তুচ্ছ ঘটনায় শাবিতে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ

তুচ্ছ ঘটনায় শাবিতে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ

তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) শাখা ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় নাঈম নামের এক ছাত্রলীগকর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন।

বুধবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে। বর্তমানে তিনি সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

প্রত্যক্ষদর্শীসূত্রে জানা যায়, এদিন সকালে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন নয়াবাজার এলাকায় চায়ের দোকানে পায়ের ওপর পা তুলে বসা নিয়ে ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী রিশাদ ঠাকুর ও জিওগ্রাফি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুর রব নাঈমের কথা কাটাকাটি হয়। এর জের ধরে রিশাদ ঠাকুর নাঈমকে থাপ্পর মারলে তাদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুপুরের দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সামনে আবার সংঘর্ষ বাধে। এসময় রিশাদ ঠাকুর, ইফতেখার আহমদ রানা ও ইউসুফ আহমেদ টিটুর নেতৃত্বে আব্দুর রব নাঈমকে স্ট্যাম্প দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়। ফলে তার মাথা ফেটে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেলে নেওয়া হলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।

এ বিষয়ে রিশাদ ঠাকুর সাংবাদিকদের বলেন, একটা ছোট বিষয় নিয়ে এক জুনিয়রের সঙ্গে ভুল বুঝাবুঝি হয়, তখন সে সিনিয়রের সাথে বেয়াদবি করে। পরে বিষয়টি আমার গ্রুপের জুুনিয়ররা জানার পর সমাধানের জন্য বসলে তখন সে আবারও বেয়াদবি করে। তখন একটু হাতাহাতি হয়। পরে বিষয়টি দুই গ্রুপের সিনিয়র ও প্রভোস্টরা বসে সমাধান করে দেয়।

মারধরের শিকার নাঈম এর গ্রুপ নেতা মো. খলিলুর রহমান বলেন, আমার গ্রুপের এক জুনিয়রের সঙ্গে অন্য গ্রুপের এক কর্মীর ভুল বুঝাবুঝি থেকে এ ঘটনা ঘটেছে। কি নিয়ে ঝামেলা হইছে সেটা আমি জানি না। তবে বিষয়টি সমাধান করে দেওয়া হয়েছে।

মারধরকারী রিশাদ ও রানার গ্রুপ নেতা সুমন মিয়া বলেন, তুচ্ছ একটা ঘটনা ঘটেছিল, যা আমরা গ্রুপ লিডাররা বসে সমাধান করে দিয়েছি। তবে রিশাদ ও রানাসহ যারা অপরাজনীতি এবং শৃঙ্খলা ভঙ্গ করবে তাদের বিরুদ্ধে গ্রুপ থেকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান এই ছাত্র নেতা।

সার্বিক বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ভারপ্রাপ্ত প্রভোস্ট মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান খান বলেন, সামান্য বিষয়কে কেন্দ্র করে সিনিয়র জুনিয়রের মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। পরে দুই গ্রুপের নেতাদের সঙ্গে বসে আমরা বিষয়টি সমাধান করে দিয়েছি।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে রিশাদ ও রানা উভয়ই বিশ্ববিদ্যালয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও বাংলা বিভাগ কমিটির যুগ্ম সম্পাদক রাজীব সরকারকে ধারালো অস্ত্র ও জিআই পাইপ দিয়ে হামলার দায়ে আর্থিক দণ্ড ও বহিষ্কার হয়েছিলেন। এ সময় রিশাদ ঠাকুরকে ৮ হাজার, রানাকে ৬ হাজার টাকা জরিমানাসহ উভয়কে এক সেমিস্টারের জন্য বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে সে সময় শাখা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

তাছাড়া বিগত এক বছরে শাখা ছাত্রলীগের গ্রুপগুলোর মধ্যে তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব শৃঙ্খলা ভঙ্গের ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানার পরও দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। বরং এসব ঘটনা প্রশাসনের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের প্রত্যক্ষ মদদে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দিয়েই সমাধান করতে দেখা গেছে।

তবে এসব ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে তেমন কোন শাস্তিমূলক পদক্ষেপ না নেওয়ায় প্রতিনিয়ত এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে বলে মনে করছেন ছাত্রলীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা।