগের সন্ধ্যা থেকেই শুরু হয়েছে গাড়ি পোড়ানো। চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় ধ্বংসের মুখে জীবন-জীবিকা, বিপর্যস্ত মানুষ। তাদের মনে প্রশ্ন- যে জনগনকে নিয়ে রাজনীতি করবেন তাদের ভয় দেখিয়ে সাথে পাবে কি বিএনপি? তাহলে কেনো এই ক্ষয়ক্ষতি।
শনিবার সন্ধ্যাতেই রাজধানীর গুলিস্তান ও আগারগাওতে দুটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। ব্যস্ততম দুই সড়কে মুহুর্তে খালি হয়ে যায়। আতঙ্কিত মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা চালাতে থাকে আজ রাতে আর ওই পথে যাওয়া নিরাপদ হবে কিনা।
গত ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশের নামে রাজধানীতে বিএনপির হামলা ও তান্ডবের ঘটনার পরে ডাকা অবরোধের বিষয়ে ১০ নভেম্বর তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপির নেতারা নিজেরা আত্মগোপনে থেকে কর্মী ও সন্ত্রাসীদের টাকা দিয়ে গাড়ি পোড়ানো, মানুষের ওপর হামলা পরিচালনা করাই তাদের অবরোধ কর্মসূচি। এগুলো কোনো রাজনৈতিক দলের কাজ না, সন্ত্রাসী সংগঠনের কাজ।
আগাওগাওতে যখন বাসে আগুন লাগানো হয় তার মিটি দশেক আগে সে এলাকা পার হয়েছে শ্যাওড়াপাড়া নিবাসী রকিবুল রাতুল ও তার পরিবার। তার সঙ্গে ছিলো ৫বছর বয়সী সন্তান। স্বজনদের একের পর এক ফোনে তিনি জানতে পারেন তার চলার পথেই আগুন লাগানো হয়েছে। উদ্ভ্রান্ত রাতুল প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, হরতাল অবরোধ কর্মসূচি দিয়েছে। মানুষ একাত্ম বোধ করলে তাদের ডাকে সাড়া দিবে। এভাবে যখন তখন যেখানে সেখানে আগুন দিলে ভয়েতো স্বাভাবিক কাজগুলোও করতে বের হতে পারবো না। তারা এই ভয়টাই ছড়িয়ে দিতে চায়। কিন্তু তাতে জনগনকে সাথে পাওয়ার কোন কারণ নেই।
এদিকে আবারও রবিবার থেকে হরতাল শুরু হচ্ছে বলে শনিবার রাজধানীর বেশিরভাগ সড়কে ছিলো উপচে পড়া ভীড়। রিক্সার সংখ্যা বেশি। এবং বেশিরভাগ রিক্সা বেশি সময় চালিয়ে টাকা রোজগারের চেষ্টায় ছিলো। রিকশাচালক সোহেল বলেন, দুই সপ্তাহ পরপর ঠিকঠাক আয় রোজগার নাই। আমাদেরকে ব্যাংকে জমানো টাকা থাকে যে তুলবো আর খাব? যে দলের লোকজন এইটা বুঝে না, তারা আবার ভোটও চায়। আমার আয় না থাকলে আমি খাব কী? আর আমার পরিবারকে খাওয়াব কী? আন্দোলন সংগ্রাম যাই করেন না কেনো, আমাদের পথ খোলা রাখেন।
হরতাল-অবরোধে রিকসা-ভ্যান ও অটোরিকসা চালক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, দিনমজুরগণ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন উল্লেখ করে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো: সেকেন্দার আলী বলেন, অটোরিকসা চালককে মালিকের দৈনিক ভাড়া পরিশোধ করতে হচ্ছে, কিন্তু তারা পাচ্ছে না যাত্রী। শ্রমিকরা পাচ্ছে না কাজ। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা টিকে থাকতে পারছে না। সরবরাহ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হওযায় তাদের ত্রাহিত্রাহি অবস্থা। সরবরাহ চেইন বিচ্ছিন্ন হওয়ায় কৃষি উপকরণ যেমন সার, বালাইনাশক, বীজ, গ্রোথ রেগুলেটর, সেচ কাজের জন্য ডিজেল ইত্যাদি স্থানীয় বাজারে পৌছাতে পারছে না, ফলে কৃষক এগুলো সংগ্রহ করতে পারছে না। আবার কম সরবরাহের কারণে এগুলোর দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে কৃষকের উৎপাদিত পণ্য শহরের বাজারে পাঠাতে পারছে না। সার্বিকভাবে কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।