ফের বাঁধ ভাঙ্গার আতঙ্কে হাওরবাসী
তাহিরপুরের হাওরে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না করায় অনেক বাঁধে ধস ও ফাটল দেখ দিয়েছে। রাত জেগে পাহারা দিয়েও পাহাড়ি ঢল নামা অব্যাহত থাকায় এখনও হাওরের ফসল ঝুঁকির মুখে রয়েছে। এদিকে আবারও পাহাড়ী ঢল আসার সম্ভবনায় উৎবেগ আর উৎকণ্ঠায় হাওরের কৃষক।
শেষ রক্ষা হয়নি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় নজরখালী বাঁধ ভেঙ্গে ডুবে গেছে টাংগুয়ার হাওরের ও এলিয়াকোনা হাওরের প্রায় ৭হাজার হেক্টর বোরো ধানের। বাঁধ দূর্ভল থাকায় বাঁধ ভেঙ্গে হাওর ডুবিতে ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে হাহাকার বিরাজ করছে।
এদিকে,বাঁধ ভেঙ্গে কৃষকের ক্ষতি হলেও পিআইসির নামে প্রভাবশালীরা প্রকল্প নিয়ে সরকারি টাকা লুটপাট করে লাভবান হয়েছে, এমন অভিযোগ এখন হাওরাঞ্চলের সর্বত্র। অন্যদিকে, তাহিরপুরের হাওরে ফসলহানি ও বাঁধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে হাওর বাঁচাও আন্দোলন নেতারাসহ সর্বস্থরের মানুষ।
পাউবো উপসহকারী প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান সেলিম জানান, চলতি বছরে তাহিরপুর উপজেলায় ৬৮টি পিআইসি ঘটন করা হয়েছে। এতে ৫৩কিলোমিটার ফসল রক্ষা ডুবন্ত বেড়ী বাঁধ ও ১০টি খাল(ক্লোজার)বন্ধের কাজ করা হয়। এসব প্রকল্পে প্রাক্কলন ধরা হয়েছে ১২কোটি ৮৩লাখ টাকা।
উপজেলা কৃষি অফিসার হাসান উদ দোলা জানান, এবার ছোট বড় ২৩টি হাওরে বোরো জমি চাষ করেছেন কৃষকরা ১৭,৪৯৫হাজার হেক্টর। এ থেকে চাল উৎপাদন হবে প্রায় ২৫০কোটি টাকা।
টাংগুয়ার হাওরের মন্দিয়াতা গ্রামের কৃষক ও ইউপি সদস্য সাজিনুর মিয়া বলেন, টাংগুয়া হাওর সংলগ্ন গনিয়াকুড়ি, এরালিয়াকোনা, নান্দিয়া, লামারগুল, টানেরগুল, রাঙ্গামাটিয়া, ফলিয়ার বিল, সন্যাসিসহ ছোট ছোট ৮টি হাওর রয়েছে। কিন্তু এসব হাওরের ফসল রক্ষার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো প্রকল্প নেই। এছাড়াও পাউবোর অন্যান্য বাঁধ গুলো ঝুকিঁপূর্ন থাকায় বাঁধ ভাঙ্গার আশংকায় উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় সময় পার করছেন কৃষকরা।
হাওরাঞ্চলে কৃষক ও কৃষির সাথে সম্পর্কিতরা জানায়,ঠিকাদারের পর পিআইসিও কার্যত ব্যর্থ। অনেক জায়গায় অপরিকল্পিত ও অপ্রয়োজনীয় বাঁধ নির্মাণের ফলে উল্টো হাওরের প্রকৃতি ও পরিবেশের ক্ষতি হয়েছে। আর এসব পিআইসি গঠনেও কৃষকদের সামনে ধার করিয়ে বেশির ভাগেই রয়েছে রাজনৈতিক দলের নেতারা নিজদের ফায়দা হাসিল করেছে। পাউবোর দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলী-কর্মকর্তারা জড়িত। তাদের বদলি বা বরখাস্ত যথেষ্ট নয় তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের ও পাশা পাশি পিআইসিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করলে ভবিষ্যতে কেউ বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতি-অনিয়ম করার সাহস পাবে না বলে দাবী করেন।
হাওর বাঁচাও আন্দোলনের তাহিরপুর উপজেলা শাখার নেতা সাইদুল কিবরিয়া বলেন, হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারে অর্থ বরাদ্দ বহুগুণ বেড়েছে। বেড়েছে বাঁধের দৈর্ঘ্য ও উচ্চতাও। কিন্তু দুর্বল বাঁধ ও ক্লোজারে(খালে)যথাযথ নিয়মে কাজ না হওয়ার কারণেই হাওরে উৎপাদিত একমাত্র বোরো ধান এখন ঝুঁকিতে পড়েছে। এই ক্ষতির দায় পাউবোকেই নিতে হবে বলে।
তাহিরপুর উপজেলার বৃহত্তর শনির হাওরের পাড়ের কৃষক হাবিবুর রহমান খেলু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, সরকার কোটি কোটি টাকার ব্যয় করে বাঁধের কি প্রয়োজন আছে, যদি সঠিক ভাবে বাঁধ নির্মান না হওয়ার কারনে বাঁধ ভাঙ্গার আতংকে রাত পার করতে হয় আমাদের। হাওরের ব্যাপক ফসলহানির পুনরাবৃত্তি যে কোনো উপায়ে ঠেকাতে হবে। সেজন্য বাঁধ নির্মাণ-মেরামত স্থায়ীভাবে করতে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। না হলে বিগত চার বছর পাহাড়ি ঢল হয়নি। পিআইসি ও পাউবোর মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা ভেবেছিলেন এ বছরও হবে না। এখন আমরা আছি আতংকের মাঝে।
তাহিরপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জুনাব আলী জানান, বাঁধ ঠিকিয়ে ফসল বাচাঁতে রাত-দিন লড়াই করছেন হাওরের কৃষকরা। বাঁধ রক্ষায় সেচ্ছা শ্রমে কাজ করার পাশাপাশি পাহাড়াও দিচ্ছে তারা। আমরা সবাই চেষ্টা করছি বাঁধ গুলো টিকিয়ে রাখতে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রায়হান কবির জানান, বাঁধ নির্মানে অনিয়মকারীদের কোন ছাড় দেয়া হবে না। আমি শুরু থেকেই বাঁধ নির্মানের সকল পিআইসিতে কঠোর নজরদারীতে রেখেছি। এখনও বাধঁ ঠিকিয়ে রাখতে রাতদিন সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল জানান, প্রতিটি বাধঁ রক্ষায় প্রশাসন সহ সর্বস্থরের মানুষ কাজ করছে। আমরাও বাঁেধর এসে সবাইকে নিজেদের ফসল রক্ষায় এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছি এবং আমি নিজেও বাধে আছি সব সময়। তবে বাঁধ নির্মানে অনিয়ম ও গাফিলতি যারা করেছে তাদের ছাড় দেয়া হবে না।