ফিরে দেখা: বিএনপির সীমাহীন লুটপাটে কৃষিখাত ছিল বিপর্যস্ত
বিএনপির দুই শাসনামলেই কৃষিখাত ছিলো বিপর্যস্ত। বাংলাদেশের ইতিহাসে সারের দাবিতে কৃষক রাস্তায় নামার পর সরকার গুলি করে হত্যা করেছে এমন ঘটনা বিএনপি শাসনামলে ঘটেছে। সারের সিন্ডিকেট নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ করলে সেই সাংবাদিককে মাইকিং করে প্রকাশ্যে হত্যা হুমকির ঘটনাও ঘটেছে বিএনপি আমলে।
১৯৯৫ সালের মার্চ মাস। বোরো আবাদের ভরা মৌসুম। ডিজেল সংকটে সেচ দিতে পারছেন না কৃষক। কীটনাশকের দামও চড়া। সারের অভাবে ফিকে হয়ে যায় বোরোর চারা। ফলে ১৯৯৫ সালের ১৫ মার্চ সার, জ্বালানি তেল, কীটনাশক এবং কৃষি পণ্যের সংকট ও মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে আন্দোলনে নামে কৃষক। আন্দোলনরত কৃষকদের উপর গুলি চালায় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পুলিশ। সারের জন্য আন্দোলনে সে বছর এক মাসে সারাদেশে প্রাণ হারায় ১২ জন। গুলিতে ১৫ মার্চ জামালপুর সদরের রশিদপুর গ্রামের আব্দুল খালেক এবং ২৯ মার্চ মেলান্দহ বাজারে কবির হোসেন নিহত হন। পরিস্থিতি ধামাচাপা দিতে লাশ গুম করারও চেষ্টা করা হয়।
বিএনপি জামাত জোট সরকারের সময়ে ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত পুনরায় দেশের কৃষিতে ধ্বস নেমে আসে। ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যেখানে খাদ্য উদ্বৃত্ত রেখে গেছেন, সেখানে খাদ্য ঘাটতি দেখা দেয় বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সময়। ফলে আমদানি নির্ভরতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। প্রয়োজনীয় সরকারি কর্মসূচি ও সীমাহীন দুর্নীতির জন্য কৃষকরা বিপদ্গ্রস্থ হয়ে পড়েন। বিদ্যুৎক্ষেত্রে বিএনপি-জামাতের সীমাহীন দুর্নীতির জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পায়। ফলে সেচ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। সরকারি ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানা হতে লাখ লাখ বস্তা সার লুট করে তা দ্বিগুন দামে খোলা বাজারে বিক্রি করত বিএনপি-জামাতের নেতারা। ফলে সারের তীব্র সংকট তৈরি হয়। তাছাড়া কৃষকদের জন্য ছিল না পর্যাপ্ত ঋণের ব্যবস্থা, ছিল না প্রয়োজনীয় প্রণোদনাও। যাওবা ছিল; নানামুখী দুর্নীতির কারণে তার ছিঁটেফোঁটাও পেতেন না কৃষকরা।
সারাদেশে বিদ্যুৎ ও সারের অভাবে কৃষকের হাহাকার তাদের আন্দোলনে নামতে বাধ্য করেছিল। কিন্তু অসহায় আন্দোলনরত কৃষক-শ্রমিকের ওপর উল্টো পুলিশি নির্যাতন চালিয়ে আহত করা হয়। কোনো কোনো জায়গায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন অনেক কৃষক। ২০০৬ সালের ৫ মার্চ খুলনার রূপসায় সার ও বিদ্যুতের দাবিতে আন্দোলনরত জনতা। জোট সন্ত্রাসীদের হামলায় কমপক্ষে ২০ জন আহত। ২০০৬ সালে বিদ্যুৎ ও সার সংকটের প্রতিবাদে যশোর-মাগুরা ও যশোর-খুলনা সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ সৃষ্টি করেন বোরো চাষিরা। নওগাঁয় বিদ্যুতের জন্য ৫ হাজারেরও বেশি কৃষক ঘেরাও করেন বিদ্যুৎ অফিস। ২০০৪ সালের ২৩ মার্চ যশোরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অবিরাম লোডশেডিংয়ের কারণে কৃষক এবং পোল্ট্রি খামারিদের মধ্যে নাভিশ্বাস ওঠে। পোল্ট্রি ব্যবসা প্রায় লাটে ওঠে; গরমে খামারের বাচ্চা-বাচ্চা মুরগিগুলো মারা যেতে থাকে। লোডশেডিং ও লো-ভোল্টেজে তৃণমূলের শতশত সেচপাম্প বিকল হয়ে যায়।
২০০৬ সালে বিদ্যুতের দাবিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের কানসাটে আন্দোলনরত জনতার ওপর খালেদা-তারেকের লেলিয়ে দেওয়া পেটোয়া বাহিনীর অকস্মাৎ গুলিতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন সাতজন সাধারণ মানুষ। জোট সরকারের শেষদিকে বিদ্যুৎ না পেয়ে কানসাট এলাকার পল্লি বিদ্যুতের গ্রাহকরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল। পাঁচ মাসব্যাপী আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারান ১৭ জন। আহত হন অন্তত ৬০০ মানুষ। এ ঘটনায় সারাদেশ ফুঁসে ওঠে। নিশ্চিত হয়ে যায় বিএনপি-জামাত সরকারের পতন।
১৯৯১ থেকে ১৯৯৫ সাল, কৃষিখাতে বিপর্যস্ত বাংলাদেশ। সার, জ্বালানি তেল ও কৃষি পণ্যের সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হলে আন্দোলনে নামে কৃষকরা। ১৯৯৫ সালের মার্চ মাসব্যাপী আন্দোলনে ১২ জন কৃষককে হত্যা করে বিএনপি সরকার। কৃষক জনতাকে হত্যা করেও আন্দোলন থামাতে পারেনি বেগম জিয়া।
অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ১৯৯৬ সালে যখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার গঠিত হয় তখন দেশে খাদ্য ঘাটতি ছিল ৪০ লাখ মেট্রিক টন। সেখান থেকে ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে দেশে ৪০ লাখ টন খাদ্য উদ্ধৃত রেখে যায় আওয়ামী লীগ সরকার। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা এবং কৃষিতে বিশেষ অবদানের জন্য জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ১৯৯৯ সালে শেখ হাসিনাকে সেরেস উপাধিতে ভূষিত করে।
২০০১ সালের নির্বাচনে পুনরায় খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসলে কৃষকরা আবারো বিপাকে পড়েন। যেখানে ২০০১ সালে শেখ হাসিনার সরকার ৪০ লাখ টন খাদ্য উদ্ধৃত রেখে গিয়েছিলো সেখান ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার সময় দেখা যায় খাদ্য ঘাটতি ২৬ লাখ টন। বিএনপির সীমাহীন দুর্নীতি দেশকে খাদের কিনারায় নিয়ে যায়। সরকার গঠন করে দ্রুতই কৃষিতে মনযোগ দেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। প্রথম ক্যাবিনেট সভাতেই সারের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নেন। ফলে সুষম সার ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি নিশ্চিত হয়। বঙ্গবন্ধুকন্যা হয়ে উঠেন কৃষিবান্ধব প্রধানমন্ত্রী।