আদালতে আদিলুরের অপরাধ প্রমাণিত: ইউরোপীয় পার্লামেন্ট প্রস্তাবের কী হবে?

আদালতে আদিলুরের অপরাধ প্রমাণিত: ইউরোপীয় পার্লামেন্ট প্রস্তাবের কী হবে?

বিশেষ প্রতিনিধি||

বাংলাদেশের আদালতে আদিলুরের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অথচ ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এক যৌথ প্রস্তাবে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতিতে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে অধিকারের বিষয়ে সাতটি বিষয় উল্লেখ করা হয়। আইনজীবীরা বলছেন, মানবাধিকারের কথা বলে অধিকার সংগঠনটি দেশকে অস্থিতিশীল করতে মিথ্যা তথ্য দিয়েছিলো। সেটাও মানবাধিকারপরিপন্থী। তাই ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রস্তুাব গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

২০১৩ সালে তথ্য প্রযুক্তি আইনে ঢাকার মতিঝিলে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে অভিযান নিয়ে তথ্য বিকৃতির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় বৃহস্পতিবার মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান শুভ্র এবং পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলানের দুই বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও এক মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াতের আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। এ সময় আদালত প্রাঙ্গণে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা দূতাবাসের প্রতিনিধিরা পর্যবেক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

একইদিনে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রস্তাবে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার চর্চার বিষয়ে আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুসরণের আহ্বান জানানো হয়। সেখানে মানবাধিকার সংস্থা ’অধিকার’ বাংলাদেশে একটি এনজিও যার নিবন্ধন বাতিলসহ এক দশকেরও বেশি হয়রানির শিকার হয়ে আসছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। জাতিসংঘ মানবাধিকার পদ্ধতিতে অংশগ্রহণের সময় মানবাধিকার রক্ষার কথা বলে কিন্তু সুশীল সমাজের সংগঠনগুলো সরকারের দ্বারা হয়রানি ও নিপীড়নের সম্মুখীন হয়। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ওই প্রস্তাবে মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অবিলম্বে নিঃশর্তভাবে প্রত্যাহার এবং সংগঠনটির নিবন্ধন পুনরায় চালু করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে বাংলাদেশের আদালতে অধিকারের প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এখন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রস্তাব কতটা গ্রহণযোগ্য হওয়া উচিত সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

মানবাধিকারের কথা বলে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট যে প্রস্তুাব দিয়েছে তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না বলে মন্তব্য করেন আইনজীবী রানাদাশগুপ্ত। তিনি বলেন, মানবাধিকারের কথা বলে অধিকার সংগঠনটি দেশকে অস্থিতিশীল করতে পারে এমন মিথ্যা তথ্য দিয়েছিলো।সেটাও মানবাধিকারপরিপন্থী। 

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজত ইসলাম সমাবেশ করে। পরে সমাবেশস্থলে রাত্রিযাপনের ঘোষণা দেন সংগঠনের নেতারা। তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দিতে যৌথ অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ওই অভিযানে ৬১ জন নিহত হয় বলে দাবি করেছিল অধিকার। তবে সরকারের ভাষ্য, সেই রাতের অভিযানে কেউ মারা যায়নি। পরবর্তীতে ৬১ জন নিহতের তালিকার সত্যতা পাওয়া যায়নি।

তদন্ত শেষে ওই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার আদালতে আদিলুর ও এলানের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। এতে ৩২ জনকে সাক্ষী করা হয়। ওই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর মামলাটি বিচারের জন্য অভিযোগ আমলে নেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল। এরপর ২০১৪ সালে দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামি আদিলুর ও এলান ৬১ জনের মৃত্যুর ‘বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যা’ তথ্য দিয়ে প্রতিবেদন তৈরি ও প্রচার করে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নের অপচেষ্টা চালায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সরকার ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি দেশে-বিদেশে চরমভাবে ক্ষুণ্ন করে।