ছন্নছাড়া বোলিংয়ে সিরিজ হার বাংলাদেশের

ছন্নছাড়া বোলিংয়ে সিরিজ হার বাংলাদেশের

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম দুই টি-টোয়েন্টিতে আক্ষেপ হয়ে ছিল ব্যাটিং। সিরিজ বাঁচানোর লড়াইয়ে তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে তা কাটিয়ে ওঠা গেলেও বোলিংয়ে পাওয়া গেলো না ধারাবাহিকতা। বরং ভয়ডরহীন ক্রিকেটে বাংলাদেশকে শেষ ম্যাচে ৫ উইকেটে হারিয়ে সিরিজ ২-০  তে নিশ্চিত করেছে ক্যারিবীয় দল। তাও আবার ১০ বল হাতে রেখে।  

অথচ ৬.১ ওভারে তিন উইকেট তুলে নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ভীষণ চাপে ফেলে দিয়েছিল বাংলাদেশ। নাসুম আহমেদকে তৃতীয় ম্যাচে ফেরানোর সুফল মেলে প্রথম ওভারেই। যদিও ১৬৪ রানের টার্গেট দিয়ে ওভারের শুরুর বলেই ছক্কা হজম করেন তিনি। শেষ বলটা অবশ্য ফুলার লেংথে করেছিলেন। ব্রেন্ডন কিং প্রলুব্ধ হয়ে ভুল করেই বসেন তার পর। মিড অনে ক্যাচ তুলে দেন মাহমুদউল্লাহর হাতে। ৫ বল খেলা কিং হাত খোলার আগেই সাজঘরে ফেরেন ৭ রান করে।

চতুর্থ ওভারে শেখ মেহেদী শামার ব্রুকসকে এনামুলের তালুবন্দি করালে কিছুটা চাপে পড়ে যায় স্বাগতিক দল। ব্রুকস ১২ বলে ২ চারে ১২ রানে ফিরেছেন। তাতে পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশ যে অবস্থানটায় ছিল, ক্যারিবীদের আরেকটু কম রানে আটকে চাপে রাখতে পারে সফরকারীরা।

প্রথম ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ায় সিরিজ ২-০ তে নিশ্চিত করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। 
প্রথম ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ায় সিরিজ ২-০ তে নিশ্চিত করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
সপ্তম ওভারে সাকিব নিজের প্রথম বলেই ওডিন স্মিথকে এলবিডাব্লিউ করলে পুরোপুরি চাপে পড়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। স্মিথ ৪ বলে ২ রান করতে পেরেছেন। এর পর প্রথম দশ ওভারের স্কোর বাংলাদেশের মতো থাকলেও একটি বেশি উইকেট হারানোয় চাপটা ছিল তখনও। কিন্তু সফরকারীদের ছন্নছাড়া বোলিংয়ে মায়ার্স-পুরান মিলে ম্যাচটা বের করে নেন অনায়াসে। দুজনের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ৫১ বলে ৮১ রানের জুটিতে চাপও কাটিয়ে উঠে তারা।

মায়ার্স ৩৮ বলে ২টি চার ও ৫ ছক্কায় ৫৫ রান করেছেন। এই ব্যাটারকে ফেরান নাসুম। তার পর ঝড় অব্যাহত রাখেন অধিনায়ক নিকোলাস পুরান। বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে ১৮.২ ওভারে একাই জয়ের বন্দরে নিয়ে যান ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। তার আগে রোভম্যান পাওয়েল ৫ রানে আফিফের বলে ফিরলেও জয়ের পথে তা সমস্যা হতে পারেনি। পুরান ৩৯ বলে ৭৪ রানে অপরাজিত ছিলেন। তার ইনিংসে ছিল ৫টি চার ও ৫টি ছয়ের মার। সিরিজ সেরা ও ম্যাচসেরা দুটোই হন এই ক্যারিবীয় অধিনায়ক। 

শেষ দিকে রান দিতে থাকা নাসুম ৪৪ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন। মোস্তাফিজ-শরিফুল ছিলেন প্রচুর ব্যয়বহুল। ২ ওভারে ২৭ রান দেন কাটার মাস্টার। শরিফুল এক ওভারেই ১৩ রান দিয়েছেন। মেহেদী ৪ ওভারে ২১ রানে নিয়েছেন একটি উইকেট। ২ ওভারে ১০ রানে একটি উইকেট নেন সাকিবও। আফিফ ১ ওভার বল করে একটি উইকেট নিলেও দিয়েছেন ১০ রান।  মোসাদ্দেকও ৪ ওভার বল করে দেন ৩৪ রান।    

প্রথম দুই ম্যাচে বাংলাদেশের ব্যাটিং নিয়ে যথেষ্ট সমালোচনা ছিল। ভাগ্য সুপ্রসন্ন বলতে হবে যে প্রথমটি বৃষ্টিতে ভেসে গেছে। একই অবস্থা ছিল এই ম্যাচেও। বৃষ্টির কারণে আধা ঘণ্টা পর ম্যাচ শুরু হলেও তৃতীয় ম্যাচে অবশ্য সেই ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টা দেখা গেছে সফরকারীদের ব্যাটিংয়ে। কিন্তু বল হতে শুরুর আক্রমণের পর সেই ছন্দ তারা ধরে রাখতে পারেনি। 

ব্যাটিংয়ের শুরুটা আহামরি ছিল না যদিও। পাওয়ার প্লেতে পড়েছে ২ উইকেট, রান উঠেছে ৪৪। এনামুল হক-লিটন দাস দেখে শুনে ব্যাটিং করতে থাকায় ২.৪ ওভার পর্যন্ত ছিল না কোনও বাউন্ডারি। পরে আস্তে আস্তে হাত খুলতে থাকেন দুজন। পঞ্চম ওভারে বেশি আগ্রাসী হতে যাওয়ার মাশুল দেন এনামুল। দীর্ঘদিন পর ফেরা এনামুল এই ম্যাচেও করতে পারলেন ১০। খেলেছেন ১১ বল।

সাকিব তার পর নেমে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক হওয়ার চেষ্টায় ছিলেন। কিন্তু গত ম্যাচের ছন্দ এই ম্যাচে টেনে আনতে পারলেন না। রোমারিও শেফার্ডের শর্টার লেংথের বল উঠিয়ে মারতে গিয়েছিলেন। এনামুলের মতো সাকিবও সফট ডিসমিসালে তালুবন্দি হন মাত্র ৫ রানে। তার ৩ বলের ইনিংসে বাউন্ডারি ছিল একটি।  

এর পর ধীরে চলো গতিতে রান তুলেছেন লিটন-আফিফ। এই জুটিতে ১০ ওভারে ২ উইকেটে স্কোর ছিল ৭২। তার পর কিছু বাউন্ডারি, ওভার বাউন্ডারিতে সমৃদ্ধ হতে থাকে স্কোরবোর্ড।

এমন সময়ে হেইডেন ওয়ালশ জুনিয়রের বলে স্লগ করতে গিয়ে বল আকাশে তুলে দেন আফিফ। ভাগ্য ভালো উইন্ডিজ ফিল্ডারদের ব্যর্থতায় জীবন পেয়ে যান তিনি। নাহলে ১৫ রানে ফিরতে হতো তাকে।

লিটন বেশ দূর এগিয়ে নিলেও হাফসেঞ্চুরি থেকে এক রান দূরে থাকতে কপাল পুড়ে তার। হেইডেনের ফ্লাইটেড ডেলিভারিতে এজ হয়ে জমা পড়েন আকিল হোসেনের হাতে। ৪১ বলে ৪৯ রানে ফেরেন এই ওপেনার। তার দায়িত্বশীল ইনিংসটিতে ছিল ৩টি চার ও ২টি ছয়। তাতে ভেঙে যায় ৪৪ বলে আফিফ-লিটনের করা ৫৭ রানের জুটিও। তবে তার বিদায়ের মুহূর্তেই ১২.৫ ওভারে স্কোর হয়ে যায় ৯৯।

আফিফ-মাহমুদউল্লাহ। আফিফ জীবন পেয়ে সুযোগটা ভালো মতোই কাজে লাগিয়েছেন। তুলনায় স্ট্রাইক রেট ভালো ছিল তার। এই সময় তাকে সঙ্গ দিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। যদিও অধিনায়কের ইনিংসটিও টি-টোয়েন্টি সুলভ ছিল না। এলবিডাব্লিউ হওয়ার আগে ২০ বলে ২২ রান করেছেন। তার আগে আফিফ-মাহমুদউল্লাহ জুটি ৩৫ বলে যোগ করেছে ৪৯ রান।

আফিফ তার পরেই দ্বিতীয় হাফসেঞ্চেুরি পূরণ করে রানআউট হয়েছেন। ৩৮ বল খেলে ফেরার আগে করেছেন ৫০। ইনিংসে ছিল ২টি চার ও ২টি ছয়।

শেষ ওভারে মোসাদ্দেক দুটি চার মেরে স্কোরটা নিয়ে যান চ্যালেঞ্জিং একটা জায়গায়। ফলে ৫ উইকেটে রান উঠেছে ১৬৩। মোসাদ্দেক ৬ বলে ১০ রান করেছেন। নুরুল হাসান ২ রানে অপরাজিত ছিলেন।   

২৫ রানে দুটি উইকেট নিয়েছেন হেইডেন ওয়ালশ জুনিয়র। ১৯ রানে একটি নিয়েছেন রোমারিও শেফার্ড, ৩৪ রানে একটি নেন ওডিন স্মিথও।