আওয়ামী লীগের এমপি হতে চান সিলেটের সবাই!
এলাকার মানুষের সাথে যোগাযোগ নেই। ভোটাররাও নাম শুনেননি কোন দিন। রাজনীতির ময়দানেও দেখা মিলেনি কোনদিন। দুর্যোগ-দুর্বিপাকেও মানুষের পাশে দেখা যায়নি তাদের। কিন্তু আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা নৌকার টিকেট নিয়ে সংসদ সদস্য হতে চান।
আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেলেই সংসদে যাওয়া নিশ্চিত- এমন চিন্তা থেকে সিলেটে নেতা, পাতিনেতা, প্রবাসী, পেশাজীবী সবাই প্রার্থী হতে চান। আবার কেউ কেউ মনোনয়ন পাবেন না জেনেও রাজনৈতিক প্রোফাইল ‘সমৃদ্ধ’ করতে দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করছেন। গতকাল রবিবার পর্যন্ত দু’দিনে সিলেট জেলার ৬টি আসনে ৩১ জন আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। আগামী দু’দিনে আরও অন্তত অর্ধশত নেতা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দিবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ এখনো অনিশ্চিত। ঘোষিত তফশিল বাতিল ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে তারা রাজপথে আন্দোলনরত। এই অবস্থায় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা নির্বাচন আয়োজনকে সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখলেও সিলেটের বেশিরভাগ মনোনয়নপ্রত্যাশী আওয়ামী লীগ নেতা নির্বাচনকে ‘ছেলের হাতে মোয়া’ হিসেবে ভাবছেন।
তাদের ধারণা বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিবে না এবং অনেকটা প্রতিদ্বদ্বতাহীনভাবেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিজয়ী হবেন। তাই নৌকার টিকেট পাওয়া মানেই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া- এমন ধারণা পোষন করছেন তারা। যে কারণে দলীয় মনোনয়নের জন্য সবাই দাঁড়িয়েছেন এক লাইনে।
ইউপি চেয়ারম্যান, কলেজের শিক্ষক, সাবেক পৌর মেয়র ও প্রবাসী থেকে শুরু করে দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ থেকে কেউ বাদ যাচ্ছেন না। যদিও এসব নেতাদের অনেকেরই নাম এলাকার মানুষ এর আগে শুনেননি। করোনা মহামারি ও ভয়াবহ বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগেও কখনো দেখা মিলেনি এসব নেতাদের অনেকেরই।
গতকাল রবিবার পর্যন্ত দু’দিনে সিলেট জেলার ৬টি আসনে মোট ৩১ জন নেতা আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে সিলেট-১ আসনে একমাত্র মনোনয়নপত্র সংগ্রহকারী হিসেবে নাম রয়েছে বর্তমান সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। আর সবচেয়ে বেশি মনোনয়পত্র সংগ্রহ হয়েছে সিলেট-৩ ও ৬ আসনে। এ দুটি আসনে ৯ জন করে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। গতকাল রবিবার পর্যন্ত সিলেট-২ আসনে ৩ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
তারা হলেন- সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক জগলু চৌধুরী ও আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল গণি।
সিলেট-৩ আসনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন বর্তমান সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব, বিএমএ’র কেন্দ্রীয় মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল, আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ শমসের জামাল, প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা ব্যারিস্টার মনির হোসাইন ও মিসবাউর রহমান, বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক ফেডারেশনের সেক্রেটারি আবদুর রকিব মন্টু, আওয়ামী লীগ নেতা হুমায়ূন আহমদ ও মো. মতিউর রহমান। সিলেট-৪ আসনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও প্রবাসী কল্যান মন্ত্রী ইমরান আহমদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মাহফুজুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য গোলাপ মিয়া, গোয়াইনঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া হেলাল ও গোয়াইনঘাট কলেজের অধ্যক্ষ ফজলুল হক।
সিলেট-৫ আসনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ড. আহমদ আল কবীর ও ঢাকাস্থ সিলেট বিভাগীয় আইনজীবী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোশতাক আহমদ এবং তাসলিমা খানম। সিলেট-৬ আসনে এবারও দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তার সাথে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন আরও ৮ জন।
তারা হলেন- কানাডা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সরওয়ার হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুর কাদির শাফি এলিম, বিয়ানীবাজার পৌরসভার মেয়র আবুল কাশেম পল্লব, গোলাপগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র জাকারিয়া আহমদ পাপলু, মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মুশফিকুল ইউনুস জায়গীরদার, আওয়ামী লীগ নেতা জাকির হোসেন, যুক্তরাজ্য প্রবাসী নেতা আফসার খান সাদেক ও মোহাম্মদ আবুল কালাম চৌধুরী।